রাজবংশী ভাষার নামটা নিয়া আর কুনও কাথা থাকিবারেয় পারে না —ড. গিরিজাশংকর রায়

রাজবংশী ভাষার নামটা নিয়া আর কুনও কাথা থাকিবারেয় পারে না

ড. গিরিজাশংকর রায়

হামার ভাষার নাম নিয়া আর কাহরও তেমন আপত্তি শুনা যায় না। খালি রাজবংশী-ভাষী ঘরেরেয় জনাকয় পণ্ডিত আর বিদ্বান মানষি আপত্তি ওঠেবার ধরিছে। উমার যুক্তিটা হইলে যে, যেহেতুক এই দেশটার নাম এককালে আছিল কামতাপুর, কাজে ভাষাটার নামও হওয়া উচিত কামতাপুরী। কিন্তু হিটা কোনও তেমন সকদ্দম যুক্তিয়ে না হয়। ভাষার নামের বেলা যেই নামটাক বেশি পুরানা বুলিয়া মনে হবে সগারে উচিত ঐ নামটাকে বাছিয়া নেওয়া আর মনে-প্রাণে মানিয়া নেওয়া। আজি-কালিকার দিনত সগায় তাে যুক্তি মানিয়ায় চলে। তাহইলে হামার চলিতে কী এমন অসুবিধা হবার পারে? উমুরা যুক্তি দেখায় যে, হামার এত্তি তাে খালি রাজবংশীঘরেয় বাস করে না, রাজবংশী বাদেও আরও বহু জাতি, বিশেষ করিয়া মুসলমানেরঘর থাকে। কাজে খালি একটা জাতির নামে বা কেমন করিয়া একটা নাম থােওয়া যাবে? আর বােলে কোনও জাতির নামে ভাষার নাম হবার পারে না। হ্যা, এই কাথা ঠিক যে, একসমাই এই দেশখানের নাম আছিল কামতাপুর, তে, সেইটা কত বচ্ছর আগােত? ইতিহাস ঘুংটিলে দেখা যায় ১৩ শ’ বচ্ছর আগােত এলকার অসমের গােয়ালপাড়া এলেকাত ব্রহ্মপুত্র নদীর পশ্চিম পারত কামতাপুর নামের একটা রাইজ্য আছিল। রাইজ্য যেইহেতুক আছিল তার প্রজা-পালিও আছিল আর উমার মুখের একটা বুলিও আছিল। রাইজ্যটার নাম কামতাপুর, কাজে ভাষাটার নাম কামতাপুর হইতে-কোনয় বাধা নাই। ভাষাটার কামতাপুরী নাম দিবার তানে যে পণ্ডিতগিলা বা বুদ্ধিজীবীরঘর এই যুক্তি দেখান এই পর্যন্ত সেইটা ঠিকেয় আছে। কিন্তুক যায় যায় এত্তিকার ভাষাটার নাম থুইচে রাজবংশী উমার যুক্তিগিলাও তাে শুনিবার নাগে।

রাজবংশী নামের পাখে যে বিদ্বান আর বুদ্ধিজীবীরঘর যুক্তি দেখায় সেইগিলা হইল— কামতাপুর নামটার ঢেল আগ হাতে রাজবংশী নামটা পাওয়া যায়। তন্ত্রশাস্ত্র তাে বহু পুরানা সাহিত্য, এই দেশের বেদ-পুরাণের নাখান পুরানা ভ্রামরীতন্ত্র নামে যে পুরানা তন্ত্রখান আছে তাতে রাজবংশী নামটা পথম পাওয়া যায়। ঐ তন্ত্রখানত একটা শ্লোক আছে। তত লেখা আছে:

নন্দীসূতভয়াদ্ভীমে পৌণ্ড্রদেশাদ্ সমাগতা। 
বর্দ্ধনস্য পঞ্চপুত্রাঃ স্বগনৈর্বান্ধবৈ সহ।। 
রত্নপীঠঃ বিবাসন্তে কালাৎ বিপ্রাদরসঙ্গমাৎ। ক্ষাত্রধর্ম্মাদপক্রান্তা রাজবংশী খ্যাতা ভূবি।।

কুচবেহার জেলার হামার আগিলা পিড়ির দুই নামির বিদ্বান আর বুদ্ধিজীবী উপেন্দ্রনাথ বর্মণ উমার ক্ষত্রিয় জাতির ইতিহাস আর পতিরাম সিংহ কামতা রাজ্যে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়’ বইয়ত এই সংস্কৃত শ্লোকের প্রায় এখেয় নাখান মানে করিচে। নন্দীর বেটার ভয়ে বর্ধন রাজার পাচ বেটা গিয়াতি আর বন্ধু-বান্ধব নিয়া পৌণ্ড্র দেশ হাতে আসিয়া রত্নপীঠত আশ্রয় নেয় আর ব্রাহ্মণ জাতির অভাবে ক্ষত্রিয় ধর্ম ছাড়িয়া রাজবংশী নামে নিজের পরিচয় দিবার থাকে। কিন্তু এই রত্নপীঠ যে আসলে জল্পেশধাম সেই কাথার প্রমাণ পাওয়া যায়। কালিকাপুরাণত। তাতে যে শ্লোক আছে সেইটা এই মতন—

জামদ্যগ্ন্য ভয়াদ্ভীতাঃ ক্ষত্রিয়াঃ পূর্ব্বমেব যে।
শ্লেচ্ছচ্ছদ্মুপাদায় জল্পীশং শরণং গতঃ।।

