ডিয়া কপালি - উমাশঙ্কর রায়ের রাজবংশী গল্প Diya kapali - Umashankar roy's Rajbangshi Story

ডিয়া কপালি
উমাশঙ্কর রায়

ঢাঙি আবাের সােদে গদাধরের মেলাবাড়ি আসিচে বাতাসী । আগা দিনােতে আসিচে মেলাবাড়ি । মরুচবাড়ি থাকি নাটাবাড়ি ভালেখান ঘাটা । নাত্তিটা ঢাঙি আবো আর বাতাসী স্কুল ঘরের বারোত কাটেয়া সাকাল সাকাল গদাধরত গাও ধুইলেক । একটা গছের তলাত বসিয়া ঢাঙি আবো আর বাতাসী বাড়ি থাকি আনা ঘটির দই আর টোপলার চুড়া বাকেরেয়া খাবার ধরলেক । ঢাঙি আবাে একটা আটিয়া কলা বাকেরেয়া বাতাসীক দিলেক কেলেবার । বাতাসী কলাটা কেলের ধরচে , সেলা ভ্যালেত করি কলাটা পিছলি পড়িলেক মাটিত । বাতাসী এই দেখিয়া উপুরা মুখ হয়া টাকটাকে হাসির ধরলেক । তাক দেখিয়া ঢাঙি আবাে কইল— “ তুই চেংড়িটা বড় ডিয়া কপালি হের , হাউস করি ন্যান্দো ঘরের বাড়ি থাকি আনলুং কলা হালি দই চূড়া দিয়া খাইম বুলি— খাওয়া দাওয়া করি ঢাঙি আবাে আর বাতাসী মেলা ঘুরির ধরলেক । ঘােরতে ঘােরতে ঢাঙি আবো দই বেচা পাইসা দিয়া গচা থােওয়া ঠকা , উটি ডল্লা পিরা কিনলেক । বাতাসীক দেয় ধরিবার । দুইঝনে মেলা ঘােরে এ - দোকান সােন্দায় ও - দোকান সােন্দায় । এ্যাংকরি ঘােরতে ঘােরতে গচা থােওয়া ঠকাটা বাতাসী কোঠে বা থুইয়া ফম পাসুরি যায় । টের পায়া বাতাসী ঢাঙি আবােক কয়— ‘ আবাে হের , ঠকাটা কোঠেবা থুলুং , হর ফমে নাই এলা । ‘ আই কপাল , হাউস করি কিনলুং ঠকাটা তাও ফেলালাে হারেয়া । তুই চেংড়িটা বড় ডিয়া কপালী হের । ভাতারের ডাং খাইলে তুই শিক্ষা হবু । ঢাঙি আবাের ফেলি - পারা দেখি বাতাসী টাকটাকে হাসির ধরলেক । হাসতে হাসতে বাতাসী চাউটালি করি ঢাঙি আবােক কয় — ‘ ফেলি না পারিস আর , বাড়ি যায়া এলায় ঐ দক্ষিণ টারির ঢ্যাপড়া আজুক কয়া তাের জইন্যে ঠকা বানে আনিম । ঢাঙি আবাে তাও আগ খায়া কয়— ‘ হাতের জিনিস হারেয়া আরাে ত্যাল - ত্যালাইস হের । হাটেক বাড়ির ঘাটা ধর , মুই না ঘােরােং আর তাের সােদে মেলা । এংকরি ঢাঙি আবাের সােদে দিন কাটে বাতাসীর । চেংড়িটা বড় সাদাসিদা , মনত কোনাে প্যাচ নাই । ছােটোতে মাও - বাপ মরিচে , কাকার ঘরত পালা - পােষা বাচ্চা হাতে । বইপড়া কইতে ঐ প্রাইমারী পাশ । তারপরে আর ইচ্ছা থাকিলেও পড়া নাই হয় বাতাসীর । কাকি যেলা থাকি এ - বাড়ি আসিছে ঢাঙি আবােয় উঞার খেলার সাথী— ঢাঙি আবােয় এলা উঞার জুয়ান বয়সের ভাল - মন্দের দেখাশুনার মালিক । বাচ্চা হাতে দুঃখ - কষ্টর মইদ্য দিয়া মানষি হইচে বাতাসী । ঐজন্যে ঢাঙি আবাে উঞাক চাউটালি করি কয় , ডিয়া কপালি । বাতাসীর বয়স এলা আঠারাে । সমায়ের সথে সথে বাতাসীর মনের এলা পরিবর্তন হইচে । বাতাসী এলা