ভাওয়াইয়ার শব্দ - বিনােদবিহারী বর্মা Bhawaiya's Word - Binadbihari Barma

ভাওয়াইয়ার শব্দ 
বিনােদবিহারী বর্মা 

সুরের গুরু সুরেন বসুনীয়া ( সুরেন্দ্রনাথ রায় বসুনীয়া ) ভাওয়াইয়া তথা কামতা বা রাজবংশী ভাষার ধ্বনির জোর আর মােক্ষম ব্যবহারের কথাৎ কইছিলে— ‘ নাউয়ের জাঙির তল দিয়া যাবার সমায় নাউ একটা নাকত নাগিলে বাংলাত কী কইবে ? কইবে— ‘ নেগেচে নেগেচে । তা কি ‘ নেগেচে ’ , কতজোকন জোরে ‘নেগেচে’ তাক বুঝির উপায় নাই । আর একঝন দেশী ( রাজবংশী ক্ষত্রি ) মানষির তেমন অবস্থা হইলে কী কমু আমরা ? কমু , ইস , নাউয়ের জাঙির তল দিয়া যাইতেকালে নাউটা হিট্টিলিস করি নাকোৎ নাগিল , মুইঞো একে ঠইস্যা খায়া পড়ি গেলুং । ভাওয়াইয়ার আর একঝন গুণী মানষি ধনেশ্বর রায় কয়— ডিগির জলত বটের ছােট ফল পড়ে টুপুলুঙ করি । মাঝারি আকারের ডাউয়ার ফল পড়ে টুপুলুঙ করি । আর ঢ্যাপলা সাইজের কাটোল পড়ে ঢাপালাঙকরি । উমরা কবার চায় টুপুলুঙ , টুপুলুঙ , আর ঢাপালাঙ ব্যবহার করা এই শব্দগুলার মধ্য দিয়ায় বুঝা যাইবে কি নাখান জিনিস কতজোকন জোরে জলত পড়িল । সাধারণত শব্দ কিবা আওয়াজ বুঝিবার তানে যে শব্দগুলা ব্যবহার করা হয় সেগুলাক ধ্বন্যাত্মক শব্দ কওয়া হয় । দোতােরার ঘুটুঙ - মুঙ , বিলাইর ম্যাও ম্যাও , ঝরির ছিপছিপতেমনে শব্দ । কিন্তু কোনাে কোনাে জাগাত ; যেটে আওয়াজ তৈয়ার হবার কোনাে সুযুগ নাই , তেমন ক্ষেত্ৰতও কোনাে জিনিসের বিশেষ অবস্থা , ধর্ম , আর কোনাে ক্রিয়ার গতি বা তেজ বুঝিবার বাদে যে ক্রিয়া বিশেষণ কিবা অব্যয় ব্যবহার করা হয় সেগুলাকও ধ্বন্যাত্মক শব্দর সুদায় একেটে গাথা হয় । যেমন ড্যাঙ - ড্যাঙকরি ঠ্যাং কাটি গেইলে গােলগােলেরক্ত বিরায় । তেমনে দাদুর চিটিং চাটাংচুলকানি , চ্যাংরা বন্ধুক না দেখিয়া জিগির - জিগিবমন , সেন্দুরের নেলভেলা ফোঁটা এইলাও ধ্বন্যাত্মক শব্দ । বাংলার থাকি রাজবংশী ভাষাত ধ্বন্যাত্মক শব্দর চাইল ভালেমাত্রায় বেশী । ঠিক জাগামতন মােক্ষম শব্দ ব্যবহার করার বেলাত আমার ভাষার জুরি মেলা ভার । আমার ভাষাত পুটুস করি বিন্দি