ফারাক একটায়, ভ্রামরীতন্ত্রত নেখা আছে নন্দীসূত আর কালিকাপুরাণত আছে জামদগ্নি। যতদূর মনে হয় ভ্রামরীতন্ত্র আর কালিকাপুরাণ ১০ ম শতাব্দীত নেখা। যদি ধরিয়ায় নেই যে ঐ বইগিলা ১০ ম শতাব্দীর, তাহইলে তাে সেইটা ১৩ শতকের কামতাপুর সৃষ্টি হবার ঢেল। আগতেয় নেখা সেইটা নিয়া কোনও সন্দেহ হবারে পারে না। আর যদি সেইটায় সইত্য হয়। তা হইলে কবারে নাগে যে, রাজবংশী নামটা বহু বহু আগে হাতে চলিয়া আসিছে। এলা রাজবংশী নামে যদি কোনও জাতি পাওয়া যায় তাহইলে উমুরা যে সগায় বােমা-নাগা আছিল তা তাে হবার পারে না। উমার মুখের একটা বুলি আছিল। আর সেই বুলিটার নাম আছিল। রাজবংশী। কাজে হামেরা মনে করি যে কামতাপুরীর চায়া রাজবংশী নামটায় বেশি পুরানা। আর সেইবাদে রাজবংশী নামটায় থােওয়া উচিত। কাথা হইল কোনও জাতির নামে ভাষার নাম হয় কি না হয়? রামায়ণ আর মহাভারত পিথিমীর সব চায়া পুরানা মহাকাব্য কওয়া হয়। কোনও কোনও ঐতিহাসিক কয় যে, মহাভারত বােলে যীশুখ্রীষ্টের জন্মের ৩০০০ বচ্ছর আগত নেখা হয়। তবে বিলাতি ঐতিহাসিকেরঘর অত পুরানা বুলিয়া মানে না। উমুরা মানুক বা না মানুক ঐ মহাভারতের আদিপর্বত অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ দেশগিলার নাম কেমন করিয়া হইলেক সেইটা জানা যায়। তাতে নেখা আছে:

অঙ্গে বঙ্গঃ কলিঙ্গশ্চ পুন্ড্রঃ সুহ্মশ্চ তে সূতাঃ।
তেষাং দেশাঃ সমাখ্যাতঃ স্বনামপ্রথিতা ভূবিঃ।।

বলি রাজার পাঁচ বেটার নামেয় হৈল অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ-পুন্ড্র আর সুহ্ম দেশের নাম। বঙ্গ রাজার নামে বঙ্গদেশ আর বঙ্গজাতির নামে বঙ্গভাষা। জাতির নামে দেশের নাম আর ভাষার নাম হবার পারিলে রাজবংশী নাম হইলে কীসের আপত্তি? উত্তর-পূর্ব ভারতের মুসলমানের ঘরও রাজবংশী-ভাষী। কাজে আপত্তি করিবার কোনও কারণ নাই। কবির কাথায় আছে নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান। হামার দেশটাক কওয়া হয় উপমহাদেশ, ভারতীয় উপমহাদেশ। কত জাতি, কত ভাষা, কত ছােট ছােট ভাষা! তে, এত ভাষা নিয়া প্রথম গবেষণা, ক্ষেত্রসমীক্ষা কিন্তুক হামার দেশের পণ্ডিতেরঘর করিবার পারে নাই। করিলেক ইউরােপের এক নামিক্কর পণ্ডিত-গবেষক, নাম স্যার ড, জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন। গােটায় দেশের ভাষা নিয়া উমুরা যে ক্ষেত্রসমীক্ষা করিয়া হাতে-কলমে তথ্য জোগাড় করিলেক ঐলা নিয়া একখান বিশাল বই নেখিয়া বাইর করিলেক উমার বিখ্যাত বই Lin guistic Survey of India, যার মানে ভারতের ভাষা সমীক্ষা। দেশের পুব পাখে সমীক্ষা করিবার সমায় গ্রিয়ার্সন যেলা ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয় সেলা উমুরা এক নয়া ভাষার খোঁজ পায়। ঐটারেয় নাম উমুরা দেয় রাজবংশী। দেখা যাউক ড. গ্রিয়ার্সন কী নেখিছে— When we cross the river (The Brahmaputra) coming from Dacca we meet a well marked form of speech in Rangpur and the districts to its North and East. It is called Rajbangsi and while undoubtedly belonging to the eastern branch of has still points of differenceich lead us to class it as separate dialect. ঐকিনায় হয়, বাঙলা ভাষার নগত রাজবংশী ভাষার যে তেমন খিপ একটা সমন্ধ নাই তেমন one Taat 105— North Bengal and Assam did not get their language from Bengal proper but directly from the West Magadhi Apabhramsa, infact, may be considered as spreading out eastwards and southwards in three direc tions... এত বড় দেশের এতগিলা ভাষা নিয়া পথম গবেষণা করে বাদে দেশের পণ্ডিতেরঘর ড. গ্রিয়ার্সনক ভারতীয় ভাষার জনক, The father of Indian Languages বুলি স্বীকার করে আর উমাক প্রাপ্য সম্মান জানায়। তাহইলে দেখা যায় যে, যাক হামেরা ভারতের ভাষার জনক বুলিয়া মানি উমুরায় দেশের উত্তর-পুব ভাগের নাম দিচে রাজবংশী। ১৯০৩ সালে এই বিশাল বইখানের পঙ্খম খণ্ড ছাপা হয়। ঠিক এই বচ্ছরত সেলকার কুচবেহার রাইজ্যর সেটলমেন্ট আহেলকার (Assistant Settlement Officer) হরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী The Coochbehar State and its Land Revenue Settlement নামে একখান বই নেখে। তাতে উমুরা রাজবংশী নামটায় থােয় আর রাজবংশী কাথার একটা হালিচাও দেয়। ড, গ্রিয়ার্সনের বাঙলা ভাষার শিক্ষাগুরু রঙপুর ধর্মসভার পণ্ডিত শিরােমণি যাদবের তর্করত্ন উমার প্রিয় ছাত্রর দেওয়া নামটা মানিয়া নেয়। রঙপুর সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকাত। ভাওয়াইয়া গানের আলােচনা করিবার যায়া উমুরা পষ্ট করিয়ায় নেখে যে এই গানগিলা। রাজবংশী ভাষাতেয় নেখা। আরও ঢেল ঢেল জাগাত উমুরা ভাষার অই নামেয় নেখে। ১৯১০ সালত অসমের গৌরীপুর শহরত উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ৩ বছরিয়া অধিবেশনত হামার এইঠেকার সেলকার দুই বড় বিদ্বান আর বুদ্ধিজীবী উপস্থিত আছিল। একঝনের নাম খান চৌধুরী আমানউল্লা আহমদ আর একঝন পঞ্চানন সরকার। পঞ্চানন কুচবেহারের ছাওয়া, কিন্তুক কুচবেহারের রাজার রােষ রাইজ্য হাতে উমাক নিকিলিয়া দেয়। এই কারণে সেই সমাই রঙপুর আদালতত উকিলাতি করিবার ধরে, সমাজের উন্নতির তানে কাজ করে। আর রঙপুর সাহিত্য পরিষদের মুখপত্রের সম্পাদক হয়া সেলকার কুচবেহার রাইজ্যের ভাষা সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়া নানান ধরনের নেখানেখি করে। কামতাপুরী ভাষার দাবীদারের ঘর তাে মুসলমানের ঘরের কাথা কয়; কিন্তুক উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ঐ অধিবেশনত ‘কোচ ও রাজবংশী ভাষাতত্ত্ব ' নামে একখান দারুণ ভালাে প্রবন্ধ যায় পাঠ করে তার নাম হইল খান চৌধুরী আমানউল্লা আহমদ। উমুরা ঐ প্রবন্ধখানত এই ভাষার নামও রাজবংশীয়ে নেখে তাহইলে হিমন কাথা উঠে কেনে? আমানউল্লা সাহেবের নেখা ‘কোচবিহারের ইতিহাস বইখান এই উপমহাদেশের কোন্ নেখা-পড়া জানা মানযি পড়ে নাই? এই খবর জানিবার দরকার। পঞ্চানন সেলাও বর্মা পদবি নেয় নাই, রাজবংশী ঘরক ক্ষত্রিয় প্রমাণ করিয়া উমাক পৈতা দিবার পারে নাই। কাজে সেলাও পঞ্চানন ‘সরকার’ পদবি উমার নামের নগত নেখে।

