ভাওয়াইয়া গান ও রাগ রাগিনী। ভাওয়াইয়া এলাকার বিভিন্ন জাতি ও ভাষা। bhawaiya Race and language

ভাওয়াইয়া গান ও রাগরাগিনীঃ
বৌদ্ধ গান ও দোহা (হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সম্পাদিত) বাংলা ভাষায় রচিত সর্ব প্রাচীন রাগ রাগিনী সংবলিত পুঁথি। এ গ্রন্থটি খ্রিস্টিয় ১২তম শতাব্দীর পূর্বে সংকলিত হয়েছিল। এতে বাংগাল রাগ নামে একটি রাগের উল্লেখ আছে। তার রচয়িতা ছিলেন “ভুসুক" আর এই ভুসুক ছিলেন আমাদের বাংলাদেশের অধিবাসী এবং বংগাল রাগই ভাওয়াইয়া নামে অনুমেয়, আবার অনেকে তা বিশ্বাস করেন না। যদি বংগাল রাগ ভাওয়াইয়া হয়ে থাকে তাহলে ভাওয়াইয়ার জন্ম ১২শ শতাব্দীর পূর্বে। আবার আমরা যদি একটু গভীরে চিন্তা করি তাহলে দেখবো ১২শ শতাব্দীতে হয়তো রাগটি লিপিবদ্ধ হয়েছে। ঐ সময় ভাওয়াইয়ার জন্ম তা বিশ্বাস যোগ্য নয়। কেননা আমরা বিভিন্ন জাতি ও ভাষার আলোচনায় দেখবো ভাওয়াইয়া তারও অনেক আগে উৎপত্তি হয়েছে। অনেকে মনে করেন বা ধারণা করেন যারা ভাওয়াইয়া গান করেন, তারা কোনও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বা রাগ রাগিনীতে বিশ্বাসী নন অথবা তাদের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত দরকার হয় বা তারা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বোঝেন না। আসলে তা ঠিক নয়, ভাওয়াইয়া গানে বিভিন্ন রাগ রাগিনীর মূর্ছনা, তাল, পাকড়, মীড় ও গীটকরী যথেষ্ট প্রয়োজন।

ভাওয়াইয়া এলাকার বিভিন্ন জাতি ও ভাষাঃ
ভাওয়াইয়া সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে ভাওয়াইয়া অঞ্চলের আদি জাতি ও ভাষা নিয়েও আলোচনা করা দরকার। কেননা ভাওয়াইয়া গানে এমন কিছু ভাষা লক্ষ্য করা যায়, যে ভাষাগুলো বিশেষজ্ঞদের মতে বিভিন্ন জাতির ভাষা থকে উদ্ভব হয়ে এ এলাকার ভাষায় পরিণত হয়েছে। শ্রী হেমন্ত কুমার বর্মা “কোচবিহারে ইতিহাস" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। পাঞ্জাবের শৈবালিক পৰ্ব্বতে প্রস্তুরিভূত সামুদ্রিক প্রাণীর যে কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়েছে তা দ্বারা পণ্ডিতগণ এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন যে ভারতবর্ষ সহ আমাদের এই ভাওয়াইয়া এলাকা সমুদ্রগর্ভে শায়িতা ছিল। ক্রমশ সিন্ধু গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, নদনদী সমূহ ও তাদের উপনদী যমুনা, শোণ, গণ্ডাক, করতোয়া, মহানন্দা, তিস্তা, ধরলা, তোর্ষা, শংকোচ, দুধকুমার, ফুলকুমার প্রভৃতি হিমালয় হতে প্রস্তুর বালুকা ও কদমরাশি বহন করে এনে এই ভারতবর্ষ সৃষ্টি করেছে। নব সৃষ্ট এই উৰ্ব্বর ভারতভূমি যুগে যুগে মানব জাতির আদি জন্মভূমি, মধ্য এশিয়া হতে দলে দলে একের পর এক অন্য জাতিকে আকর্ষণ করে এনেছে।

