ঢেসা ধানের সমাই : অভিজিৎ বর্মণ —জয়ন্ত কুমার রায় বইপাতি আলোচনা

ঢেসা ধানের সমাই—আলোচনা 
জয়ন্ত কুমার রায়

ঢেসা ধানের সময় গুল গুল করি টাম পাকে । আর তারে বাদে বােকধুলের দিনে আইতে ঘুনুর ঘুনুর পাক পাড়া খিব ভাল করি দেখির ধরছে কবি অভিজিৎ বর্মন । কবি সেলা গাবুর বয়স , ভাইল্লা সমায় প্রকৃতির ভিতিরা ডুবি ছিল । “ ঢেসা ধানের সমাই ’ বইখান গােটায়টা কবির বাচ্চা বেলা আরাে গাবুর বেলায় অনুভূতির মিশ্যালে আরাে উয়ার নিজের পর্যবেক্ষণ আরাে অভিজ্ঞতার সংযােজনে উবজি উঠিছে । মােট ৩৯ খান কবিতার মধ্য দিয়া কবি উয়ার ভাষা সংস্কৃতিক অন্সে বেড়াইছে গােটায় বইখানত । বইখান দেখির ছােট মতন হইলেও বােল চাইর ফর্মার , গােটায় মিলি ৬৪ পাতা জুরি কবি অভিজিৎ বর্মন মৌলিকতা আরাে ভাষার নিপুনতা দিয়া পাঠকের হৃদয় মাও মাটির বাসেনাতে ভরে দিছে । গাবুর কোটে পাইল এই নাখান করি দেখার চখু “ শাল ফরাসের ছেঞা হিয়াল গিলাপ উড়িসে ভক্ত গিদাল / ঘিাল ঘিাল বাসেনা নাকোৎ হাততাৎ কলর ঝুকি / গরুর গাড়িৎ কুমড়া বােঝাই কালীর থানােৎ ভক্তের উজাই / কুন্তি পিসাই ওদোৎ শুকাছে মাটিয়া পাইলা ডুকি । ” ( অঘনের দুফুর ) জীবন চক্রের ফ্যারত নালাটা জিউ কান্দি বেড়ায় দুষ্কগিলা ঘুড়ি ঘুড়ি আইসে সেলা আলােতাে আন্ধার দেখে মানসি এই কাথা গিলায় কি নাখান সাদা সিদায় কয়য়া গেইছে কবি “ খাং খাং যেলা নাগেছে মন / আগলে বগলে । মনের মানসি নাই । ” কি নাখান প্রকৃতির সােদে একাত্ম হৈলে কাহাে সইন্ধার নাছােরবান্দা মুখ দেখির পায় “ চাইরাে পাখে ময়হা জারের / গােমঠানাগা সইন্ধা খানের মুখ ” । ( পৌসাঞ্জ ) । এখনা বিধুয়ার দুষ্কে দুখি হইছে প্রকৃতি মাও । বাও বাতাসও বিধবার জীবন যাপন করি দুষ্কে কান্দি ওঠে “ নিধুয়া দলাৎ বিধুয়া কান্দে । চৈতে পছিয়া বাও ../ দুখাতির দুখে ইমিরাও যে দুখি / ভাঙি পড়িছে বুক । ” ( দুখাতি ) । কি কইম ? আলাের নাখান আন্ধার , কি দেখাইল কবি । মানষির দুষ্কো মানসিক কতকোনা বােলের পায় , কবির কথাত মােরও এলা মাইনষের মনের মরমী হবার মন চান্দায় । দুষ্কর ভিতিরাতে চখুর জল ফেলা অন্যনাখান আনন্দ অনুভূতি , কি আলাে কি আলাে এখনা চেংরির মনের ভিতিরা কতখান আললা সেই আলাে দিয়া উনায় ভরে দিবার চায় গােঠায় । সইন্ধাকোনাক । কিন্তুক কতকোনা ক্ষমতা উঞার বারুদ যে থুচে অইন্য ঝনেরঠে । তায় চেংরির মনের মানষিরটে আকুতি করি কয় – “ তাের কাথাতে মনটা থুচোং ধরিয়া বান্দিয়া | আর থাকিম কত দিন / মাের চখুত নাইরে নিন । বাইদ্য বাজে আয়রে মড়া টোপড় মাথাৎ দিয়া । ” ( হাতাশী ) । মাক ছারি টারি বড়ির পাখি পয়াল , বাও ছাড়ি বাউ কোনা পাইসা কামের যায় আজস্থান সুরাট কিন্তুক বাউ এর মার করুন আর্তি নুন ভাতে হইলেও খামাে ত্যাঙ মুখের – “ দ্যাশের ময়হা ক্যানে ছাড়িস বাউ ? / আগলে বগলে ন / দিন মিলি একগাস ভাত খাইলেও তাে বুকখান ভিজিবে ” ( মাওয়াতি ) । এঙ্করি কইলে আর কোন ছাওয়াটা আগােত র বাউ