স্বপ্ন দেখে নিজের ঘর সংসারের । সাকালে উঠি যেলা বগলের বাড়ির বৈশাখুর মাইয়া গাও ধুইয়া কাপড় পিন্দি ভ্যাল ভ্যাল করি সেন্দুরের ফোটা দিয়া এদি - ওদি ঘরের কাজ করির ধরে বাতাসী সেলা ঠঠর করি দেখে বৈশাখুর মাইয়াক । হাতের মােটা মােটা শাখা , ভ্যালভ্যালা সেন্দুরের ফোটা দেখি বাতাসীর মনত কত স্বপ্ন সেলা ঢুলকি মারে । না - দেখা না - বােঝা সুখের কতা ভাবিয়া বিভাের হয় বাতাসী । মনে মনে দিন গনে কদ্দিনে পাবে উঞায় এইগুলা । ঢাঙি আবো বুজির পায় বাতাসীর মনের ভাব । ঢাঙি আবাে বুজির পায় যে , বাতাসীক এলা দরকার একটা ঘর সংসার , আর একটা পছন্দের সাথী । কিন্তুক চেংড়া পাওয়া যায় না । তাও যদি বা কোনাে সম্বন্ধ আইসে , চেংড়ির মাও - বাপ নাই শুনিয়া ওদি পাছে যায় । কাঞোবা যদি খানিক আগায় তার যে দাম চেংড়ার , অতলা টাকা কোটে থাকি আসিবে ! বাতাসী সউগ বুজির পায় । মাও - বাপ না থাকিলে চেংড়ি মানষির পরার ঘরত মানষি হওয়া কি জ্বালা ! এইলা কতা ভাবি ভাবি বাতাসী মইদ্যে মইদ্যে দাগিলার তলােত মাথা ভরেয়া চকুর জল মােছে আর নাকের হােসটা টানে । ঢাঙি আবাে টের পায় বাতাসী কান্দির ধরছে । বাতাসীর কতা ভাবিয়া ঢাঙি আবাের বুকখান হাকাউ - হাকাউ করি ওঠে । ঢাঙি আবো আন্দার ঘরত বাতাসীর মাথাত হাত বােলেয়া কয় — ক্যা কান্দিস বাতাসী ? চুপহ , চুপ হ , সবে বােজং মুই । তাের বাদে মােরও মনটা কেমন করে । বাতাসী চুপ থাকির পায় না । ঢাঙি আবাের বুকত মাথা ভরেয়া হাউহাউ করি কান্দি ওঠে । কয়— ‘ ছচাং আবাে , মুই বুজি ছচাং ডিয়া কপালি । একদিন খবর আইসে ধলগুড়ির এক চেংড়ার । চেংড়ার ঘর দুই ভাই , মাও - বাপ । চেংড়া করে রাজমিস্ত্রির জোগানী । ভাইটা থাকে জয়পুরত , বুড়া মাও - বাপ বাড়িত । চেংড়ার দাবি বিশ হাজার টাকা , সাইকেল আর কইনার সাজোন । ঢাঙি আবাে এবার আর এই ঘর হাত ছাড়া করির না চায় । নিজের নামে বুড়ির এলাও একবিঘা মাটি আছে , তারে আধাবিঘা বেচে দেয় ঢাঙি আবাে । তাও বাতাসীর বিয়াও এবার দিবে । বাতাসী ঢাঙি আবােক কয় , এবার তাের বিয়াও দিয়ায় ছাড়িম হের । জমি বেচা নিয়া বাড়িত কাকার সােদে আবাের ঝগড়া দেখি বাতাসী কয় , ‘ ক্যা আবাে , মাের জইন্যে তুই জমিখুনা বেচেয়া কাকার বৈরী হইস । ' কিন্তুক না , ঢাঙি আবাে কারাে কোনাে কথা শােনে না । শেষে ঢাঙি আবাের জেদে সউগ হয় । বিয়ার কতা পাকা হয় বাতাসীর , চেংড়ার ঘর সােনাকাপড় করি যায় বাতাসীক । নাত্তি থাকির সমায় গচা জুলেয়া ঢাঙি আবাে আর বাতাসী দেখে সােনাকাপড়ী কাপড় , তেল - সেন্দুর , স্নাে পাউডার , নাকের ফুল ...। সােনা কাপড়ী জিনিস দেখতে দেখতে , এক অজানা সুখের কতা ভাবি বাতাসীর