যাই হৌক, উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনত পঞ্চানন সরকার যে প্রবন্ধ পাঠ করে তার নাম কামতাবিহারী সাহিত্য। ঐখান প্রবন্ধত পঞ্চানন এই ভাষাটার চেল নামেয় ব্যবহার করে। দেশি ভাষা, এতদ্দেশীয় ভাষা, কুচবিহারী ভাষা। কিন্তুক প্রবন্ধখানের শেষত যেলা ময়নামতী গােপীচন্দ্রের গানের কয়খান পদ আলােচনা করিবার ধরে সেলা নেখে যে কাথাগিলা ‘আধুনিক রাজবংশী ভাষাত’ নেখা। কাজে পঞ্চাননও রাজবংশী নামটায় মানিয়া নিচে। তবে পঞ্চাননের কামতাবিহারী সাহিত্য কাথাগিলা নিয়া কাহাে কাহহা ভুল ব্যাখ্যা দিয়া ভাষাটার নাম কামতাবিহারী থুবার মন করিছিলাে।পঞ্চানন কামতাবিহার মানে কুচবেহার রাইজ্যের সাহিত্য নিয়া আলােচনা করিবার বাদেয় এই প্রবন্ধ নেখে, ভাষা নিয়া না হয়। এই ব্যাপারটা অনেকে বুঝিবার পারে না। বিহারী সাহিত্য নিয়া প্রবন্ধ নেখিলেয় বিহারী ভাষা হবে তার কুনােয় মানে নাই। কেনেনা বিহারী নামে কুনাে ভাষায় নাই, আছে হিন্দি ভাষা। কাজে কাজে কামতাবিহারী ভাষা না হয়, কুচবেহার রাইজ্যের ভাষা কাথাটায় উমুরা কবার চাইছিলাে। ১৯৪১ সালত অসমিয়া ভাষাবিদ ড. বাণীকান্ত কাকতি অসমিয়া ভাষার প্রথম ইতিহাস বই নেখে। বইখানের নাম Assarnese, Its Formation and Development. তাতে ড. কাকতি পষ্ট করিয়ায় নেখে যে, এই ভাষাটার নাম রাজবংশী— The spoken dialects of the Goalpara district seem to have been greatly contaminated with admixtures of the Rajbanshi dialect -- the dialect that was evolved un der the domination of koach kings of Koach-Bihar, whose descendants ruled over Goalpara and continguous portions of Kamrup. তবে এইটায় শেষ কথা না হয়। বাঙলার ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় উমার নামকরা বই The Origin and Development of the Bengali Language, (যার মানে বাঙলা ভাষার উপজন আর তার বিকাশ) বইখানত উমুরা রাজবংশী নামটা মানিয়া নিচে। এই বইখান বাইর হয় ১৯৬২ সালত।। পঞ্চানন বর্মার পরের সিড়ির উত্তরবাঙলাত বিদ্বান আর বুদ্ধিজীবীরঘরের ভিতিরা সগারে চায়া নামির হইল উপেন্দ্রনাথ বর্মণ। ইমরা পঞ্চানন বর্মার ডাইন হাত আছিল। ১৯৪০ সাল নাগাত ‘রাজবংশী ক্ষত্রিয় জাতির ইতিহাস’ নামে একখান বই নেখে। ঐখান বইয়ত রাজবংশী ভাষা নামে একটা অধ্যায়ও জুড়িয়া দেয়। পাছত ঐ নামে একখান আলেদা বইও নেখে। ইমিরা পশ্চিমবাঙলা সরকারের মন্ত্রী, লােকসভার সাংসদ, পশ্চিমবাঙলা বিধান পরিষদের ডেপুটি স্পিকার আছিল। ঢেল ভাল ভাল বইও নেখিছিলাে। উপেন্দ্রনাথ বর্মণের পরের সিড়ির গিরিজাশংকর রায় ১৯৬১ সালে কলেজে পড়িবার সমাই রাজবংশী ভাষাত ‘সাতভাইয়া’ নামে একখান কবিতা সংকলন নিকিলায়। সংকলনের সম্পাদকীয়ত নেখা হয়— 'অনেকে মনে করেন রাজবংশী ভাষা বাঙলা ভাষারই দুহিতা। মায়ের আঁচলে শিশু একেবারে ঢাকা পড়ে গেছে। পণ্ডিতেরা রায় দেন একে প্রাকৃত বাঙলা হিসাবে। আমি বলি না, এরা সহােদরা এবং জননী স্বয়ং সংস্কৃত। সাতভাইয়া বাইর হবার পরের বচ্ছরত ছাপা হয় রাজবংশী ভাষার পথম কাব্য ‘ময়নামতী’, ১৯৬২ সালে। ১৯৬৯ সালত কালীন্দ্রনাথ বর্মণের নয়া ডেগর’ নাম দিয়া নিজের নেখা কবিতার বই বাইর করে। এই সালত নিজের নেখা কবিতা সংকলন নিকিলায় আরও একঝন কবি, নাম অমরেন্দ্রনাথ বর্মা, বাড়ি ময়নাগুড়ি থানার ডাঙ্গাপাড়া গ্রাম। কবিতা সংকলনখানের নাম ‘অমর কণিকা। বিতা শতকের ৬-এর দশকত উত্তরখণ্ড দলের জন্ম হয়। শিলিগুড়ির কবি আর সমাজকর্মী কলীন্দ্রনাথ বর্মণ, জলপৈগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির রাজনৈতিক নেতা পঞ্চানন মল্লিক, রাঙ্গালিবাজেনা মােহন সিং হাইস্কুলের হেডমাস্টার হরিমােহন বর্মণ, এথেলবাড়ির বগল সরুগাঁও চা-বাগানের আদিবাসী নেতা সােমা উঁরাওর নাখান নেতালা এই দল গড়ায়। সেই সমাই পথম যুক্তফ্রন্টের