শাক তুলিনু বেছি কুছি :অভিজিৎ বর্মণ —পীযূষ সরকার বইপাতি আলোচনা

শাক তুলিনু বেছি কুছি—আলোচনা 
পীযূষ সরকার


কবি অভিজিৎ বর্মনােক নিয়া নেখির গেইলে ভাল্লাড করি মানসি অভিজিৎ বর্মনের কথা ফম পড়ে , আর হিদ্দের ভিতিরা একনা দুষ্ক চিনচিন করি ওঠে ; অভিজিৎ দাক আমরা বেশিদিন আমার মইধ্যত পাইলােও না ; সগারে চখুর আগােত রাজবংশী সাহিত্যের একটা সাগাের ক্যারমে ক্যারমে শুকি গেইলেক । সউগে ভাইগ্যের খেলা । কথাৎ আছে না গুনি মানসিলা বােলে আগেভাগে চলি যায় । যেটায় হউক , হাজার হুতাস করিলেও বুকের ভিতিরার এই ফাঙফাঙা জাগাখান আর ভরিবার নােএায় । যেটা কাজের কাজ , সেটা হইল - এই নাই মানষিটা যেঙ্করি আমার ভিতিরা বত্তি আছে ; যেঙ্করি সােনায় রুপায় ভারে দিয়া গেইছে আমার রাজবংশী সাহিত্যের সন্দুক , তার সমাদোর করা ; এই সিসামসা ধনগিলা সগারে আগােত তলতি ধরা ; ঘাটা হারে যাওয়া এই মানষিলাক একনা আলাের দিশা দ্যাওয়া । দোতরার ডাং পত্রিকার এডিটর আমারে সুজন প্রশান্ত দা ঠিক এই কামাইখান করিবার মনাইছে । কবি , উপন্যাসিক আরাে গায়ক অভিজিৎ বর্মনােক নিয়া একটা গােটাল সংখ্যা বিড় করি একটা বড় দায় পালন করির ধরিছে উয়ায় । উয়াক সাধুবাদ জানাং । পাছােত মাের ঘারােত পড়িছে একনা কঠিন কামাই কবি অভিজিৎ বর্মনের শাক তুলিনু বেছি কুছি ’ বইখানের রিভিউ করা ! মুই কি রিভিউ করিম ? বইখান যেলা পড়ঙ ; মনে হয় কবি মােকে রিভিউ করির ধরিছে , দরদি গার্ডিয়ানের নাকান ভূল বাতে দিবার ধরিছে মােক - পীযুষ , অঙ্করি নােঞায় ; এঙ্করি ল্যাখ । মােট ৫০ খান কবিতা নিয়া । এই বইখান বিড়াইছে । সউগ কবিতাতে মাটির বাসেনা ; মাটির ছন্দ । কি হিউমার কি মজা করি নেখা । পােখােম কবিতা ‘ বাইগােন ’ ‘ বাইগােন বাইগােন ক্যানে দিস চাইঠোন ? / তাের বাদে ঝরেছে ফ্যাদরেস নাগা মন । কবি লেখিছেন – দারুন বিধি , এত দুষ্ক নারীর কপালে ? আসিলেক বাইষ্যার কাল দ্যাওয়ার পরে ঝরি | শেষােৎ শুতি কান্দং ও মুই ডুকুরি ডুকুরি ’ ( কাথাশুনা ) । পতি বৈদ্যাশােত রইলে নারীর যে মনত আউলানি সেইটা একঝন বেটা ছাওয়া কবি ক্যামুন করি দ্যাখেন ? ঐ যে মনের ভিতিরার চখু ; সেইটা কবি অভিজিৎ এর আছিল । কবি এটাও জানে পতিছাড়া নারী । দুন্নামের । ভাগি হয় , — গাবুর বসে ভাতার ছাড়ি বাসাত করে কাম / গােটায় জীবন নগরি হইল বদনাম দুন্নাম ’ ( মালতি ) । ফির কবি হয়া যান নস্টালজিক – কাশিয়া ফুলােৎ নুকাটু খ্যালার দিন / কায়বা পাছ পাখ থাকি চখু চিপি ধরে ... / ক তাে মুই কায় ? ’ কবি কেনেবা নদীর জলত উল্টা সাঁতাের দিবার যান ; কিবা চন্দন জলের ভিতিরা ; ফির নগতে ফিরি আইসেন বাস্তবের মাটিত ‘ চিরকাল কি ফুটি নবার তানে ফুটে ঘান্টি ফুলের কটপ - / দোপাতারি আমরুলের ফুল ? ( ঘন্টি ফুলের কটপ ) । শাক তুলির যায় আর এক আউকার কান্ড ; ‘ চুয়া নাল ঢোড়া সাপ ক্যামুন করি ( শাক তুলিনু বেছিকুছি ) । শব্দের ম্যাজিক আর ছন্দের জাদু চিলমিল করি ওঠে নানান কবিতাত - ‘ চলা পুটিমাছ ঝকঝক্ করি বৌ চান্নিৎ / ঠিন ঠিনা আঘিনা সান্টেক পচকরি বান্নি । কি ইমেজারি ! কবিতা পড়িতে পড়িতে চখুর আগােত ভাসি ওঠে চলচলা পুটি মাছ আর কানােত বাজে আঘিনা সাপটার শব্দ । আমার ভিটামাটি , জনমভূমির , উতুলি পড়া ঢক কবির কলমের সিস দিয়া নিগিরি পড়িছে । ‘ হিমন ঢক দ্যাশ পাবাে আর কোঠে / জোনাক পিন্দিয়া কইনা হেটে আর হােটে , ইছিয়া দিসেরে ঝিনি শাড়ির আঞ্চল / মাওয়ের কোলাত মুই চকল বকল ’ ( হামার দ্যাশ ) । জোনাক পিন্দিয়া কইনা । ... ওফ ! এই নাকান শব্দ দিয়া আকা ছবি পড়িলে গার নােমা সিংরি ওঠে ক্যাবা । জারের দ্যাশ ’ কবিতাত কবির ঠোটকাটা উচ্চারন । “ ফ্রিজের জল কতখানে বা ঠান্ডা / তার চায়াও হিল হিএল / ঐলা মানষির বুক ; মাও মাটিক ফম পাশুরি / চিকার নাকান কালে খন্দে | নুকির চাছে মুখ ’ ( জারের দ্যাশ ) । কবিতাতত নােঞায় যেনে একটা কশেয়া চড় ; কল্পি যাওয়া মানসিলার গালােত । কবি কিতায় থােকা খাওয়ার মানষি । কবির মতন কি খােচা কাটা নাগি অক্ত বিড়ির চাছে । কবি কয় - স্মৃতি রে তুই বেদনার টিপ ’ ... আগিলা কোড়াল ফম পাশুরিয়া / তুই এলা সংসারী ; মােক ধরালু ধারুয়া দতরা | ছাড়ালু গেরাম বাড়ি ’ ( কিসের ফম ) ধারুয়া দতরা ’ কথাটা শুনিলেয়ে ভিতিরা কান ক্যামুন উইস্যা নাগির চায় ... কাউলি ওঠে ভিতিরাখান । কবির হ্যাক ডাক খিব মনকাড়া ও দি , / তাের ড্যামাক খানে সার / কায়যে কইসে কি কাথা / আইসা না যায় আর ? ’ ( দি আসিস তত ) । এমুন । ড্যাক শুনিলে কায় না আইসে ? গােটায় দুনিয়া আসিয়া বগলােত বসিবে এলায় । কবি অভিজিত যে একঝন রসিয়া মানষি আছিলেন , হিউমার দিয়া টপটপা আছিল উমার । মন সেটা উমার কবিতা পড়িলেয় বােঝা যায় । ফির যেলা একলায় হয়া গেইছেন ; মন আউলি গেইছে ... ঘাটা উটকির যেয়া উষটা খাইচেন ; স্যালা কোন মিচাং পিসার সােদে আলাপ জুরি দিছেন । “ কি করিবাে পিসা / হারেয়া গেইছে দিশা / যাক কছ মাের মনের কথা / তায় হচে অনদিষা ...। পানজিয়ারক যায়া কনু / কত বারে ক / নাই শুনিতে বাতেয়া দিলেক চুপ করিয়া ন । ফির মজা করি কইল – “ কি করিবাে পিসা / কুনতে না পাও দিশা | তমার বৌমা ধরিসে এল / ভিডিও হলের নিসা ’ ( পিসা ) বা , ফাসকি গিটো কবিতাত – একনা নাওয়ােৎ চড়িনু ভাই / যাইম ভাঙা মালি / নগত উঠিল যতলা সাগাই তামানগিলায় শালি । হা হা হা ! কবি কি হাজার অভাব দুষ্কের ভিতিরি হাসি খিলি ব্যাড়ার কোন ফুসুৎ মন্তর জানিছেন । আমরা তাে এঙ্করি হাসির পাইনা হাসেরাে পাইনা ! কতলা কবিতা খিব অথাও । পড়িয়া থােম ধরি বসি থাকির নাগে । কবিতার দিঘােল । লাইনের শ্যাষােত ... / কিসের বা বাসেনা পাঙ । এইটা কি তােরে ? / তামনেঠে নাই নাই - নাই । / নাই কিনাকে ঘুষি থােঙ - অন্তরত / থিৎ পাঙ তুই আছিস । ( থিৎ পাও তুই আছিস ) এই তুইটা ফির কায় ? কবির পিরিতিয়ানি ? না লেখা কবিতা , নাকি কোন ভগবান ? মহাকাল ? ?