চকু - মুখ নইজ্যাতে নাল হয়া ওঠে । বাতাসী মাথা ছাপড়ে বেশী করি । ঢাঙি আবাে গচার আলােত দেখির পায় বাতাসীর মুখ । বাতাসীর খুশি দেখি ঢাঙি আবাে মনে মনে খিব খুশি হয় । ঢাঙি আবো বাতাসীক বুজায় , পরার বাড়ি যায়া ভাল করি নবার । সগাকে নিজের বুলি মানি নিবার । শ্বশুর শ্বশুরীক যত্ন আত্তি করিবার । আরাে কত কি সংসারের খুটি - নাটি সব বুজায় ঢাঙি আবাে বাতাসীক । শেষে আইসে বাতাসীর অপেক্ষার দিন । ফাগুন মাস গছ - গাছালি চাইরােপাকে আজি রঙে ভরিচে । বাতাসীর হাতে গড়া ডিগির পারের মাদার গছটার ঠাল আজি নালে নাল । মাদার গছটাও আজি বুজির পাইচে বাতাসীর মনের খুশি । আজি বাতাসীর বিয়াও । সাজি পারি উত্তরের ঘরের চাংড়াৎ বসি আছে বাতাসী । আশ - পড়শি সমবয়সী চেংড়িগিলা বাতাসীর বগলােৎ বসি বাতাসীর সােদে কত চিমটানি গল্প নাগাইচে । বাতাসী মাজে মাজে চুপ থাকির না পায়া উমারলার সােদে হাসি ওঠে । বাতাসীর মনের অবস্থা বুজি আজি বাতাসীই কবার পাবে ভাল করি । চেংড়া পইক্ষ আসি গেইচে । মইদ্যে মইদ্যে একটা দুইটা চেংড়ি চেংড়া পইক্ষর ওদি চুলকি দেখি আসি বাতাসীরকানত কিবা কয় । আর বগলের চেংড়িগিলা হাসি ওঠে । খানিক পরে বামুনের ডেক পড়ে । বাতাসীক মণ্ডপােত নিয়া যায় বসায় । আরাম্ভ হয় বামুন নাপিতের মন্ত্র পড়া । দেখতে দেখতে মালাবদল — সাতপাক ঘােরা সব শেষ হয় । নাত্তি ভোের হয়া আইসে । বরযাত্রীর ঘর নয়া সাগাই - রটে বিদায় নেওয়া শুরু করে । বাতাসীর এক বনু উত্তরের ঘর থাকি বাতাসীক পাজা কোলা করি বাকেরায় । বাতাসী আর চুপ থাকির পায় না । হাউ হাউ করি কান্দি ওঠে । একটা ছােট্ট সংসার , মনের মতন একটা সাথী এইটায় চাইছিলাে বাতাসী মনে মনে । ক্যা ফির আজি অংকরি কান্দে ? বাতাসীই জানে এ কতা । ওদি গােয়ালীঘরত বসি বাইদ্যকরের ঘর বিদায় বাজেনা বাজের ধরে । করকা আর সানাইয়ের সােদে মিশি যায় বাতাসীর কান্দোন । এই দেখি ঢাঙি আবো আর চুপ থাকির পায় না । বাতাসীর গালা ধরি হুকহুকি কান্দি ওঠে ঢাঙি আবাে । বাতাসী আর নয়া জাঙোই ঢাঙি আবােক ভক্তি দেয় । আবো দুইঝনক দুই বগলােত ধরি কান্দি ওঠে । চকুর জল মােছতে মােছতে বাতাসীর মাথা সােত্তায় । বাড়ির বড় মানষিক সগাকে ভক্তি দিয়া বিদায় নিয়া এখান মারুতি গাড়িত বইসে বাতাসী । ঢাঙি আবো মারুতির দুয়াের মােজেয়া ধুতির আচল দিয়া চকুর জল মােছে । খানিক পরে গাড়ী ছাড়ি দেয় । মারুতির জানলাত দুই হাত থাপড়েয়া , ঢাঙি আবােক ডেকেয়া , বাতাসী কান্দে । গাড়ী চলি যায় । এবার ঢাঙি আবাে চায়া রয় । আজি থাকি ঢাঙি আবাে হইলেক সাথী ছাড়া । ঢাঙি আবাে চায়া রয় গাড়ীর ভিতি , খানিক পরে ধনীর বাঁশবাড়ির আওড়াল