শাসন। বাঙলা কংগ্রেসের নেতা অজয়কুমার মুখােপাধ্যায় সেল রাইজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পথম পথম সরকার ভাললায় চলে। পরে উত্তরবাঙলাত নাগে তিনকাচাল! চাইরােপাখে জোতদার-আধিয়ারে দন-ঝগড়া, খালি অশান্তি আর অরাজকতা, নাই রাজার রাইজ্য! নেখাপড়া-জানা জুয়ানের ঘরের নাই চাখিরি, ঘরত নাই খাবার। উত্তরখণ্ড দল হাতেয় উঠে কামতাপুর রাইজ আর কামতাপুরী ভাষার স্বীকৃতির দাবী। বুদ্ধিজীবীরঘরের কাহাে কাহাে কামতাপুরী ভাষার পইক্ষে সওয়াল করিবার ধরে। তারেয় একঝন কুচবেহারের পতিরাম সিংহ। ১৯৭২ সালত উমুরা নেখিলেক কামতারাজ্যে পৌন্ড্রক্ষত্রিয়’ নামে বইখান। ঐঠেটখুনায় উমরা নেখে যে, এইঠেকার ভাষাটার নাম হবে কামতাপুরী। পতিরাম একঝন সাবজজ আছিল। কিন্তু তার আগতেয় ১৯৭১ সালত কীন্দ্রনাথ বর্মণ রাজবংশী অভিধান বাইর করিয়া দেখেয়া দিলেক যে, এই ভাষার নাম রাজবংশী সঠিক। এই মহৎ কামখানের তানে এত্তিকার রাজবংশীভাষী মানযিলার অন্তরের অন্দরত কলীন্দ্রনাথ চিরটাকাল অমর হয়ায় থাকিবে। ইয়ার ভিতিরা ১৯৬৫ সালে উত্তরবাঙলার সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজতত্ত্ববিদ ড. চারুচন্দ্র সান্যাল কলিকাতার এশিয়াটিক সােসাইটি হাতে বাইর করিলেক উমার নামকরা বই The Rajbanshis of North Bengal, এই বইখানত উমুরা ভাষার নাম রাজবংশী থুইলেক। কুচবেহারের আর একঝন বিদ্বান আর বুদ্ধিজীবী মানষি আছিল, নাম হেমন্তকুমার রায়বর্মা। সেলকার কুচবেহার রাইজ্যের আহেলকার, মানে এলকার এস.ডি.ও। উত্তরবাঙলার ভাষার নামটা কি হবে সেই নিয়া ইমার ভিতিরা খিপে দোমােখােমে ভাব আছিল। ইমিরা কুচবেহারের একখান ইতিহাস বই নেখে। ভাষার নামে নেখে ‘কামতাপুর তথা কোচবিহার রাজ্য তথা উত্তরবঙ্গের ভাষা '। কিন্তুক গােপীচন্দ্রের গান বা মানিকচান্দের গান বা ময়নামতীর গান এর সংক্ষিপ্ত সংস্করণ নাম দিয়া যেলা একখান ছোট বই নেখে সেলা নাম দেয় ‘কামতাপুরী তথা উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক তথা রাজবংশী ভাষায় রচিত মৌলিক মহাকাব্য’। তবে ১৩৯৬ সনত, মানে ২০০০ সালে বালুরঘাটের অধ্যাপক অজিতেশ ভট্টাচার্যর সম্পাদনাত ‘বিশেষ কোচবিহার জেলা সংখ্যা’-ত কোচবিহারের প্রবাদ প্রবচন’ নামে প্রবন্ধ নেখিবার বেলা রাজবংশী নামটায় নেয়। নেখে উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক তথা রাজবংশী ভাষায় রচিত কাথালা। কাজে শেষমেশ হেমন্তকুমার রায়বর্মা রাজবংশী নামটা মানিয়ায় নেয়। ইয়ার আগত রাজবংশীভাষী হামারলার তাে কোন সাহিত্যপত্রিকা না আছিল। সেই অভাব দূর হৈল কয়ঝন জুয়ান মাস্টারের হাতে। উমুরা নিকিলাইলেক পোঁহাতী’ নামে একখান তিনমাসি সাহিত্যপত্রিকা। ময়নাগুড়ি শহরের এক হাইস্কুলের মাস্টার ভূপেন্দ্রনাথ রায় হৈল সম্পাদক, আমগুড়ি অঞ্চলের প্রাইমারি ইস্কুলের দুইঝন মাস্টার বাচ্চামােহন রায়। আর দীনেশ চন্দ্র রায় হৈল সহঃ সম্পাদক। উমার নগত হাত মিলাইলেক আমগুড়ির কয়ঝন জুয়ান চেঙ্গেরা। বেশ কয় বচ্ছর ধরিয়া পত্রিকাখান ভালে নাখান চলিবার ধরিলেক। উত্তরখণ্ড দলের দাবী আর পতিরাম সিনহার কামতারাজ্যে পৌন্ড্রক্ষত্রিয় বইত ঐ দাবীর সমর্থন দেখিয়া ভূপেন্দ্রনাথের মতি গেইল আউলিয়া। উমুরা পোঁহাতী হাতে বেগল হয়া আর একখান তিনমাসি পত্রিকা নিকিলিবার ধরে, নাম দেয় ‘দুন্দ’। এইবার পত্রিকাখানের ভাষার নাম থােয় কামতাপুরী। দু এক বারেয় ছাপা হৈল। ভূপেন্দ্রনাথের হাউস মিটিলেক। পোঁহাতী কিন্তুক বাইর হরে থাকে। এইবার সম্পাদক হৈল বাচ্চামােহন রায় আর সহঃ সম্পাদক দীনেশ চন্দ্র রায়। এইবারে উমুরা যে কাম করিলেক সেইটা চমকেয়া দিবার মতন। পোঁহাতীর বাদে গড়ালে একটা উপদেশক সমিতি। এই সমিতির সদস্য ঘরের নাম দেখিলে আজিকার গবেষক আর বড় বড় পণ্ডিতের ঘরের মাথায় ঘুরিয়া যাবে। উপদেশকের মইধ্যে আছিল ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. আশুতােষ ভট্টাচার্য, ড. হরিপদ চক্রবর্তী, ড. চারুচন্দ্র সান্যাল, নামির সাংবাদিক দক্ষিণারঞ্জন বসু, বিশ্বজ্ঞানসাধক সােসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ড. ভবেশচন্দ্র চৌধুরী, জলপৈগুড়ির গবেষক লেখক নির্মলচন্দ্র চৌধুরী। ঐ হালিচাত কেনে ভানি গিরিজাশংকর রায়ের নামটাও আছিল। তবে এলা আর পোঁহাতী নাই, তার বদলে বাইর হয় উজানী। এলা উজানীর সম্পাদক নরেশচন্দ্র রায়, নিরঞ্জন অধিকারী আর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা বিভাগের অধ্যাপক ড. দীপক কুমার রায়। উপদেশকের ঘরের যে নামগিলা পাওয়া যায় উমুরা হইল গিরিজাশংকর রায়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড, অঙ্কুশ ভট্ট আর ড, আনন্দগােপাল ঘােষ, অসমের ধুবড়ির প্রগতি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. রমেন্দ্রনাথ অধিকারী, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা বিভাগের প্রধান আর আঞ্চলিক ভাষা আর সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের ডিরেক্টর ড. নিখিলেশ রায়, দুর্গাপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার ড, ফণী পাল, অসমের চিলা রায় কলেজের অধ্যাপক ড. দ্বিজেন্দ্রনাথ ভকত আর ময়নাগুড়ির শিঙ্গিমারী হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক পূর্ণচন্দ্র রায় ১৯৭৭ সালত মাদারীহাটের বগল বীরপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষক তুষার বন্দ্যোপাধ্যায় উমার নিজের নেখা রাজবংশী কবিতার একখান সংকলন বাইর করে। সংকলনখানের নাম দেয় ‘অললই ঝললই মাদারের ফুল। জলপৈগুড়ি শহরের বগল পাহাড়পুরের কবি গােকুলকুমার রায় বাইর করে উমার নিজের কবিতা সংকলন ‘নােখােলিয়ার বাঁশি, ১৯৮০ সালে। তারপর ১৯৮৩ সালত আঠারােখাই অঞ্চলের চৈতন্যপুরের নগেন্দ্রনাথ রায়ও উমার নিজের নেখা রাজবংশী কবিতার একখান সংকলন নিকিলায়। নাম দেয় ‘হােকোলখােলি। নগেন্দ্রনাথ কয়খান অনুবাদের বইও নিকিলায়। যেমন ১৯৯৮ সালে নেখে শ্রীশ্রীগীতাআয়ী। পরে অনুবাদ করে গুরুগীতা, নাম দেয় রাজবংশী গুরুগীতা, ২০১০ সালে। ইয়ার আগতে শ্রীমৎস্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী নিয়া বই নেখিছে নিগম কাথা, অনুবাদ করিছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘চণ্ডালিকা। ' ইয়ার ভিতিরায় বাইর হইছে ‘শ্রী শ্রী চণ্ডীমাও’। ১৯৮৭ সালে আঠারােখাইয়ের কবি বীরেন রায় নেখে ‘পোহাতী’। কাব্যরসিকের ঘর কাব্যখনক উত্তরবাঙলার ফুল্লরা নাম দিচে। তা বাদে উমুরা নেখিছে কর্ণবধ কাব্য’ ১৯৯৫ সালে আর পরে ‘যুগের হাওয়া বদলি গেইচে’ নামে একখান কাব্য। বীরেন রায় প্রথমে রাঙ্গালিবাজনা মােহনসিং হাইস্কুলত চাখিরি করিছিল; পরে নকশালবাড়ির নন্দপ্রসাদ হাইস্কুলত যায়। ১৯৮৭ সালে মাথাভাঙ্গার নামির কবি সন্তোষ সিংহ নেখে ‘সােনার নাঙল উপার ফাল’। একটা কথা, সন্তোষ সিংহের সবচায়া ভাল হাত আধুনিক কবিতা নেখিবার। উমার আরও কয়খান আধুনিক কবিতার ভাল ভাল সংকলন আছে। উমার ‘কবিতা কুঙ্কুরার সুতা ' বাইর হয় ২০০৪ আর ‘দোতরার ডাং নিকিলায় ২০১০ সালত। ১৯৯৬ সালে তুফানগঞ্জের বিনােদবিহারী বর্মা আর যতীন বর্মা দোনােঝনে মিলিয়া ঢেল কবির লেখা একখান রাজবংশী কবিতা সংকলন’ বাইর করে। বিনােদবিহারী বর্মা আর যতীন বর্মা আলেদা করিয়া দুইখান কবিতার বই নেখে ১৯৯৬ সালে, নাম ‘দিন যায় রাতি যায়’ আর ‘একনা মানষি চায়। ১৯৯৬ সালত ঢেল বইয়ে বিরায়। আলিপুরদুয়ারের রামেশ্বর রায় কবিগুরুর দুইবিঘা জমির আদলে একখান ছােট নাটকের বই নেখে, নাম ‘পুরাণ ভিটা’। ১৯৯৮ সালে গুণের অধিকারীর নেখা নাটক বাইর হয়, নাম ' ময়নার চখুর জল। বিতা শতকের ৯-এর দশকত এই নাটক আলিপুরদুয়ার আর কুচবেহার জেলাত হৈ হৈ কাণ্ড নাগেয়া দেয়, দেখিয়া মানযি পাগেলা হয়া যায়।

