শৈলেন দাসের নেখা কামতাপুরী - রাজবংশী গপ্পো “ছেঙা ঢাকা অসুখ”

ভাইল দিন আগের কথা। বাড়িত ব্যাপার নাইগছে ।সাকাল থাকি সারা বাড়িত মেলা মানষি কাজ করির ধইরছে । আইন্না, আদ্দোর- বাড়িত ত্রিপাল টাঙের ধইরছে,কয়জন গুয়াবাড়িত চাটা কাটে,একপাশে মসং কাটে ,ডিগিত মাছ মারা চইলছে ,গাস্সেক বেটিছাওয়া একটে জমা হয়া শাক কুটির ধইরছে ।কোন ফাকোতে কায়বা একটা মাইক ধরি আসিলেক । লম্বা একটা বাশোত চোঙাটা বান্দিয়া আদ্দোরবাড়ির টারের গোরোত খাড়া করি দিল।বাশটাক চাইরোপাকে ঘোরে দেওয়া যায় এমন করি বান্দি দিলেক ।গোল গোল চাকতির নাখান কালা থালের উপরা পকির ঠোটের ঢক একটা জিনিষ উপরাত দিতে না দিতে গান হবার ধরিল। চাকতির উপরা একটা কুকুর মুখোত একটা বড়ো সানাই নিয়া পিরপির করি ঘোরে আর গান বাইজতে থাকে। চ্যাংড়াটার মনোত আনন্দে ধরে না । একবার এদি যায়, একবার ওদি যায় ।চিল্লাং ঝাটাং করি দৌড়ায়,নাচে ,গান কয় ।চাইর বছরি ছাওয়া ; উঙারতো খুশি আনন্দ হওয়ারে কথা। কোন সুলকিতে ঘর ঢোকে, দ্যাখে মাও উব্ রি হয়া থাকি আছে।মার বোধ হয় শরিল খারাপ ।বায়রার এতো এতো আনন্দ ছারি উঙায় আর মার ঐটে মন ট্যাকে না ।খানদান ভুলি সারা বাড়ি নাচি বেড়ায় । বেলাভাটি থাকি বাড়িত সাগাই আইসা শুরু হইছে।সইন্ধ্যা নাইগতে না নাইগতে বাড়ি ভর্তি মানষি। মাইকের গমগমি, টোউলিয়ালার চেকরিচিকরি,নিমন্তনি মানষির আওবাও---- বাড়িটাত হোল্লোসোয়ারি নাগি গেইছে।চ্যাংড়াটা কোন ফাকোতে খানিক ঘর ঢোকে আর দ্যাখে মাও একে ঢক করি থাকি আছে ।কথাও কয়না ,কোলাতো ন্যায়না ।জোকার দেওয়া শুনি আরো বায়রা যায় । আদ্দোরবাড়িত দৌড়ি যায় ।দ্যাখে একান ছই হালা ভইষের গাড়ি ।দুইটা অ্যাত্তো বড়ো ভইষ বলাইবাড়িত বান্দা ।দৌড়ি যায়া গাড়িত চরির চায় আরো কয়টা ছাওয়ার সোথে।গারোয়ান চিকরি ওঠে--- গাড়িত না চড়েনরে বাউ,গাড়ি উল্লুক হয়া হাতে- ঠ্যাঙে বিষি পাবেন ।দৌড়ি যায় মাইকের বগোলোত । দৌড়ি যায় ব্যাড়া খোলা রান্দোন ঘরের গোড় । মাছ মসং এর গোন্দে প্যাটের ভোগ চারে উটিল। নিমন্তনি মানষিলার সোথে খাবার বসি গেইল। ছ্যালেম্যাটে চাইরটা খায়া উঠি গেইল ।চকুত ঘুম আসি গেইছে ।আর কতো! সাকাল থাকি দৌড়াদৌড়ি, হুরাহুরি-- নিন্দের আর কী দোষ ! ঘর যায়া মার বগোলোত স্যাত্তে থাকিল ।দ্যাখে মাও ঐঢক করি অ্যালাও থাকি আছে ।মার যে কী অসুখ হইছে প্যাট বিষায়, না মাথা বিষায় ---বুঝিরে না পায় । মার গোরোত বসি একটা পাকা চুলি বুড়ি ফুদুর ফুদুর করি কী কবার ধইরছে মাও হু হা কিছুই না কয় । মাওয়ের মুখের ভিতি চায়া দ্যাখে চকুমুখ ফুলি গেইছে। চকুত টস্ টসা জল ।আউলা ঝাউলা চুলি ।গালোত চকুর জলে দাগ ।মাও বুঝি প্যাটের বিষোত কান্দির ধইরছে । বুড়িটা মাওয়ের সোথে কতা কওয়া বাদ দিয়া চ্যাংড়াখুনাক জিগ্গাস করে ----- হ্যারে ভাই খালু ? পাকপরসের ভাত তরকারি ক্যামন হইছে? চ্যাংড়াটার ঘুম পাইছে । চকু মেলির পায়না ।মুখ দিয়া রাও বিড়ায়না ।বুড়িটার কথালা খালি কানোত যায় । একবার বোধ হয় বুড়িটা কানের গোড়োত ফিসির ফিসির করি কয় ----- কিরে ভাই, নয়া মাও মনোত খাইছে?

নেখাইয়াঃ শৈলেন দাস।
থানেশ্বর হাট, কোচবিহার, ভারত।

Post a Comment

Previous Post Next Post