হয় । গাড়ী আর দেখা যায় না । ঢাঙি আবাে ঘুরি আইসে । দেখতে দেখতে ভালে দিন হয়া গেইল বাতাসীর বিয়ার । নয়া সংসার নয়া মানষি সগাকে চিনি নিচে বাতাসী । শ্বশুরটা খিব ভাল মানষি , সারাদিন বাতাসীক বৌমা বৌমা করি ডেকে রয় । ঢাঙি আবাে , নিজের বাড়ি , খেলার সাথী , ইমারগিলার কথা ভাবে যেলা— বাতাসীর মন খারাপ হয় । মনের ভিতিরাখান খালি খালি মনে হয় । সেলা উঞার শ্বশুরের ডেক , স্বামীর সােহাগ মন ভরে দেয় । কিন্তুক বাতাসীর শ্বশুরীটা খানিক দজ্জালি ধরনের । কতায় কতায় বাতাসীক টোকে , হেখান ভাল না হয় , ওখান ভাল না হয় , আরও কত কি । বাতাসী তাও ওলা মনত ধরে না । ভাবে সব মানষি ততা আর সমান না হয় , ধীরে ধীরে শ্বশুরীও ভাল হবে । সারাদিন শ্বশুর - শ্বশুরীর আত্তি যােগেয়া , ঘরের কাজ করিয়া সইঝ্যা হইলে বাতাসী ঘাটার ভিতি চায়া রয় । কতখনে আসিবে বলরাম উঞার মনের মানষি । বলরাম কাজ থাকি বাড়ি আসিতেই বাতাসী হাত থাকি খরচার ব্যাগ নামে নেয় । বলরামক মােরা বাকেরে দেয় বসিবার , কল থাকি জল তুলি দেয় হাত - ঠ্যাং ধুবার । তারপাছােত সগায় মিলি খাওয়া - দাওয়া করি থাকাথাকি হয় । সংসারের নানান গল্প করতে করতে আন্দার ঘরত বলরামের কোলাত নিজকে হারে ফেলায় বাতাসী । বলরামের আদর পায়া বাতাসীর মন ভরি ওঠে । কিন্তুক উঞার শ্বশুরীর মন দিনে দিনে খারাপ হয় বাতাসীর উপুরা । বিয়ার বছর পার হয়া গেইল এলাওঁ বাতাসীর মাও হওয়ার কোনাে লক্ষণ নাই । কতায় কতায় উঞার শ্বশুরী উঞাক কয় ডিয়া কপালি । দিন যায় বাতাসীর শ্বশুরীর কতা আরও বাড়ে । বাতাসীরও মাঝে মাঝে মন খারাপ হয় এই নিয়া । বলরাম বুজির পায় বাতাসীর মনের কতা । বাতাসীর মনে পড়ে ঢাঙি আবাের কতা , ঢাঙি আবো মাজে মাজে উএক কইচে ডিয়া কপালি । বাতাসী ভাবে ছচাং কি উংয়ায় ডিয়া কপালি হইল নাকি ? এদি বলরাম একদিন বাতাসীক কয়— ‘ বাতাসী , এবার মুই দুই - এক মাসের জন্যে বায়রা যাইম , ভুটানত একটা ঠিকা কাজত , হাজিরা বেশি । ওটে থাকি আসিয়া দুইঝনে কুচবিহার যামু বড় দাক্তারেরটে , তুই চিন্তা না করিস সব ঠিক হয়া যাবে । একদিন বলরাম ভুটান চলি যায় । এদিনাত্তির পর নাত্তি বাতাসী একেলায় কাটায় । কত কতা ভাবে একেলায় একেলায় সারা নাত্তি । কদ্দিনে বলরাম আসিবে দাক্তারেরটে যাবে দুইঝনে । একটা ছাওয়া আসিবে উমার কোলাত , আরও কত কি ! হঠাৎ একদিন খবর আইসে ঢাঙি আৰাে মরিচে । বাতাসী খবর শুনিয়া আর চুপ থাকির পায় না । ডুকরি ডুকরি কান্দি ওঠে । ঢাঙি আবােক হারেয়া উঞায় যেনে মাউরিয়া হয়া গেইল । ঢাঙি আবো ছাড়া এই মরুচবাড়িত আর যে কাঞো নাই উএর আপন , বাতাসী বুজির পায় । এক পাকে ঢাঙি আবাের কতা