ভাওয়াইয়া কি? What is bhawaiya?

ভাওয়াইয়া নিয়ে আলোচনা করার আগে লোকসঙ্গীত নিয়ে আলোচনা করা দরকার। এই লোকসঙ্গীত নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই সঙ্গীত কী সে সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা থাকা প্রয়োজন। প্রাচীন শাস্ত্রকারেরা আমাদের দেশের যাবতীয় সঙ্গীতকে মূল দু'ভাগে ভাগ করেছেন-মার্গ ও দেশী।
  আলাপাদিনিবদ্ধো স চ মার্গ প্রকীর্তি তঃ /
   আলাপাদিনিবন্ধো স চ দেশী প্রকীর্তি তঃ //
আলাপ ইত্যাদি লক্ষণযুক্ত গানকে বলা হয় “মার্গ" আর আলাপ ইত্যাদি বিহীন যে গান তা হলো “দেশী”। দেশী সংগীতকে পরিষ্কার বোঝাতে গিয়ে প্রাচীন শাস্ত্রকার
বলেছেন-
    অবলা বাল গোপালৈঃ ক্ষিতি পালৈনিজেচ্ছায়া
    গীয়তে সানুরাগেন স্বদেশে দেশীর চ্যতে /
-স্ত্রী লোক, বালক, রাখাল ও রাজা নিজের ইচ্ছায় অনুরাগের সঙ্গে নিজ নিজ দেশে যে  গান গেয়ে থাকে সেই গানই হলো ‘দেশী'। সুতরাং দেশী' বলতে আজকে আধুনিক ও  ‘লোকসঙ্গীত' এর মতো কোনো এক প্রকার সঙ্গীতকে বোঝাত। অন্যভাবে বলতে গেলে, ভারত উপমহাদেশের প্রাদেশিক ভাষায় গান মাত্রই হলো দেশী গান । বিবর্তনের মাধ্যমে এই দেশী সঙ্গীত থেকেই উদ্ভুত হয়েছে লোকসঙ্গীত। বিবর্তন ঘটেছে স্থান, কাল ও পাত্র অনুসারে এবং গীতিকারদের অনুভূতি থেকে এসেছে এই বিবর্তন। (তথ্য সূত্র: সুখ বিলাস বর্মা “লোকসঙ্গীতে কোচবিহার। বিশেষ কোচবিহার জেলা সংখ্যা-১৩৯৬, পৃষ্ঠা-৩৫৫।‘লোক' শব্দটির অর্থ আক্ষরিক শিক্ষাবিহীন সরলচিত্ত আধুনিকতার আলো বঞ্চিত গ্রামের জনসাধারণ। পল্লীগ্রামের এই শ্রেণির অখ্যাত কবি, শিল্পী ও সুরস্রষ্টার দ্বারা সৃষ্ট, পরিপুষ্ট ও অবিকত ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষিত সংগীতই ‘লোকসঙ্গীত' অধিকাংশ সময়েই তাই আঞ্চলিক । কিন্তু বিষয় ভাব ও সুর মাধুর্য্যের গুণে তা বিশেষ অঞ্চলের সীমা অতিক্রম করে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, গোয়ালপাড়া ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভাওয়াইয়ার ক্ষেত্রে ও এ কথা প্রযোজ্য। ভাওয়াইয়া কথার উদ্ভব যেভাবেই হোক না কেন ভাওয়াইয়া জনপ্রিয় সঙ্গীত রূপে
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, গোয়ালপাড়া ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

—খন্দকার মোহাম্মদ আলী সম্রাট
গ্রন্থঃ প্রাণের সুর ভাওয়াইয়া। 

Post a Comment

Previous Post Next Post