অস্ট্রিক জাতিঃ
 এমনিভাবে ভারতের উত্তর পূর্ব প্রান্ত দিয়ে অস্ট্রিক বা অস্ট্রলয়েড জাতি সর্বপ্রথমে ভারতে প্রবেশ করে বসবাস করতে আরম্ভ করে। তারা ছিল কৃষ্ণকায় জাতি। সাঁওতাল, কোল, ভিল, প্রভৃতি জাতি অস্ট্রিক জাতির বংশধর। তারাই কৃষিভিত্তিক সভ্যতার পত্তন করে। এরাই ভারতবর্ষের আদি জনগণ। এদের সবাই কালক্রমে অন্য জাতির সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে যায় এবং তাদের ভাষাও সর্বভারতীয় ভাষায় অনুপ্রবেশ করে। কুড়ি গণ্ড, গণ, গুড়ি, গুড়া, খাখা, বাখারি, বাদুর, কানি (টুকরা), ঠেঙ্গ (পা), ঠোট, পাগল, বাসি, ছাঁচ, ছাতলা, ছোঞ্চা, কলি (চুন), ছোট, পেট, খাস, ঝাড়, ঝোড়, ঝোপ, ডোম, চোঙ্গ, চোঙ্গা, মেড়া (ভেড়া), বোয়াল (মাছ), করাত, দা, দাও, বাইগণ, পগার (জলের গর্ত), গড়, বরজ (পানের বরজ), লাউ, লেবু, কলা, কামরাঙ্গা, ডুমুর, পুণ্ড, পৌ, তাম্রলিপ্ত, তাম্রলিপ্তি, গঙ্গ, বঙ্গ, কপাগ, (দাগজল), চেনকি, চেঁকি, মোটো, মোটা, ধান, জাম্বুরা, হলুদ, সুপারি, ডালিম, কর্পাস, কর্পট, কম্বল, বান, ধনু, পিনাক, কাক, কর্কট, কপোত, গজ, মাতঙ্গ, গণ্ডার, ডোঙ্গ, লিঙ্গ, প্রভৃতি অস্ট্রিক ভাষার শব্দ। এ শব্দগুলোর কিছু শব্দ পরবর্তীকালে সংস্কৃত ভাষাতেও প্রবেশ করেছে। সর্বভারতীয় জনগণের মধ্যে পাতলা কাল রঙ্গের জনগণের উপস্থিতি এবং সর্বভারতীয় ভাষার মধ্যে অষ্ট্রিক শব্দের উপস্থিতিতে ইহাই প্রমাণিত হয় যে ভারত উপমহাদেশের জনগণের মধ্যে অস্ট্রিক জাতির ও ভাষায় মিশ্রণ হয়েছে।

দ্রাবিড় জাতিঃ
 ভারতবর্ষে অস্ট্রিক জাতির আগমনের পর প্রায় পাঁচ হাজার বৎসর পূর্ব পামির মালভূমির নিম্নদেশ হতে, ভারতের উত্তরপশ্চিম গিরিপথ দিয়ে দ্রাবিড় জাতি ভারতে অনুপ্রবেশ করে সিন্ধু উপত্যকায় সুপ্রাচীন কৃষিভিত্তিক সিন্ধু সভ্যতা বা দ্রাবিড় সভ্যতা গড়ে তোলে। মহেঞ্জাদেরো ও হরপ্পায় প্রাচীন দ্রাবিড় সভ্যতার বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে। এরও পরবর্তীকালে সর্বভারতীয় জনগণের মধ্যে মিশ্রিত হয়েছে। এদের ভাষাও সর্বভারতীয় ভাষায় অনুপ্রবেশ করেছে। জোলা, গদ্দি, হাদা, কুণ্ড, কণ্ডি, ডা (হাওড়া), গুড়ি (শিলিগুড়ি), জুলি জোল, ভিটা, কুণ্ড, উড়, পুর, কুট (নগর), কর্মার (কামার), রূপকলা (চারশিল্প), কপি, মর্কট, ময়ুর, ব্রীহি (চাউল), পূজা, পুষ্প, শিবন (শিব), শেম্ভ (শ), অনু, অরণি, কাল, কিতব, কুনার, গণ, নানা, নীল, পুস্কর, পূজন, ফল, বিল, বীজ, রাত্রি, অটবী, আড়ম্বর, খড়গ, তহুল, মটকী, বলক্ষ, বল্লী, ঘোটক, প্রভৃতি, শব্দগুলো দ্রাবিড় শব্দ। এই দ্রাবিড় শব্দ গুলোর কিছু শব্দ সংস্কৃতেও প্রবেশ করেছে।