ফোড়ায় , ভুটুসকরি ডুরি ছেড়ে , পাট্টাসকরি থাপ্পড় মারে আর ফাট্টাসকরি বন্দুক ফোটার কথা কইলে ক্রিয়ার মাত্রা বুঝিবার কোনাে অসুবিধায় না হয় । রাজবংশী ধ্বন্যাত্মক শব্দর আর একেনা বিশেষ গুণ হইলেক এই শব্দগুলার ফাইভাগােতে শব্দর মইধ্যত কি শ্যাষত থাকা ব্যঞ্জনবর্ণ দুইবার উচ্চারণ হয়া শব্দর আইট বা জোর বাড়ায় । যেমন—
নদীর কাছারের মতাে ভাঙিয়া পড়ে বুক
আবাে, হিড়িডিং (হিড়িং) কি হাড়াড়াঙ (হাড়ং) করিয়া। অথবা,
ভাদোর মাসি দেওয়ার ঝরি টাপ্লাস (টাপাস) কি টুপুস (টুপুস)
কি টীপপাউ টাপ'পাউ (টাপাউ) পড়ে রে।
কোনাে কোনাে সময় একে শব্দক দুইবার কি তার থাকিও বেশীবার ব্যবহার করি ধন্যাত্মক শব্দ তৈয়ার
কোরর ড্যাডেং, ড্যাডেং ড্যাংকরকা বাজে তালে তালে
‘বাক বাক বাকুম কুম-কুম, আদার খাইলে পায়রা যায়রে উড়ি’
কাটোঙ কাটোঙ ড্যাঙরে কাটোঙ’
‘ঘষর-ঘষরহলদি বাটোঙ।
ফির কোনােও সমায় মূল শব্দর পাছােত খানেকটা সেই নাকান শব্দ জোড়া দিয়া তৈয়ার হয় শব্দ
ফাসার-ফুসুরকরে বিয়ার কথা
হােলােক-সােলােককরে মন মাের যাবারে না চায়।
আজিকার উত্তরবাংলা আর বগলের বাংলাদেশ, আসাম, বিহার, নেপালের রাজবংশী ক্ষত্রি
আর দেশী মুসলমান মানষিগিলার প্রাণের গান ভাওয়াইয়া হইলেক এই অঞ্চলের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির
দামি খনি। এই ভাওয়াইয়ার ভাষাত আমরা অষেবার চাই রাজবংশী /কামতা ভাষার কতক ধ্বন্যাত্মক
শব্দক যেগুলার কারণে ভাওয়াইয়ার মান আর সৌষ্টব বাড়ি গেইছে। অবশ্য ভাওয়াইয়ার মধ্য
চটকা সুরের গানগুলাতে ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলার ব্যবহার বেশী মানানসই। ভাওয়াইয়ার তেমন কতকগুলা
ধ্বন্যাত্মক শব্দ-
নদীৎবান আসিলে—
কলকলেয়াযায় পানি ভাই খাল খন্দর দিয়া
রে ভাই এবার বান্দো ভুরা।
কোচোর মােচোর পালঙ্কের শব্দ-
পাশ ফিরিতে মরার পালং ক্যারেরে কি কোরােরােৎ
কি কারাউ কারাউকরেরে।
কুকিলার কান্দোন শুনি উমলি উঠে মন—
কুকিলা ময়নারে কুহু কুহুতুই আর কান্দিস না।
সরু সুতার বান্ধন আর যৈবনের বান্ধন