সুতা খালি বিড়ি যায় এটি গােটা যায় না । কবির মন উমলি উমলি ওঠে পড়িয়া ননু -একেলায় | কটাৎ বােঝাই বন ; সুখের বাচ্চে নইতে নইতে / যায় মাের দিন খন । ( আশিনের ম্যাঘ ) । এটা তাে চিরকালের কথা । মানষি কি সুখ ধরির পাইছে কোন দিন ? সুখতাে পারােদের নাকান বস্তু " We look before and after and pine for what is not / our sweetest songs are those that tale of saddest thoughts . " ‘ বােম্বাই হাতে ’ কবিতাখানত ধরা পড়িছে কবির ‘ হােমসিকনেস ’ বাড়ির কথা ফম পড়িলে | চখুর আগােত - উজি আইসে ছিম ছিম জল । কবি ছচাঙে দিশাহারা হয়া গেইছেন আস্তে আস্তে ; ভাইগ্যের হাতােত নিজোক ছাড়ি দিছেন – “ জলের সােত নামিয়া মুই / অনষে বেড়াও খালি ; নেখিনু কোষ্ঠে কার নামটা / কোষ্ঠে মনের কালি ’ ( জলৎ নেখা নাম ) । কবি এই নিদানের দিনােত ত্যাও স্বপন দ্যাখা ছাড়ে নাই - ‘ একনা দিন আসিবে / ঝড়িৎ সেদিন সগায় ভিজামাে গাও / অঘাইস জলের পাটা কুড়াৎ / এক এক করি সগায় নিমঅ থাও ’ ( আবাে আসিবে ) কিন্তুক মাের মতে সউগ কবিতার উপরার কবিতা , সউগ ভাবনার উপরার ভাবনা ; সউগ । দুষ্কের থিতানি দুষ্ক আসি জমা হইছে ‘ নরার কথা ’ কবিতা খানােত । এটি খুনা ‘ কবি ’ অভিজিত জুল জুল করি চেয়া আছে ‘ মানষি অভিজিতের ভিতি , একজন ক্যান্সারের পেসেন্টের ভিতি , একজন মরন মুখী জীবনর সীয়ার ভিতি । কি আর্তি , কি ভাঙনি এই কবিতাখানােত .. পড়িলে মন কাউলি ওঠে বারে বারে । চখুর আগাল ভিজি যায় .. খালি মনে হয় - অভিজিৎ দার জীবন এত ছােট ক্যানে ? এইলা কি ভাইগ্যের শয়তানি নােঞায় ?