আর এক পাকে বলরামের বাড়ি আইসার কতা ভাবিতে ভাবিতে নাত্তির পর নাত্তি কাটে উর । ভালেদিন হয় বলরামের কোনাে খবর আইসে না । চিন্তায় চিন্তায় বাতাসীর দেহা ভাঙি পড়ে । হঠাৎ একদিন খবর আইসে বলরাম ছয়তলা বিল্ডিং এর উপুরা থাকি বাশ ভাঙি পড়ি যায় । হাসপাতাল গেইতে গেইতে ঘাটাত মরি যায় বলরাম । বাতাসীর কপালােত নামি আইসে চরম দুঃখ । এই এতবড় দুনিয়াত বাতাসী এলা দেখুন একদম একলা হয়া গেইল । উয় ভাবে ঢাঙি আবাের কতায় বুজি সইত্য , ছচাং উয় ডিয়া কপালি । বলরামের মরার পর শ্বশুর বাড়িত থাকা এবার কঠিন হয়া উঠিল বাতাসীর । দিননাত্তি শ্বশুরীর কতা শুনি বাতাসী বুজির পায় না এবার কোটে যাবে উল্লায় । এই দুনিয়াত কোন জাগা আছে যেটে গেইলে খানিক শান্তি পাবে উএয় । মরুচ বাড়ি উঞায় আসিবে না , কাকা - কাকির ব্যবহার উঞায় জানে । শ্বশুর বাড়িত থাকাও এলা মুস্কিল , দিননাত্তি শ্বশুরীর কতা শুনি শুনি বাতাসী অস্থির হয়া ওঠে । যাবে বা কোঠে এই জুয়ান বয়সে একলা বিদ্যুয়া । নিজের মানষি যখন কাঞো উঞাক বুজিল না , তখন এই সমাজে কাক ক্যাং করি বিশ্বাস করিবে উঞায় । একদিন একটা খবর আইসে বাতাসীরটে । পাড়ার নরেন মাস্টারের বড় বেটা শিলিগুড়িত থাকে , বড় চাকরি করে । এবার বিয়াও করি বউ নিয়া গেইচে । একলা বাড়ি । একটা কাজের মানষির দরকার । কতাটা মনত ধরে বাতাসীর । হউক চাকরের কাজ , তবুও ওঠতে বসতে এইলা কতা আর সইহ্য হয় না বাতাসীর । বাতাসী চলি যায় শিলিগুড়ি । পাড়াপড়শি নিজের লােক সগায় খালি ডিয়া কপালি কইল উক । কাঞো কোনাে সমাধানের ঘাটা বির করি দিল না উক । উঞার এলা শিলিগুড়িত সাকাল সইঝা দুকুনা মানষির ভাত রান্দা , কাপড় ধােয়া । ১৫০০ টাকা মাস । এংকরি দিনের পর দিন কাটি যায় বাতাসীর । ধীরে ধীরে উঞায় সউগ কতা ভুলি যায় । জুয়ান বয়সেরটে হার মানে বাতাসী । কদ্দিন আর একেলায় থাকিবে ? ধীরে ধীরে বাতাসীর মন নয়া করি স্বপন দেখির ধরে । এই শিলিগুড়িত একদিন বাতাসীর পরিচয় হয় বামনহাটের মদনের সােদে । মদন শিলিগুড়ি থাকি কমলা কিনি বাংলাদেশ পাঠায় । ধীরে ধীরে বাতাসীর সরল মন মদনক নিয়া স্বপন দেখিবার ধরে । মদন কিন্তুক চেংড়াটা বেশি সুবিধার না হয় । উঞার আসল ব্যবসা হইল বাতাসীর ঢক সরল সাদা চেংড়িলাক ভােলেয়া শেষে উমাক তুলি দেয় দালালের হাতােত । এংকরি মেলা চেংড়িক উঞায় বেচে দেয় বাংলাদেশত । এবার বাতাসী উঞার হাতের নয়া শিকার । বাতাসী কিন্তুক বুজির পায় না মদনক । সরল মনে উঞায় মদনক ভালােবাসে । দিন যায় বাতাসীর স্বপন আর ভালােবাসা ঘন হয়া ওঠে । ওদি মদন মনে মনে ভালে দূর জাল পাতে । বাংলাদেশের এক দালালের সােদে মদনের কতা