সরু সুতার বান্ধোন যেমন রে কির কিরকরিয়া বইসে
ঐমতন মাের নারীর যৈবন দিনে দিনে ঝরে রে।
করকার বাইজনে চটকি উঠে মন-
ক) করকাখান না করে কোরােৎ
মাের মনটা না রয় ঘরাে।
খ) কোরাে কোরােৎ করকা বাজে
আয় বৈরাতি ঘরােৎ নাচে
পলটু দাদার বিয়াও হয়, মাের ক্যানে না হয়।
গ) কোরর ড্যাডেং ড্যাডেংড্যাং
করা বাজে তালে তালে
এক পাইসা নাদিম ঢাকুয়ার শরম খাইলে।
ভাটির পর সমাই-
বউ জোড়াইচে খােলা
বউয়ের পিটিৎ কি ছাওয়া, চাম চিলকা ছাওয়া
সে ছাওয়াক— বাপও না নেয় কোলােৎ মাওও না নেয় কোলাে
কুটুস করি কামড়ে ধরিল বুড়া দাদার গালােৎ।
আমের পাত খসখসা—
আমের পাত খসর-মসরতিতিলির পাতা সরু
মুই না শামটোং বায়রা খােলান তােমরা নড়ান গরু রে
চালের বাতার গুতা খায়া অচমকা বন্ধুর কথা ফম আইসে—
খাককাউকরিয়া নাগিল চালের বাতা
হুকুকরিয়া উঠিল বন্ধুর কথা
কাণ্ড দেখি ভাসুর গালা খ্যাকারি দেয়—
খুকুৎকরিয়া ঘরােৎ ভাসুর কাশে
বড় দাদাক খবর দেঙ তাও না আইসে।
হাটু জল পার হবার সমায়-
হাটিয়া যাইতে দোলার পানি খালাকি খুকুলুঙ
কি খাললাউ খাললাড করে রে,
হায় হায় প্রাণের বন্ধুরে।
দাদা আইসে নাইওর নিবার - সমায় নাই বেশি –
এ্যাক বােতল ত্যাল গ্যাসে করি মাথাৎ দিনু ঢালি
ত্যাল মাখিয়া সিতা পাড়িয়া খােপা বান্ধিনু তুলি।
বিয়ার পরে বাপের বাড়ি ছাড়ি যাবার কালে
গাড়ি ছাড়ি দিলেক রে, গির গিরকরিয়া
বাপ মাওয়ে বিদায় দিলেক ঐনা কান্দিয়া কাটিয়া।
নাটকাচালির ছেড়ির কতােয় গুণ-
গাটাম-গুটুম দেহার গড়ন ভাল মাগুর সান
মুচকিমারা মুখের হাসি মাের ভুলাইচে মন।
হাড়িয়া মেঘের বর্ষণ আইসে অচমকা
আড়িয়া মেঘা হাড়িয়া মেঘৎ, আড়িয়া মেঘার নাতি
গিসিআইসে দেওয়ার ঝরি হে।
পাগলি নিজের খেয়ালে হাসে, নিজের মনে চলে
পাগলির কিবা উঠিল মনােৎ
খড়ির বােঝা ধরি পাগলি বেড়ায় গােমােদ গােমােদ ।
অভাবি সংসারােৎ দুই মাইয়ার ক্যাচাল
বড় মাইয়াটার গােদোর গােদোব, ছােটটার ঝনঝনি
খাইতে দিতে থ্যারেৎ-থােরােৎ, রাইতে টানাটানি রে।।
বাইজে ভাণ্ডারে আইসে বর—
বাইজ পড়ে মাের গামার -গুমুর নােকরা বাড়ি থানা
বরে পুছারি করে কইঞা কতকোনা!