আর্য জাতিঃ
 দ্রাবিড় জাতির ভারতে আগমনের পর প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে মধ্য এশিয়ার ককেশাস ধ্বতের সানুদেশ হতে আর্য জাতি ভারতের উত্তর পশ্চিম গিরিপথ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। তারা যাযাবর জাতি ছিল এবং ঘোড়া পুষতো ! দ্রাবিড় জাতির ঘোড়া ছিল না। আর্যগণ ঘোড়ার সাহায্যে যুদ্ধ করে দ্রাবিড়দিগকে পরাজিত করে ও বিতাড়িত করে সিন্ধু, গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী বিধৌত অঞ্চলে বসবাস আরম্ভ করে। দ্রাবিড় সভ্যতার তুলনায় আর্য সভ্যতা নিম্নমানের হলেও আর্যগণের বৈদিক ধর্ম, সাহিত্য ও দর্শন উন্নততর হওয়ায় ভারতীয় জনগণ আর্য ধর্ম ও সংস্কৃতি সাগ্রহ গ্রহণ করতে থাকে। আর্যগণ ছিল গৌরবর্ণ । তাদের মুখ বাদামী আকারের, নাসিকা উন্নত, চক্ষু বড় এবং দেহের গঠন লম্বা ধরনের । কালক্রমে এরাও ভারতীয় জনগণের মধ্যে মিশে যায়। সর্বভারতীয়দের মধ্যে লম্বা, গৌরকায়, বাদামী মুখের জনগণ আৰ্য রক্তের দান।

মঙ্গোলীয় বা মঙ্গোলয়েড জাতিঃ
 মঙ্গোলীয় সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা। মঙ্গোলীয় জাতিভুক্ত চীনের সভ্যতা প্রায় দশ হাজার বছরের প্রাচীন। এই সভ্যতা মিশরীয় বা ইজিপ্সিয়ান সভ্যতার সমসাময়িক। সাহারা মরুভূমির বালুপাতের ফলে মিশরীয় সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু চীনের মঙ্গোলীয় সভ্যতা নিজের প্রাচীন সত্ত্বা, অটুট রেখেছে। চীন দেশে প্রায় ছয় সাত হাজার বছর পূর্বের প্রাচীন শহর ও প্রাচীন পুস্তক এখনও আছে। কাগজ, কালী, ছাপাখানা, সিলক, চিনামাটি মঙ্গোলীয় সভ্যতা তথা চীন সভ্যতার দান। বর্তমানে মঙ্গোলীয় সভ্যতার চীন, বিশেষত জাপান এশীয় জাতিদের মধ্যে উন্নততম জাতি। মঙ্গোলীয়গণ প্রধানত মঙ্গোলীয়, চীন, তিব্বত, ভারতের উত্তর পূর্বের পার্বত্য অঞ্চল, জাপান, কোবিয়া, ব্রহ্মদেশ, মালয়েশিয়া সুমাত্রা, যাভা, বালি প্রভৃতি স্থানে বসবাস করে। এদের শারীরিক গঠন বৈশিষ্ট্য হলো- দেহের গঠন মাঝারি ও মোটা ধরনের, গায়ের রং হলদে, মুখ গোলাকার চক্ষু ছোট ও চোখের উপরের পাতা ভারী, নাক ছোট ও চেপ্টা এবং মাথা গোলাকার। আনুমানিক একশত খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মঙ্গোলীয় ইউচি জাতিভুক্ত কুষাণ বংশ ভারতে প্রবেশ করতে আরম্ভ করে। এদের হুন ও বলা হয়। খ্রিস্টিয় প্রথম শতকে শ্রেষ্ঠ কুষাণ রাজা কণিষ্ক খোটান, খোরাসান হতে আরম্ভ করে বিহার ও কোঙ্কন প্রদেশ পর্যন্ত তাঁর সামাজ্য বিস্তার করে। কাবুল পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, মালব, রাজপুতনা ও কাথিয়ার স্থান তার সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। কালক্রমে কুষাণগণ ভারত উপমহাদেশের জনগণের সঙ্গে মিশে যায়। আমাদের মধ্যে যাদের দৈহিক গঠন মোটা, মুখ গোল ও ভারী চোখ ও নাক অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র, তাদের মধ্যে মঙ্গোলীয় রক্তের প্রভাব আছে। এরপর ভারতের উত্তর পশ্চিমের ঐ গিরিপথ দিয়েই গ্রিক, শক, হুন, পাঠান, মোগল ভারতে প্রবেশ করে রাজ্য স্থাপন করে। কালক্রমে ভারতীয় জন সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায়। এরূপে অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, আৰ্য্য, মঙ্গোলীয় ও কিয়ৎ পরিমাণ ঘিয়েট জাতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় ভারতীয় জাতি সমূহ ও ভারতীয় সভ্যতা। (ড. নীহার রঞ্জন রায় রচিত “বাঙ্গালীর ইতিহাস" ও ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত “জাতি, সংস্কৃতি ও সাহিত্য পুস্তক দ্রষ্টব্য)