পাকা হয় । মদন আর এক দালাল শিলিগুড়ি থাকি বাতাসীক নিয়া যাবে বামনহাট । ঐটেখুনা লেনদেন হবে আর মদন বাতাসীর ভালােবাসা আর বিশ্বাসের টুটি চিপি দিবে । সব কতা পাকাপাকি হওয়ার পর মদন একদিন বাতাসীক কয়— ‘ বাতাসী তুই চল মাের সােদে , মুই বাড়িত তাের কতা কচুং , মাও সব শুনি রাজি হইচে । এলা তাের মর্জি । মদনের মুখত এই কতা শুনি বাতাসী নইজ্যা পায়া মাথা নিচা করি রয় । এক পতে । বাতাসী স্বপন সুখের কতা ভাবি বিভাের হয় মনে মনে । বাতাসীর মনের অবস্থা দেখি মদন মনে মনে কয়— এ মাল আর হাতছাড়া হবার নয় । মদন বাতাসীর সােদে বামনহাট যাবার দিন ঠিক করে । মদন বাতাসীক কয়— ‘ আদুঙ্কা বেলাটি তিনটার সমায় শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনােত আসিস ; মুই ঐটে রইম । বাতাসী কয় বুরঘর যদি কোনাে সুবিধা - অসুবিধার কতা কয়া যাবার না দেয় ? — ‘ আঃ কাজের লােকক কি মানষি কোনােদিন যাবার দিবার চায় , ছুটির কতা কইলে মালিকের কোনােদিন সুবিধা হয় না । মদন কয় ।। বাতাসী মনে মনে কয় য্যাং করি হউক উঞায় ছুটি নিবে । মদনের সােদে উঞয় যাবে । নয়া করি ঘর বান্দার স্বপন উএক অস্থির করি তােলে । সইঝার সমায় বাতাসী তপনের বউক কয়— ‘ ভাউজি , আজি মুই আসিয়া বছর পার হয়া গেইল । কদ্দিন হাতে বাড়ি যাং না । মনটা কেমন করে মাজে মাজে — ' বাতাসীর কতা শেষ না হইতে তপনের বউ কয় — সে কতা তাে হয় । তায় তুই ফির শ্বশুর বাড়ি যাবু , তাের শ্বশুরী— – না ভাউজি , মুই মরুচবাড়ি যাইম কাকার বাড়ি । – “ ঠিক আছে তায় যা । বেশিদিন নাগাইস না ফির । তপনের বউয়ের রাজি হওয়া দেখি বাতাসী হাসিয়া কয়— না ভাউজি , দুই দিনে ঘুরি আসিম মুই । তপনের বউয়ের মুখের ভিতি দেখিয়া বাতাসী ভাবে , কত সহজে মানষিলা বিশ্বাস করে মানষিক । এদি যাবার দিন আসি যায় । বিকাল চাইরটার সমায় টেরেন । বাতাসী নিজের কাপড় চোপড় একটা ব্যাগত গােছেয়া ভরায় । তারপাছােত তপনের বউক কয়া বিরি যায় এস্টেশন মুখে । বাতাসী এস্টেশন আইসে । মদন বাতাসীর বাদে বাচ্চে থাকে , উঞার সােদে আর একঝন । বাতাসীক দেখিয়া মদন আগে আইসে । মদনের সাথী কয়— “ মাইরি মদন মালটা দেখিলে বিদুয়া মনে হয় না । এমন জিনিস বেচে দিবু ! রাখি দে নিজের করিয়া । মদন কয়— ‘ ধৌর শালা সুন্দরী দেখিলে হবে , রূপ যৌবন নিয়া আমার ব্যবসা । – ‘ এ - বেচে দিবু যখন , তায় মালটা একবার চাকি দেখিলে কেমন হয় । – ‘ আসল কতা হইল , তাের মন নাগাইচে হােলােপােতাে । সবুর কর হবে বামনহাট অনেকখান ঘাটা । হবে সব হবে । বাতাসী বগল আইসে । মদন উঞার সথের লােকটাক দেখেয়া বাতাসীক কয়– ইঞায় মাের ব্যবসার সাথী । ইএও আজি কমলা