অভাবি সংসারােৎ নাই ভাত, নাই কাপড়, সেই রাগে-
রাগােতে মাথার চলােক জট সাজাইচোঙ
একেনা কাপড় সার করিচোঙ
খালি মধু মাের কথাতে গেল গেল।
বাইষ্যার সমায় নওদারিটা থাকিলে—
আসিলে বাইষ্যা কাল মাছ মারি আসিলুঙ
নওদারিটা থাকিল হয়, বগলােতে বসিল হয়।
বটি দিয়া মাছ কাটিল হয় ঘঞ্চেৎ-ঘােচ্চোৎকরিয়া
সাইটোল পূজার সমায়—
কাটোও কাটোঙ ড্যাঙেরে কাটোং
ঘষর-ঘষরহলদি বাটোঙ।
ছাইতন কাষ্ঠের দোতারা বানেবার সমায়-
ছাইতন কাটিয়া ঘষিয়া মাজিয়া
তােকে বানালু রে
ও মাের দোতােরা খুটুক-টক খুটুক টুককরে রে
যেমন চালকি চান্নানি (চারালনী ) তেমন তার মাছ
বনুরে, মাছ নিবু নাকি
নয়া চান্নানির মাছ চলচলা পুঁটি
রঙ-চঙা নয়া শাড়ি পিন্দাইয়া নওদারি নাই—
নওদারিটা থাকিল হয়, নয়া শাড়ি পিন্দিলেক হয়
পাচোৎ হাটিল হয় চিলিলিৎ কি চালালাৎ করিয়া।
রউদ উঠিলে দাদুর (দাদ) চুলকানি –
ওরে শালার দাদু,
চিটিঙ-চাটা চুলকানিতে, তুই করিলু মােক কাবু।
চটকদারি কইঞার সউগ ছাড়িনু -
চিল্লি-চিল্লিৎমুখের হাসি, মাের করিলু সর্বনাশী
বাড়ি ঘর মাের মনােতে না খায়
বন্ধুক না দেখিয়া
বনপােড়া হরিণের মতাে মনটা ক্যানে ছটফটায়। নিন্দের ঘােরে বন্ধু বগলােৎ নাই, ফমে
থাকে না
নিন্দের আলিসে, হাত পড়ে বালিসে
মনে করােও বুঝি বন্ধু আছে।
চ্যাতন হয়য়া দ্যাখাে, বন্ধু নাই বগলে
বুকখান মাের ছাচ্ছ্যাঙা হইচে।
—ছিপছিপানি বর্ষণৎ আসিলেন বিনােন?
ঝরি পড়ে ছিপ ছিপ বিনােন, মলেয়া তলায় বাও
ঘরের পাছিলাৎ মানার পাত রে বিনােন, কাটিয়া মাথায়।
বরণের সমায়--
এ-বাড়ি হাতে ও-বাড়ি গেনু ঘাটায় ছিপ ছিপ পানি
বরের ভিজিল ধুতি রে পাহরা, কইঞার ভিজিল শাড়ি রে।
সাইঞার সমায় জলের ঘাটোৎ
নিঝুম ঘাট বিজন ঘাটা গাও ছম ছম করে
কি ঘটিতে কি যে হইবে বুক হুম হুম করে
ডুব-ডুব সারে বেলা কোন বেলা কি হয়।
বৈশাখের বসন্তের কালে—
হায় রে কুরুয়ায় করে রাও
রসিয়া বন্ধুক না দেখিয়া ঝমঝমায় মাের গাও।
বৈকালির হাওয়াত-
ঝিরি ঝিরি বাতাসে উড়িয়া আইসে বন্ধুর বাগানের ফুলের বাস
মন মাের করে উসপাস।
আন্ধারি রাইতােৎ গােলগােলা বর্ষণের সমায় এ-ঘর থাকি ও-ঘর যাওয়ার বিড়ম্বনা
একে তাে আন্ধারি রাতি, পুবাল হাওয়াত নিবিল বাতি
ঝমঝমেয়া পড়ে দেওয়ার পানি।
চিন্তায় চিন্তায় চোপর রাত্তি নিন নাই রাইত কাটে ঝেচুর কান্দোন শুনি
ঝেকেতােল ঝেকেলে করে ঝেচু, কুকিলায় করে রে রাও
ঢালকাউয়াটা উঠিয়া কয়রে রাতি পােহাও রে পােহাও।