তারপরে কলিকাতাত আকাশবাণীত চাখিরি করিবার সমাই তপন রায়প্রধান আর জলপৈগুড়ির গবেষক দিলীপ বর্মা দোনােঝনে এখেটে হয় ২০০৪ সালত নিকিলাইলেক ‘রাজবংশী কবিতা সংগ্রহ '। এলা তাে রাজবংশী ভাষাত ঢেল সাহিত্যপত্রিকা বাইর হবার ধরিছে, মাঝে মাঝে কবিতা সংকলন, প্রবন্ধ সংকলনও বাইর হয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান আর সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন লােকাল ল্যাঙ্গুয়েজেস এণ্ড কালচারস-এর ডিরেক্টর ড, নিখিলেশ রায় ২০০১ সালে নেখিছে কবিতার বই কালনাত্তির কবিতা '। উমুরা এক সময় রাজবংশী ভাষাত একখান মাসিক খবরের কাগজ বাইর করিছিলাে। নাম আছিল মাসকিয়া উত্তরবঙ্গ’ | উত্তরবঙ্গের ভাষা আর সংস্কৃতির খবর দিবার তানেয় ঐ কাগজের উপতন। ভালে কয় বচ্ছর চলার পর ঐখান বন্ধ হয়া যায়। মাসকিয়া উত্তরবঙ্গের গােটায় সম্পাদকীয় গিলা গােটো করিয়া উমুরা একখান বই ছাপায় ২০০৭ সালে। নাম দেয় সম্পাদকীয়’। বুদ্ধিজীবীরঘর বইখানের খিপে প্রশংসা করে। তাছাড়াও জার্মানীর কবি রােজে আউসল্যাণ্ডারের কবিতার রাজবংশী ভাষাত অনুবাদ করি উকাশের উককথা’ নামে বই বাইর করে। নর্থবেঙ্গল আকাদেমি অব কালচারের মুখপত্র ‘ডেগর’-এর ঢেল সংখ্যা উমার সম্পাদনায় বাইর হয়। এই ভাষাত নিজের নেখা প্রবন্ধর বই বাইর করিছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দীপককুমার রায়। যেমন এই সেদিন ২০১২ সালে উমার রাজবংশী সমাজ আরাে সংস্কৃতির কাথা’ বাইর হয়। উমুরা একখান কবিতার বইও বাইর করে, নাম হাবিলাস’। বিরায় ২০১০ সালত। রাজবংশী ভাষাত একখান উপন্যাস নেখিছে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বীরেন রায়। নাম ‘ভােকস’, ১৯৭৫ সালত। মেখলিগঞ্জ কলেজের অধ্যাপক ভগীরথ দাসও একখান উপন্যাস নেখিছে, নাম ‘সেন্দুকের ছােরানি’। জলপৈগুড়ি শহরের বাসিন্দা হরিপদ রায় উকিলাতি করিলেও গল্প নেখিতে আছিল বড় ওস্তাদ। উমার ভাষাও এখেকালে ঘরুয়া ভাষা। উত্তরবাঙলার শৈবপীঠ হিসাবে জল্পেশ মন্দির খিপে বিখ্যাত। এই জল্পেশ নিয়া উমার দুইখান বই আছে,, ‘জয়বাবা জল্পেশ’, ‘সংস্কৃতির মিলনৎ বাবা জল্পেশ’। রম্য সাহিত্যও নেখিছে। যেমন ‘হ্যারিকেন চিহ্নে ভােট দিন। স্মৃতিকথার বইও আছে, যেমন আগিলা দিনের কথা। হরিপদ রায়ের অনুবাদ পড়িলে বুঝা যায় সাহিত্য রচনায় উমার ভাল হাত আছিল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ বই হাতে কয়টা গল্প নিয়া একখান বই নেখে নাম ‘গল্ফর ঝােপা’, বিরায় ২০০২ সালত। কাহাে যদি মনে করে যে খালি উত্তরবাঙলাতেয় রাজবংশী ভাষা নামটা চালু তাহলে উমুরা ভুল করিবে। নেপালত রাজবংশী ভাষা উমার সরকারের স্বীকৃতি পাওয়া ভাষা। নেপালের সরকারী রেডিও আর টেলিভিশনত এই ভাষায় খবর পড়া হয়, নানা ধরনের প্রােগ্রাম হয়। এমন কি এই ভাষা দিয়া প্রাইমারি আর হাইস্কুল পয্যন্ত পড়াশুনা হয়। নেপালত রাজবংশী সাহিত্যসভাও আছে। ঢেল কবিতা সংকলন, ভাল ভাল বই, মাসিক পত্রিকা ঐঠেটা নিয়াম মানিয়ায় বাইর হয়। নেপালের রাজবংশী ভাষার প্রধান সাহিত্যিকের নাম হইলেক ভদ্রপুরের