মেঘদূত —রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর অনুবাদ: ধৃতিশ্রী রায় Meghdut Rabindranath Tagore short story

মেঘদূত 
মূল: রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর
অনুবাদ: ধৃতিশ্রী রায় 

মিলনের পৈলা দিনােত বাঁশি কী কৈছে ? উমায় কৈচে , সেই মানষিটা মাের বগলােত আইসলেক যে মানষিটা মাের দূরান্তরের । আর বাঁশি কৈচে , ধৈল্লেও যাক ধরায় না যায় তাকে ধৈচোঙ , পাইলেও পাওয়ায় যে ছাড়েয়া যায় তাক পাওয়া গেইলেই । তারপাছত সদ্দায় বাঁশি বাজে না কেনে ? কেনেনা , আদ্দেকখান বাও ভুলি গেইচোঙ । খালি ফমত থাকিলেক , উমরা বগলােত ; কিন্তুক উমায় যে ভালদূরত্ তাও খেয়ালে না আছলাে । ভালবাসার যে অদ্দখানােতে মিলন সেটায়ে দ্যেকার । যে অদ্দখানত বিরহ সেইটা চখুতে না পড়ে , তায়ে ভালদূরের চিরতৃপ্তিহীন দ্যেকাটা আর দ্যেকায় না যায় ; বগলের পদ্দা ঢাকি দিচে । দুইঝন মানষির মৈদ্দত যে নাকান অথাও আকাশ সেটিকোনা সৌগে ঝিত , সেটিকোনা কথায় চলে না । সেই ডাঙর ঝিত থাকাক বাঁশির সুর দিয়া ভরে দেওয়া যায় । অনন্ত আকাশের ফাঁক না পাইলে বাঁশি না বাজে । সেই আমারূলার মৈদ্যে আকাশখান ঢাইচে । সদায় দিনের ভয়ভাবেনা কিপটামিতে , সদায় দিনের কাজ কামাই কতাতে ভত্তুক হাঞা গেইচে । 

(দুই)
এক একদিন জ্যোৎস্নারাইতােত বাতাস উটে , বিচিনাত জাগি বসি বিষি নাগে ; মনােত পড়ে , এই বগলের মানষিটাকলােহারে ফ্যেলাইচোং । এই বিরহ মিটিবে ক্যেঙ করি , মাের অনন্তের সুদে অনন্তের বিরহ । দিনের শেষত কামাইর থাকি ঘুরি আসি যার সাহােত রাও করােঙ তায় কায় , উমায় তাে সংসারের হাজার মানষির মৈদ্যোত একঝন , তাক তাে জানা হৈচে , চেনা হৈছে , সেটা তাে ফুরি গেইচে । কিন্তুক উয়ার মৈদ্যত কোনটে কোনা যেই মাের অফুরাণ একঝন , সেই মাের একমাত্র । উয়াক মুই না করি উকটি পাঙ কোন ফুলহারা কামনার বগলােত । উয়ার সাথােত ফির একবার রাও করােও সমায়ের কোন ফাকোত , বনমল্লিকার গােন্দত নিবিড় কোন কর্মহীন সৈন্ধ্যার আন্ধারােত ।

(তিন)
এমন সময় না বাইষ্যার ছেমার নাকান ঢুস গাত দিয়া পূর্বপাকে আসি খাড়া হৈছে । উজ্জয়িনীর কবির কথাত ফমােত পড়িল , মনে হৈলে - প্রিয়ার ওটি ঘটক পাঠে দিচে । মাের গান উড়ি উড়ি যাবার নাগুক , বগলােত থাকার শক্ত নির্বাসন পার হঞা যাউক । কিন্তুক তাইলে উয়াক যাওয়া খাইবে কালের উজান ঘাটা পার হা , বাঁশির বিযােত ভরা আমারলার পৈলা মিলনের দিনােত । সেই আমারলার যে দিনটা বিশ্বের চিরবর্ষা ও চিরবসন্তের সৌগ গােন্দোতে সৌগ কান্দোনােত মাখিয়া বা গেইলেক , কেতকি বনের দিঘিলা নিকাশত আর শালমঞ্জরীর উতলা আত্মার নিবেদন । নির্জন ডিগির বগলােত নাইরকেল বনের মর্মরি তােলা কৈষ্যার আপন রাওটাকে মাের বাও করি নিয়া প্রিয়ের কানােত পনছেয়া দেউক , যেটিকোনা উমায় উয়ার আউলাচুলিত গােন্দো নিয়া আঞ্চল কমরােত বান্ধি সংসারের কামাইত ব্যস্ত । 

(চার)
ভালদূরের অথাও আকাশ আজি গছগছালির খেলা পিথিবীর মাথার বগলােত নত হঞা গেইলেক , কানে কানে কা উটিলেক— “ মুই তােমারে । পিথিবী কৈলেক , সেইটা ক্যেঙ করি হয় , তােমরা যে ধরা ছােওয়ার বায়রা , মুই যে ছােটো । দেওয়াখান কৈলেক , মুইতাে চাইরােপাকে মাের মেঘের সীমা টানি দিচোং । পিথিবী কৈলেক , ‘ তােমার যে কতয় জ্যোতিষ্কের সম্পদ , মাের তাে আলাের সম্পদ নাই । দেওয়া কৈলেক , আইজকা মুই মাের চান সুরজ তারা সগাকে হারে ফেলে আইচোং , আইজকা মাের একমাত্র তােমরায় আছেন । পিথিবী কৈলেক , — “ মাের চখু ভরা হৃদয় বাতাসে বাতাসে চঞ্চলা হঞা কাপে , তােমরায় সে অব্যাকুল । দেওয়াটা কৈলেক , ‘ মাের চখুর জল আজি চঞ্চলা হৈচে , দেখির কি পান নাই , মাের বুকখান আজি শ্যামলা হৃদয়টার নাকান । উমরা এইলা কঞা আকাশ পিথিবীর ভিতিরাকার খাসকার চিরবিহর্ষক চখুর জলের গান দিয়া ভরে দিলেক । 

( পাঁচ )
সেই আকাশ পিথিবীর বিয়ার মস্তয় গঞ্জনা নিয়া নয়া বাইয্যা নামুক আমারলার বিচ্ছেদের উপরা । প্রিয়ার মৈধ্যে সেটা কথা হৈকে এক কথাতে যেইল্লা বর্ণনা দিয়া শেষ করা না যায় । তায়ে অজগুবি বাজি ওঠা ব্যাণার তারের নাকান কাপি উঠুক । উমায় নিজের সীতার উপর তুলি দেউক ভালদূরের বনের শেষ দেখা যাওয়া রঙের নাকান উমার নীল অঞ্চল । উমার কালা চখুর চাউনিত মেঘমল্লারের সৌগ মীড়লা ডুকরি উঠুক । সার্থক হৌক বকুলমালা উয়ার বেণীর ভাজে ভাজে পণ্টাপল্টি করিউটি । যকোন ঝিল্লির ঝঙ্কাৱােত বাঁশবনের আন্দার থরথরের ধৈচ্চে , যকোন বাদলা বাতাসােত গছার আলাে কাপি নিবি গেইলেক , কোন উমার উয়ার বগলের সংসারটাক ছাড়ি দিয়া । আসুক ; ভিজা ঘাসের গােন্দোত ভরা বনপথ দিয়া মাের নিভৃত হৃদয়ের আন্ধার রাইতােত । 

Post a Comment

Previous Post Next Post