মন মাের হাবিল—বিবিল করে থাকো একেলা ঘরে
চোপাের রাইতে উঠোঙ - বইসোেঙ নিন্দে না ধরে।
ময়নামতী ডাকেশ্বরীক বুঝান দেয়—
গােসা না হইস মনটা
শােনেক আসল কথাটা
ঘুরি আসুক বছরটা, তােক সাজাইম ঝলমলা-
ত্যালেঞ্জ ত্যালেও ভাউজির—
হাতভরা পিতলের চুড়ি, বাজে ঝুমুর ঝুমুর করি
শাড়ি পিন্দিচে আঁচল ছাড়িয়া।
ভাদোর মাসি দেওয়ার ঝরি টাপ্লাস কি টুপ্লস
কি টাপাউ টাপাউ পড়ে রে
হায় হায় পরাণের বন্ধুরে।
ভাদর মাসে
ব্যাঙ কান্দে টোরােৎ, বচিধানের গােড়ােৎ
থেবগে থুনু পিড়াখান কামরাঙার গােড়ােৎ।
ঢােলকরকা সুদায় বাজে বাঁশি বাজে সানাই
বাঁশি করে টেঙ টেঙ
কতদিনে মুইঞ বাইর হঙ
সানাই দুইটা করে পঞ্চ রাও।
ভাসুর শ্বশুর মাছ মারে রুই আর কাতলাপানিয়া মরা মাছ মারে চান্দা আর ধুতুরা—
ভাসুর শ্বশুরের মাছ কোটোও বটিতে ফেলেয়া
পানিয়া মরার মাছ কোটোঙ রে টেবগেয়া নেবগেয়া।
কোরার কান্দনে মনের দুঃখ বাউরি উঠে—-
কোরা কান্দে ডুক, মনােৎ নাই মাের সুখ
না কান্দিস না কান্দিস কোরা
কোরা রে তাের কান্দোনে 'ভাঙে বুক।
ছাওয়া বড় হইলে ঘর খালি করি সােয়ামীর বাড়ি য়ায়—
কালার নাকান বলুলুঙ
ঘর ভােঙ ভােঙ করুলুঙ।
দোতারা সাজ করি যেলা চিতান তুলি দেওয়া হয়—
দোতােরা বানেয়া কানও না সাজেয়া
ঘােড়া না বানালুঙ রে—
ও মাের দোতােরা চিতান দিনু তুলিয়া রে
ও মাের দোতােরা ডােলােভােঙ ডােলােডােও করে রে।
বাপের বাড়ি যাবার বাদে গয়নার বায়না- কি ব্যাচে কিনা যায় ?
ঢলােমলাে কলার গছ কলা ঝােকা রে ঝােকা
সেই কলা ব্যাচেয়ারে সাধু, কিনিয়া আনেন শাখা।
দারিদ্রা মরদটা খাবার সমায় আর কারও কথা ভাবেনা-
খাবার বসি টের না পায়
খাইল কি না খাইল বউ ছাওয়ায়
ঢোকলােস ঢোকলােস জল খায়।
ঢেকুস ছাড়ে লম্বা গলায় মাের মরদটায়।
নলের থােপােৎ বসি থাকে বুড়া বাঘ—
নলবাড়িখান দলােমলাে ওটি বাঘের ভয়
তােমরা ক্যানে আসিলেন বন্ধু মুই েগেনু হয়।
গােলামের চ্যাপ্টা নাটির ডাঙে
পিটি ফাটি মাের রক্ত বিরাইল দরদর করিয়া
গােলাম ডাঙালু রে।
পরার বাড়িৎ ধান উসা, ভুকা কতাে কামাই—
ধান ভুকাও মুই দিঙ দিঙ দাও দাও
দেহাৎ উঠিল হাপানি
মনের দুঃখ না বােঝে মাের শ্বশুরী ।
বৈদেশে থাকা বন্ধুর কথা ভাবি ভাবি—
নিন না ধরে কানা চউখে রে
মাের কইলজাটা ধড়ফড়ায়
বিয়ার বাদে মনটা খুলবুলায়, কিন্তু পাছের কথাও তাে ভাবা খায়-
মনটা ক্যানে বা মাের ধুকধুকিয়া রয়
বিয়াও করে তার পাছা বা কোন জটুরা হয় ?