নিয়া যাবার ধচ্চে । মদন বাতাসীক নিয়া গাড়ীত চড়ে । পাছে পাছে উঞার ব্যবসার সাথী । ভিড় বুলি জাগা না পায়া বাথরুমের বগলােত ব্যাগ থুইয়া বসি পড়ে বাতাসী । মদন আর উঞার সাথী বাথরুমের ভিতিরা কমলার বস্তা ভরায় । দুই - তিনটা বস্তা বাথরুমের বায়রাত থােয় । গাড়ী ছাড়ি দেয় । বাতাসী ভাবে যে স্বপন নিয়া আজি উঞায় বিরাইচে , সেটা আজি উঞার কপালােত ধরিবে কি না ? মনে পড়ে ঢাঙি আবাের কতা । ডিয়া কপালি নাম । এমন কত কতা ঝিৎ করি বসি ভাবে বাতাসী , ততখনে গাড়ী শিলিগুড়ি ছাড়ি অনেক দূর আসিছে । মদনের সাথী চকু টিপিয়া মদনক ঈশিরা করে । মদন বাতাসীর বগলত বইসে , পিটিত হাত সােত্তেয়া কয়— “ বাতাসী কী ভাবিস ? মন খারাপ না করিস , নিজের উপুরা বিশ্বাস রাখ , সগারে সব দিন সমান না যায় । কোনাে উত্তর না দেয় বাতাসী । খানিক নড়িচড়ি বইসে ঝিৎ করি রয় , আরাে বেশি করি যেনে ঘঘাটে দেখে উঞায় উঞার ভাইগ্যর দলিল । বেলা ডুবি যায় আন্দার হয়া আইসে । রেলগাড়ী পাহাড়ের বগল ঘেষিয়া চলির ধরিছে বামনহাট বুলি । বসিয়া ভাবিতে ভাবিতে বাতাসীর চকুত নিন আসি যায় । বসি বসি নিন যায় বাতাসী । মদন আর উঞার সাথী ফুসুর ফুসুর করি কি বা বুদ্ধি করে । গাড়ীর শব্দত উমার কতা কানত পড়ে না । দেখতে দেখতে গাড়ী ডামডিম দলগাঁও - রাজাভাতখাওয়া হয়া আলিপুরদুয়ার পার হয়া যায় । ততখনে বাতাসী সােন্তরার বস্তাত দেহা ছাড়ি দেয় । অচমকা বাতাসীর নিন ভাঙে । চকু মেলি দেখে বগলত মদন আর উঞার সাথী বসি আছে । বাতাসী জল খাবার চায় । মদন জলের বােতল বাকেরে দেয় , বাতাসী জল খায় । মদন আর উঞার সাথী দুইঝনে দুইঝনের ভিতি দেখিয়া মুচকি হাসে । জলত মেশা আছে নিন্দের বড়ি । খানিক পরে নিন যাবে বাতাসী , তারপাছে মদন আর উঞার সাথী দুহঝনে মিলি তলে উপরে চাকি দেখিবে বাতাসীক । ধু - ধু ডাবরি , আন্দার রাতি গাড়ী চলির ধরিছে কুচবিহার বুলি । বাথরুমের সামনার লাইট অফ করি দেয় মদন । বাতাসী নিন্দতে গ্যালগ্যালা । আগ পাছ দেখিয়া মদন বাতাসীক হাত ধরি তােলে । বাতাসীর হুশ নাই । মদন বাতাসীক নিয়া বাথরুম সােন্দায় । মদনের সাথী বাথরুমের দুয়ােরের আগপাকে বস্তা টানি আনি বইসে । মদন বাথরুমের ভিতিরা বস্তার উপুরা বাতাসীক হেলানী দিয়া থােয় । ধীরে ধীরে উএর বুকের কাপড় সারে দেয় মদন । বাতাসীক এই অবস্থাত দেখি মদনের ভিতিরার জানােয়ার । ফোপে ওঠে । মনের ভােগতে কানা মদন বাতাসীক জাপটে ধরে । মনের হাউস মিটিয়া মদন বাতাসীক তলে উপরে চাকি নেয় । বাতাসীর কোনাে হুশ নাই । মদন বায়রা বিরি আইসে , উঞার সাথী সােন্দায় । বাতাসী পড়ি আছে মরার ঢক । দেহাত কোনাে কাপড় নাই । গালে মুখে