আদিবাসীঃ
ভাওয়াইয়া এলাকার আদিবাসী সম্পর্কে মিঃ রিসলি তার "Tripes and Casts of Bengal" পুস্তকে লিখেছেন যে, কোচ, কোচম, রাজবংশী, পলিয়া, দেশি প্রভৃতি জাতি যারা উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ববঙ্গে বাস করে, তারা দ্রাবিড় জাতি সম্ভবত এবং এদের মধ্যে মঙ্গোলিয়ান রক্তের মিশ্রণ আছে বলে সন্দেহ করবার কারণ আছে। (Cooch Behar Satate an Land Revenue Settlement-by Harendra Nath Chaudhury পুস্তক দ্রষ্টব্য) কেহ কেহ রাজবংশী জাতি মঙ্গোলিয়ান জাতি হতে উদ্ভূত বলে মনে করেন। কিন্তু কেহই কোনও ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখাতে পারেন নি। কোনও প্রাচীন ইতিহাসে বা প্রস্তরলিপিতে বা তাম্রলিপিতে রাজবংশী জাতির কোনও ইতিবৃত্ত দৃষ্ট হয় না। ড. নীহাররঞ্জন রায় তার রচিত, বাঙ্গালীর ইতিহাস” পুস্তক (৫৪ পৃষ্ঠা আদিপৰ্ব্ব) লিখেছেন “খ্রিস্টীয় দশম শতকে কোজামা আর এক রাজবংশ গৌড়ে কিছুদিন রাজত্ব করেছিলেন। দিনাজপুর জেলা বাণগড়ে প্রাপ্ত একটি স্তম্ভলিপিতে এদের “কমোজাম্বয়জ গৌড়পতি" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরদা তাম্রপত্রেও এদের উল্লেখ দেখা যায়। এই “কয়োজাম্বয়জ রাজারা কারা? কোথা হতে তারা এসেছিল দেবপালের মুঙ্গের শাসনে এই কথোজের উল্লেখ আছে। কিন্তু সেই কথোজ দেশ যে উত্তর পশ্চিমের গান্ধার দেশের সংলগ্ন দেশ এ সম্বন্ধে কোনও সন্দেহ নেই। বহু দিন আগে রমাপ্রসাদ চন্দ্র মহাশয় বলেছিলেন এবং সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মহাশয় তা সমর্থন করেছিলেন যে, এই কম্বোজরা তিব্বত ভোটান প্রভৃতি হিমালয়ের সানু দেশের কোনও মঙ্গোলীয়জনের শাখা এবং বর্তমানে উত্তরবঙ্গের কোচ, পলিয়া, রাজবংশীদের পূর্বপুরুষ। সুনীতিবাবু কম্বোজের সঙ্গে কোচ শব্দের একটা শব্দতান্ত্রিক যোগও করেছিলেন। অনেকের মতে পূর্ব সীমান্তে গান্ধার সংলগ্ন একটা কোজ দেশ ছিল। বাংলার কম্বোজ রাজবংশ সেই দেশ হতে আগত। যদি তা হয়, তাহলে এরা মঙ্গোলিয়ন পরিবারভুক্ত তা অনুমান সঠিক। | রাজবংশী শব্দটি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে এই জাতি আৰ্য্য এবং সংস্কৃতভাষী রাজবংশী শব্দের অর্থ রাজার বংশ।