বন্ধু কি মােক সচায় ফাকি দিলেক—
মনটা ক্যানে-বা মাের ধুকধুকিয়া রয়
বুকখান ক্যানে-বা মাের ধকপকেয়া রয়
ছাড়িয়া গেইছে প্রাণের বন্ধু আর বুঝি আসিবার নয়।
প্রেমের আগুন জ্বলে তুষের আগুনের মতাে—ভিতিরায় ভিতিরায়-
প্রেমের জ্বালা বড়য় জ্বালা মন ধিকি ধিকি জ্বলে
প্রেমের জ্বালায় নিন ধরেনা পাছা রাইতােতে।
ফ্যাসােঙের গােগাে প্যান পিন্দিচে চেরা-চেঙরিগুলা সেই কালাে—
গাে গাে করে নাটার-পাটার রে গাওৎ নাইরে ছাল
চেঙরা-চেঙরির ঘুম ছাড়ি গেইল সাজিয়া বিটকাল।।
বারাে ঢিং কই ঢঙে সার, তাের জোড়া পাওয়া ভার
তুই ন্যালেয়া ন্যালেয়া হাটিস না
তার ঠমক চলন দেখিয়া, তাের বন্ধু গেইসে ছাড়িয়া
তুই কইন্যা হলু একেলা।
সতী নারী মুইঞ, নাইওর যাবার কালে—
আলতা সােনাে পাউডার দিনু আয়না হাতে নিয়া
কাম সেন্দুরের ফোটা দিনু কপালােৎ নেলভেল করিয়া।
নাউয়ের জালির নরম বাছা মাের বাতাসােতে হেলি পড়ে
নােসর পােসাের করে বাছা মাের রাজহংসার পালা।
রাইত হইতে মশার উপদারি—
মণ্ডলের মাও, আগুন জ্বালাও
মশা মারি, পােন পােন করে
বিয়ার সানাইর বাইজোনত অকুমারি কইঞার মন যায় আউলিয়া
ও বিয়ার সানাই রে
পোঁ পোঁ পোঁ করিয়া সানাই বাজিস না রে।
মুইঞ ঢ্যানা চাইরাে পাকে বিয়ার আল্লাদ, মাের কপালােৎ বিয়াও নাই—
আশা পড়শীর বাড়ি যাও, কোন ঠাই মুই যুত না পাঙ
ফাসার ফুসুর করে বিয়ার কথা
চিটুল বিধুয়া মুই, মাের ভিতি সগারে নজর
রাতি হইলে পাছিলা বাড়িৎ ঢেপেরা আজু ফসফসেয়া কয়
বুড়া বয়সে তােক দেখিয়া রে, নিবার মনটা যায়
যদি কাইনােৎ বসিলু হয়।
সুখের পায়রা আদার খাবার পরে যায় রে উড়িয়া
বাক বাক বাকুম কুম কুম পায়রা খুরিয়া রে খুরিয়া
আদার খাইলে পায়রা যাইবে রে উড়িয়া
রসিয়া বন্ধুর ঢােলের বাইজন—
বাকুম কুমা বাকুম কুমা ঢােলের বাজানা
মুই যে অবলা নারী মমার মনটা মানে না।
রাজার বেটিক বিয়াও করাচুঙ মাের আর কি কামাই? খালি—
ঢুলকি বাজাঙ টেঙ-টেঙ চাউল সুযুক পাঙ
রাজার বেটি ভাত রান্দি দেয় মাকার-মুকুর খাও।
আষাঢ়ী দেওয়ার ঘন কালাে মেঘ বাতাসে দমকে তােলে হুরকা—
দেওয়ায় কইরচে মেঘ-মেঘালি তােলাইল পুবাল বাও
ধীরে ক্যানে বাওয়াও তরী হে।
ফাল্লাৎ ফাল্লা বৈশাখী দেওয়ার হুমাও-এর সুদায় পড়ে নয়া জল