সােগায় মােক নবার কথা কয়
নধী - চান - কলমি ঘণ্ড অতি আন্ধার মেসি
পাও ব্যান ক্যাটে জাবরে ধরির চায়
নইজ্জাপতি আলােকনতা নতিয়া নেওয়াসি ।
সগায় মােক গালা চিহিরি কসে
নইস রে বাউ মােরও আছিল কাথা
বেলা হাটুলির বেলাটা এলাও আছে ।
তাও মুই মোের ছাড়িনু দ্যাশের মায়া
মাওয়ের কাথা নধীর কাথা জোনাক চান আলাে জুড়িনু ঘাটা শূন্যের দ্যাশ বুলি
সেটে শান্তি নিঠুর ছচাক বাসির পারিম ভালাে । ( নবার কথা )

এই কবিতার পাছােত আর কথা কবার মন না যায় । মরন বিছিনাত থাকি কবি দেহার , মনের শ্যাষ আলাে খিনা যেঙ্করি অক্ষরে অক্ষরে দিয়া গেইছে আমাক , মুই মাথা নিচা করি ভক্তি দেঙ উমাক । যেটি রন ভালে রন কবি - ঘাটা আঙদাইলে আকাশ হাতে ঘাটা দ্যাখে দেন । এমুন অসুখােতে এমুন রস , এত জোর এত আগুন , এত টুলানি , এত ম্যাজিক , কোটে থাকি পাইল উমরা ? জাগা আবিনে সউগ কবিতা তুলি ধরি না পানুং । খালি একটা কথায় কং সউগ কবিতায় মাটির ; সউগ কবিতায় খাটি । শ্যাষবেলাত কবিক উপুরার কোন হাত জোর করি লেখাইছে এই কবিতালা । ঐ বাদে সউগ কবিতায় – “ ডিভাইন । বইখান নিকলাইছে ( প্রথম নিকিলন ২০০৮ ) রাজবংশী একাডেমীর পক্ষে সম্পাদক ( কবি আরাে অধ্যাপক ) নিখিলেশ রায় । উমরা যেটি হাত দেয় ওটি একনা যতনের দাগ থাকেয় । গতিকে বইয়ের কভারােত হাত দিলে পাতা উল্টির মন যাবে । মানে ঘরের বায়রায় - ভিতিরায় মজবুত । যায় যায় এলাও হদিস নাই পান দোবাের খুলি ভিতিরা সােন্দান । রতন মিলিবে। গেটপাস ৪০ টাকা ।

শাক তুলিনু বেছি কুছি 
অভিজিৎ বর্মন প্রকাশক: রাজবংশী একাডেমি
প্রথম প্রকাশ: ২০০৮
মলাট: নিখিলেশ রায়
দাম: ৪০ টাকা

Post a Comment

Previous Post Next Post