প্রাচীন ভারতের রাজাগণ ক্ষত্রিয় ছিলেন এবং রাজবংশ হতে উদ্ভূত বলে রাজবংশী জাতি ক্ষত্রিয়, ইহা প্রমাণিত হয়। উত্তরবঙ্গে একটি মাত্ৰ আৰ্যজাতি রাজত্ব করে ছিলেন। তারা বলেন “কম্বোজায়জ গৌড়পতি যাদের কথা দিনাজপুর বানগড় প্রাপ্ত স্তম্ভলিপিতে উল্লেখ আছে। সুতরাং এই কম্বোজ রাজবংশ হতে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী উদ্ভব হয়েছে- তা অতি সঙ্গত সিদ্ধান্ত। আবার এও দেখা যায়। যে, উত্তরবঙ্গের তথা ভাওয়াইয়া এলাকায় নদীগুলোর নাম সমস্তই সংস্কৃত বা সংস্কৃত হতে উদ্ভুত, যথা-মহানন্দা, করতোয়া, তিস্তা, (তিস্রোতা), ধরলা, (ধবলা), গদাধর, নদীগুলোর নাম উল্লেখ আছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে এই নদীগুলোর নাম সংস্কৃত হলো কিরূপে? এই অঞ্চলে যদি মঙ্গোলীয় জাতি বাস করতো তাহলে এই নদীগুলোর নাম সংস্কৃতি না হয়ে মঙ্গোলীয় শব্দজাত কোন নাম হতো। সুতরাং নদীগুলোর সংস্কৃত নাম হতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, এই উত্তরবঙ্গে সংস্কৃতভাষী জনগণ বাস করতে এবং তারাই এই অঞ্চলের নদীগুলোর সংস্কৃত নাম দিয়েছেন। অনেকে একমত হয়েছেন যে, উত্তরবঙ্গের প্রাচীন অধিবাসী প্রধানত রাজবংশী জাতি। এই সংস্কৃত নামগুলো তাদের দেয়া। এই দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাজবংশী জাতি সংস্কৃতভাষী ও আর্য্য। অবশ্য পরবর্তী কালে কোচবিহার রাজবংশে সঙ্গে এদের বিবাহদি হওয়ায় এবং ভোটিয়াগণ বহুবার এই রাজ্য আক্রমণ করায় রাজবংশী জাতির মধ্যে মঙ্গোলীয় রক্ত মিশ্রণ হয়েছে, তা অনুমান করা অসঙ্গত নয়। তাছাড়াও ভাষাতত্ত্বের দিক হতে বিচার করলে দেখা যায় যে, উত্তরবঙ্গের তথা রাজবংশী ভাষার মধ্যে কিছু অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় শব্দ আছে। সঙ্গত কারণেই বলতে হয় যে, উত্তরবঙ্গেও জনগণের মধ্যে কিয়ৎ পরিমাণ অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় রক্তের সংমিশ্রণ হয়েছে এবং ভাওয়াইয়া গানে ব্যবহার হয়ে থাকে। | উত্তরবঙ্গ তথা রাজবংশী জাতির ভাষা সংস্কৃত হতে উদ্ভুত। এ ভাষায় বহু মূল। সংস্কৃত শব্দ আছে এবং প্রায় সমস্ত শব্দগুলো সংস্কৃতজাত।

তথ্যসূত্রঃ প্রাণের সুর ভাওয়াইয়া (খন্দকার মোহাম্মদ আলী সম্রাট) 

Post a Comment

Previous Post Next Post