শন শন শন বাও শােয়ারি
ডােকোরে দেওয়া মাটি পড়ি
ঝমঝমেয়া আসিল ঝরি, বিছিনা ভিজি বাওছিটায়
ত্যাঙ সােনা মাের মাছােক যাবার চায়।
ঝগরি বৌ ঝাঙঝাঙায়,সউগ সমাই—
ঝগড়া করিস দুইবেলা
ত্যাঙ ভাঙে না তাের গালা।
আছেড়ে ভাঙিস ভাড়া খােড়া, শুনা না যায় ঝনঝনি।
তাের শনশনিতে শােনা না যায় ঝনঝনি।
পইলাবার শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় মনৎ জাগে কত ভয়; হাত-ঠ্যাঙ শিলা হয়া যায়—
সুরসুরায় হাত সুরসুরায় পাও, সুরসুরায় মাের হিয়া
যাইম কেমনে শ্বশুরবাড়ি ও, আবাে ঘােমটা মাথাৎ দিয়া
নয়া কইঞা সাজিয়া।
দোলাবাড়ির ঘাটাৎ সরঞ্জার কাটা, শাড়ি তুলি ধইরলে কুকতি শােন্দায় ভিতিরা—
গাও সুঙসুষ্ঠায় ফির তিরিং-তিরিং সােন্দায় ফড়িঙ গার ভিতিরা
গােটা গাও ভাসি উঠে সুসুঙির সুরসুরি
আববা হে, ক্যাঙ্করি যাও বন্ধুয়ার বাড়ি।
নয়া বৌ ধান ভুকায়—
চাউল শকশকা করিলেক বৌ আধামরা হয়।
ওরে তুষখুদিতে রইলেক চাউল আধা কুটা হয়।
তােলা মাটি কলার মতন মাের যৈবন পল পল করি বাড়ে-
তােলা মাটির কলা যেমন রে লােকা হল হল করে
ঐ মতন মাের নারীর যৈবন দিনে দিনে বাড়ে রে।
ডব ডবা নাপা শাক দিয়া পুঁটি মাছের ঝােল
হাপ্পা হাপা নাপা শাক ফেলেঙ নদীর পানি
দোলা বাড়ির পুঁটি মাছ রসুন তেলানি।
আষাঢ়ি দেওয়ার গির্জন
দেওয়া হিড়হিড়াইস না গিড়-গিড়াইস না
বর্ষির্স ধারে
মাের নারীর পুত্র আইসচে যাউক ভালে ভালে।
ভাসুর শশুর মাছ মারে রুই আর কালাে, ভাবের দেওরা চন্দন কুরসা আর পরনীয়া মরা মাছ মারে
চান্দা আর ধুতুরা। যারটে যেমন পাঙ-তাক তেমনে তাে আদর যতন করিম
ভাসুর শ্বশুরােক খাবার ডেকাঙ জোর হাত করিয়া
ভাবের দেওরাক খাবার ডেকাঙ চউক ইশিরা করিয়া
পানিয়া মরাক খাবার ডেকাঙ হেটেলেয়া হেটেলেয়া।
এই ধ্বনি মাত্রার শব্দগুলা ভাওয়াইয়ার তাল, ছন্দ, আর চলার ঘাটাৎ ফুলের মালা
পেয়াে ভাওয়াইয়ার শােবা বাড়াইচে।
ভাওয়াইয়া লেখাইয়ার ঘর আলাউদ্দিন সরকার, প্যারীমােহন দাস, হরিপদ দে সরকার,
শ্যামাপদ বর্মণ, ধনেশ্বর রায়-এর মতাে মাত্র কয়ঝন ছাড়া যার নাম হামরা জানির পাইনা,
সুগারে জন্যে মাের দণ্ডবৎ।

Post a Comment

Previous Post Next Post