মাক ছাড়ি বৈদ্যাশ যাবার পায় । ইয়ার থাকি গভীর সুখানুভূতি আর কি হবার পায় । একনা মার আকুতির আগােত হরি যায় আধুনিক বিশ্বর চখচখা সপন । বাচ্চা বেলাত গােল্লাই ছুট খেলাছি মামা বাড়ি যায়া ঢ্যালেয়া ওয়া পাড়ি খাচি , নদী গেছি মাছ মারা দেখির , ঠাকুরের পাটের ধুপ নেবার আগােতে বাতেসা চোর করি খাওয়া , অভিজিৎ বর্মনের “ অসিস , যদি ফম পড়ে ” কবিতাখান পইরতে পইরতে নষ্টালজিক হয়া পড়িছােং , পাশুরি যাওয়া কথালা মনত ফম পড়িলে ফিরি আইসার আটুস জানাইছে কবি “ অসিস তাে / যদি ফম পড়ে- / টেরিয়া ভ্যাকরা নধীর দাথিৎ গােল্লাছুটের মাঠ / ভাঙা বুড়া নুথুরা বুড়ার ময়না মতির ঘাট। বাগাচুড়ার মুড়াৎ বােঝাই শুরা বাশের থােপ। কাঙ্খিনি গুয়ার গছৎ ঘােকল ডিঙের খােক । ” শিরশিরা নাগা বাও এর নাখান ছন্দ তালে তুচ্ছ জীবনে আশাতেয় ছন্দ , সদায় নয়া জনম , তারে আশাতে বারে বারে ফিরি আইসা ভাটি পাখে , ভাসার পাখে – “ কিসের আশাৎ ভাটির পাখে / সােতাল নদী উজান থাকি ধায় / কিসের মায়াৎ মেলেয়া ডানা / ভাসার পাখে পংখি ফিরি চায় । ” রাজবংশী ভাষার পােয়াতির ঘরহাতে কবি শব্দলা বির করি আনি উমার কবিতা বসাইছে । – “ হেরে গেল্পের করি মল্লের মাও | ফটফটা জোনাক খই করে ভাও । ” কবিতালা পইরতে পইরতে গাও সিংরি ওঠে মানষির জীবন যন্ত্রণা , আশা আকাঙ্খর এই নাখান বিবরণী এখন দরদী মানসিয়ে হৃদয়ত আওতে থুবার পারে । বইখানের শ্যায়ের কবিতা খান খিব মজার ‘ কাঠোলের বিচির ছােবা এটেকোনা একনা আবো আর উয়ার নাতনির কথা কওয়া কউয়ির মধ্য দিয়া কবি রাজবংশী সমাজের একনা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র “ আবাে ’ এর স্বরুপ তুলি ধরিছে । কাটোলের ছােবা খাওয়া নিয়া দোনােঝনের মইধ্যে ঝগড়া নাগিলে , সেই সুযােগে কুকুরে কাটোলের ছােবা খায়া ফেলায় ফির শ্যাষত আবাের সিকিয়াত আওতে থােয়া কাটোলের ছােবা নাতনিক নিয়া খাবার কয় ফির দোনােঝনে গলা ধরা ধরি করি হাসির ধরে । এই হইল আবাে , নগতে ঝগড়া নগতে শােগে বিরকরি দেয় – “ মিছা ঝগড়া দন । / সকদ্দম পাটাই ঘর মুলিম শিল পােয়া / তারে মাথাৎ তামান বিচি শেকিয়াৎ আছে থােয়া ঐটা টকড়া তােক এ দিনু যেলায় সেলায় নিস / মন চান্দালে ওল্ডা করি মােকো কনেক দিস। কবি হামার মইধ্যত নাই , মনত আছে , আছে টেসা ধানের আইলে আইলে , গুলগুলা নাগা টামত , বিধুয়া কোনার দুষ্কত , বাথানে বাথানে আছে কবি । দেখং ফুলের হৃদয়ত মধুর আশা ছাড়ি উঞায় উড়ি বেড়ায় ভাষার বাদে , ভাষা কোনাক অইন্য একনা ভাের দ্যাখের বাদে ।


ঢেসা ধানের সমাই

অভিজিৎ বর্মন
প্রথম প্রকাশ: ২০০৮
প্রকাশক: রাজবংশী একাডেমী
দাম: ৪০ টাকা

Post a Comment

Previous Post Next Post