ফুলসিংহ রাজবংশী। ১৯৭৯ সালে উমার একখান সামাজিক উপন্যাস বাইর হয়, নাম “ মালা’। উমুরা ঢেল বইয়ে নেখে। যেমন ‘রাজবংশী-নেপালী অভিধান’, ‘সাধারণ। শব্দাবলী’। তা বাদেও কয়খান প্রবন্ধর বইও নেখে, নাম বিহু-বেটি বাচাও’, ‘রাজবংশী সংস্কৃতি (১৯৯৭) রাজবংশী ভাষা-সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ইতিহাস (২০০০)। শেষেরখান সংকলন। ফুলসিংহ রাজবংশী বাদেও নেপালত আরও কয়ঝন নামী কবি আর সাহিত্যিক আছে। মহেশলাল রাজবংশী নেখে হদয় পংখী’ নামে একখান কবিতা সংগ্রহ, ‘বেসাতী’ নামে গল্প সংগ্রহ বাইর করে গােপালপ্রসাদ রাজবংশী, রাজবংশী সমাজ’ নামে প্রবন্ধ সংকলন নেখে টকনুলাল রাজবংশী। ফুলসিংহ রাজবংশীক নিয়া দুই খণ্ড প্রবন্ধর বই নেখে শর্মিলা রাজবংশী।। নেপাল হাতে যে বইগিলা বাইর হইছে সেইগিলার বেশির ভাগেয় ছাপাইছে ঐঠেকার রাজবংশী ভাষা প্রচার সমিতি, যার মূল অফিস ভদ্রপুর, যেইটা আছে ঝাপা জেলাত। নেপালত বেশ কয়খান কবিতা সংকলন বাইর হইছে। একখানের নাম ' হামার কবিতা সংগ্রহ। সংকলনের প্রধান সম্পাদক রণবাহাদুর রাজবংশী, ঝাপা জেলার চকচকীর অফিস হাতে রাজবংশী ভাষা প্রচার সমিতি সংকলনখান ছাপাইচে ২০০০ সালত। তার মানে উমার রাজবংশী ভাষা প্রচার সমিতির মূল অফিস ভদ্রপুরত থাকিলেও বেইশ কয়টা শাখা অফিসও আছে। অসম রাইজ্যত রাজবংশী ভাষার চর্চা হয় ঐঠেকার রাজবংশী সাহিত্য সভা দিয়া। ঐঠেকারা ঢেল গবেষক, লেখক আর নামকরা পণ্ডিত রাজবংশী ভাষাত নেখানেখি করে। ঐঠে বচ্ছরত কম করিয়াও দুই-তিন বার রাজবংশী ভাষা নিয়া আলােচনা সভা, সেমিনার, Workshop মানে কর্মশালা তাে নাগিয়ায় থাকে। কলেজ, ইউনিভার্সিটির অনেক নামির অধ্যাপক আর গবেষক রাজবংশী ভাষা নিয়া কাম করি ধরিছে। অসমত রাজবংশী ভাষা চর্চাত সগারে পথম নাম পাওয়া যায় গৌরীপুরের নামী সাহিত্যিক আর বড় সমাজকর্মী শিবেন্দ্র নারায়ণ মণ্ডলের। বিতা শতকের ৮ দশকত উমুরা অসমিয়া আর রাজবংশী ভাষা মিলিয়া দ্বিভাষিয়া সাপ্তাহিক খবরের কাগজ বাইর করে, নাম ‘প্রান্তবাসী। অসম হাতে ঢেল কবিতা সংকলন বিরাইছে। তার মইধ্যে কয়খান হৈ গৌরীমােহন রায়ের বাঁশরী ' (১৯৯৬), ড. দ্বিজেন্দ্রনাথ ভকতের সম্পাদনা করা ‘জাগৃতি’ (১৯৯৬), কেওয়া ফুলের মধু (১৯৯৯) আর দিলীপ কুমার রায়ের ‘চেতনা’। ড. ভকত ‘রাজবংশী মহাভারত’ আর ‘রাজবংশী ভাষাপ্রসঙ্গ’ নেখিয়া অমর হয়া রবে। গৌরীপুরের আজগর আলী সেখ তিনখান নাটক নেখিছে— ‘কবারাে না পাই সবারাে না পাই (১৯৯১), ' সতাল মাও’ (১৯৯১), মাহুতের পীরিতি ' (১৯৯৫)। হালাকুড়া হাতে শ্যামলকুমার রায় নেখে কবিতার বই ‘ভােগ টেপাটেপা ধানের শিশ’। ধুবড়ির ক্ষীরােদচন্দ্র দাস একঝন উঠন্তি নেখাইয়া। গৌরীপুরের রাজকুমার প্রকৃতিশ বড়ুয়ার হাতীর উপূরা মায়া-মমতার আর হাতী ধরার ঢেল গল্প শুনা যায়। এই নিয়া ক্ষীরােদচন্দ্রের প্রথম বই ‘হাতীয়ে মাের সউগ’, নিকিলায় ২০০৩ সালত। কুচবেহার মহারাজ নরনারায়ণের ছােটভাই শুক্লধ্বজক নিয়া নেখে ‘বিশ্ব মহাবীর চিলা রায় ' (২০১০), কুচবেহারের রাজকন্যা আর জয়পুরের রাজমাতা গায়ত্রী দেবীক নিয়া নেখে ‘এক আছিলাে রাজার বেটি’ (২০১৪), কাব্য নেখে একখান, নাম তােমার মাের দুঃখের চিঠিগুলা (২০১৩)। নাটকের বইও নেখে একখান, নাম যুজ’ (২০১৪)। অসমত আরও ঢেল কবি আর সাহিত্যিক রাজবংশী ভাষাত উমার অন্তর দিয়া চর্চা করির ধরিছে যেই খবরগিলা হামেরা অনেকে জানিনা। এইঠে একেনা খবর দিবার আছে ড, ভকতের বেশির ভাগ বই বিরায় রাজবংশী সাহিত্য সভা হাতে আর ক্ষীরােদচন্দ্রের বই বিরায় রাজবংশী সাহিত্য সভার কেন্দ্রীয় সমিতির অনুমােদন নিয়া। বিহার রাইজ্যত রাজবংশী ভাষা সেবা পরিষদ নামে একটা প্রতিষ্ঠান আছে। এইটার মূল শিরােমণি কাটিহারের বসন্ত কুমার দাস। দেবনাগিরী হরফে উমুরা রাজবংশী ভাষায় নেখা একখান কবিতা সংকলন বাইর করিছে। কিশানগঞ্জের একটা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড, আনন্দমােহন সিং-এর মতন আরও বহু বিদ্বান আর বুদ্ধিজীবী মানষি বিহার রাজবংশী ভাষা সেবা পরিষদের নগত কাম করে। বিহারত ১৯৮৭ সালের যে ভীষণ বানা হয় তার উপুরা বসন্তকুমার দাস এক কাব্য নেখে, নাম দেয় ‘সাতাসী সালের বান’, ছাপা হয় ১৯৯৯ সালে। উমার সম্পাদনাত রাজবংশী ভাষার একখান কবিতা সংকলনও আছে। রাজবংশী ভাষার নাম নিয়া এই যদি বাস্তব পরিস্থিতি হয় তাহইলে কিসের আর কামতাপুরী বা দোসরা নাম নিয়া হামেরা ভাবিমাে? হামার উচিত এই নামটাক মানিয়া নেওয়া, মন দিয়া সমর্থন করা। আরও একটা কথা আছে। পশ্চিমবাঙলার মানী মুখ্যমন্ত্রী যেই হেতুক ভাবিয়া চিন্তিয়া এই নামটায় থুইয়া দিছে হামার উচিত কোনও পাখে না দেখিয়া, দোমােখােমাে না করিয়া খামাখা বিতর্ক না তুলিয়া মনে-প্রাণে রাজবংশী নাম মানিয়া নেওয়া। হামার গর্বের আর গৈরবের কুচবেহার রাজার শহরত সাগর মহলের ভিক্টর প্যালেসত যে রাজবংশী ভাষা আকাদেমির পত্তন হইছে, আইস কেমন করিয়া এলা এই আকাদেমির ভালাে ভালাে কাম কাজ করা যায়, উন্নতি করা যায় সেইটা নিয়া সৌগ রাজবংশী ভাষী মাওয়ের বুলির দরদিয়ারঘর বসিয়া ঠিক কর। ঝায় ঝায় ভুল করিয়া, ভুল বুঝিয়া বা ভুল ভাবিয়া রাজবংশী নামের বদলে অইন্য নাম দিবার চায়, উমুরাও সৌগ মানষি আসুক, আসিয়া দেখুক সরকার কী কাজ করিবার চায়, কেমন করিয়া করিবার চায়, আকাদেমির সদস্যঘর সাচ করিয়ায় কাজ করিবার পাবার ধরিছে কি না বিচার কর। মন না পােষাইলে, কাম-কাজে গাফিলতি দেখিলে উমাক বাদ দেও, যােগ্য লােক, ভালাে লােক, বিদ্বান-পণ্ডিতেরঘরক আনিবার ব্যবস্থা কর। তাও রাজবংশী ভাষা আকাদেমি চলুক, চালেবার যে নাগে। হাতের লক্ষ্মী বােলে পাও দিয়া ৷ নেদাই দেওয়া না যায়। যেইঠে রাইজ্য সরকার অন্তর দিয়া, যাক করা স্বতঃপ্রণােদিত হয়া রাজবংশী ভাষা আকাদেমি গড়েয়ায় দিলেক এলা কি আর অবহেলা করা উচিত হবে? দেখ কেনে কী হয়! মাের অন্তরের আটুশ, রাইজ্যর মইধ্যে, দেশের মইধ্যে হিটাক যাতে আদর্শ আকাদেমি হিসাবে খাড়া করা যায় তার বাদে সগাকে এক জোট হয়া কাম করা উচিত। নানা পন্থা বিদ্যতে অয়নায়। হিটা বাদে আর কোনও পথ নাই।

খুঁজি নেওয়া— ভোগা (পহিলা সংখ্যা, কাতি ১৪২১) সম্পাদক: নিখিলেশ রায়। প্রকাশ: রাজবংশী ভাষা আকাদেমি।

Post a Comment

Previous Post Next Post