দাঁত বসে দিচে মদন । এমন দেখিয়াও মদনের সাথীর মনত দয়া না আসিল । মনের হাউস মিটিবার বাদে বাতাসীর উপুরা জাপটে পরে । এদিয়া গাড়ী দিনহাটা পার হয়া যায় । বাতাসীর ধীরে ধীরে হুশ আইসে । কিছু করির চায়াও কিছু করির পায় না বাতাসী । হাতে ঠ্যাঙে বিষ , নড়ের পায় না । দেহাত কোনাে কাপড় নাই , গালে মুখে দাত বসাইচে উঞার মদন আর মদনের সাথী । মদনের সাথী বাতাসীক শাসায়— “ চিরির চেষ্টা করিস না । খানিক পরে বামনহাট আসিবে , কাপড় চোপড় পিন্দি বসি থাক । বায়রা বিরিয়া মদনের সােদে বুদ্ধি পাকায় উঞার সাথী । ওদি বাথরুমত বসি হুকহুকি কান্দে বাতাসী , আকাশ পাতাল ভাবে । কী করিবে , কোটে যাবে ? কোনােয় পথ পায় না উঞায় । বাচি থাকার আর কোনাে ইচ্ছা নাই বাতাসীর । উঞায় জানে এবার উঞার ঠিকিনা কোটে হবে । বাতাসী মনে মনে ঠিক করে এ জীবন আর বাচে রাখি । লাভ কি ? মরায় ভাল । মনে পড়ে বাতাসীর ঢাঙি আবাের কতা — তুই চেংড়িটা ছচায় ডিয়া কপালি হের— বাতাসী মন শক্ত করে , তারপাছত বাথরুমের ভাঙা জানলা দিয়া বায়রা দেখে , ঘুটঘুটা আন্দার উর জীবনের ঢক । বাতাসী দুই চকু মুজিয়া আরও ভাবে বামনহাট পংছিলে কী হবে ? একতা ভাবি বাতাসীর দম বন্ধ হয়া আইসে । চিকিরিয়া কী হবে ? লােকজন আসিবে উঞাক বাকেরে নিয়া যাবে । দুই - তিন দিন হাসপাতাল আর থানা— ঐ পইয্যন্ত । কারণ বাতাসী জানে ভাল থাকতে যে সমাজ উঞাক বােজে নাই আজি এই ঘটনার পর সেই সমাজ যে উএক কী দিবে বাতাসী সেটা বুজির পায় । উঞায় মানি নেয় এইটায় আছিল উঞার কপাল । যেটা উার কোনােদিন বুজির না পায়া খালি স্বপন দেখি গেইচে । মনে পড়ে ঢাঙি আবাের কতা— ‘ তুই চেংরিটা ডিয়া কপালি হের । বাতাসী একেলায় কয় — ক্যা ঢাঙি আবাে মােক ডিয়া কপালি কইচে ? তা হইলে ঢাঙি আবাের কতায় কিসইত্য হইল । ঢাঙি আবো তাের ডিয়া কপালির দুঃখ আজি থাকি শ্যাষ । কয়া বাতাসী বাথরুমের জানেলা দিয়া , চকু বন্ধ করি ঝাপ দেয় । লাইনের বগলের কারেন্টের খুটিত ডাঙ খায়া ছিটকি যায় বাতাসীর দেহা । শেষ হয় ডিয়া কপালির কতা । গাড়ী পংছি যায় বামনহাট । সব মানষি নামি যায় । লঙ্গি আর হাটু ধ্যাতরা পাঞ্জাবী পেন্দা , মাথাত সাদা টুপি , গাঞ্চা ঘাড়ত তিনঝন মানষি আইসে মদনের বগল । একঝন কয়— ‘ মাল কোটে । মদন উএক নিয়া বাথরুমের দুয়াের খােলে । বাথরুম খালি । জানলাত আটকি আছে । বাতাসীর ব্লাউজ । ব্লাউজ হাতে নিয়া মদন চুপ করি রয় । তিনঝনে বড় বড় চকু করি মদনের ভিতি দেখে । মদনের সাথীও চলি যায় ঐ মানষিলার সােদে । খালি গাড়ী চেক্ করতে করতে জি . আর . পি র দল বাথরুমের ভিতিরা মদনক দেখে ।

Post a Comment

Previous Post Next Post