ছুয়্যা নিয়া কামতা-রাজবংশী রসালাপ

ছুয়্যা কি? ছুয়্যা কয় প্রকার? ছাওয়া জন্মিলে ছুয়্যা, মরিলে ছুয়্যা, মল-মুত্র পাড়াইলে ছুয়্যা, ময়লা বা নোঙরা জাগা থাকি আসিলে ছুয়্যা, মরা পোড়া দিবার গেইলে ছুয়্যা ইত্যাদি। চাইরপাকে খালি ছুয়্যার মারাকাটি। এই ছুয়্যা গিলার ফির বাচ্চা হয়। ছুয়্যা ব্যাক্তি যদিক্যাল অন্য ব্যাক্তিক নাড়ে বা বোলায়; তাইলে যাক নাড়ছে তাকো নাকি ছুয়্যা ধরে। ছুয়্যাক তাড়ার উপায়, জলত নামি বা জলে গাওধোয়া। কি এক অদ্ভুত কাণ্ডজ্ঞান! এই ছুয়্যার বেশি প্রভাব ব্রাহ্মণ আর এটিকার ক্ষত্রিয় গিলার মনোত। কোন অনজাতি লোক যদি উমাক বোলাইছে তাইলে সব্বনাশ, ছুয়্যা আসি গা'ত চড়িল। হামার এটি এক স্কুল পণ্ডিত মশাই আছিল। খুব ফিটফাট লোক। উমার কয়েক ঝন প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্র আছিল। যার ভিতরা দুইঝন আছিল অনজাতি। সোগ ছাত্র'রা মাদুর বা বস্তা পাড়ি বসি পড়া পড়ছিলো। পড়া শ্যাষে যেলা ছাত্ররা চলি গেছিল তখন পণ্ডিতের বউ সেই অনজাতি ছাত্রদের বসার থানখান জলদিয়া নেপি দিসলো। এলাও অনেক বাড়িত জল ও গবর মিশ্রণ বাড়ির আনাচে কোনাচে ছিটি দেয়। উয়াতে নাকি বাড়ি পবিত্র থাকে। মাঝে মইদ্ধে উগলা কথা ফমে আসলে হাসিতে পেটটা বিষি উঠে। ছুয়্যা আদৌ সংস্কার না কুসংস্কার তা অনেকেই কবার গেইলে দোমোক চোমক করে। কিশোর কালে মোর এমনো সমায় আছিল যখন নাম না জানা নানান ছুয়্যার বাদে দিনত দুই তিনবার গাও ধুইছোঙ। কাই কুত্তি গু পাড়ে আসি মোক নাড়ছে তাতে নাকি মুই ছুয়্যা! মেজাজটা ক্যাদন করি গরম না হয়? মানষের গু পাড়ালে গলাকাটা গাও ধুলেও চলে। মানে মাথা না ভিজালেও সমস্যা নাই, গাত ফির যিগলা জামা কাপড় আছে সিগলাও ভেজা নাগে। কিন্তু কুত্তার গু পাড়ালে গাও, মাথা সোগে ভেজা নাগবে। ভাবো এলা, গুয়েরো শ্রেণি ভাগ আছে। অনেক সমায় ভিন্ন ছড়া কাটি ছুয়্যাক বিদায় দিছং। যেদনঃ "গুয়ার গাছত গুয়া নাই চেঙরা/চেঙরি মাইনষের ছুয়্যা নাই"ছড়ার কি শক্তিরে বাবা! ছুয়্যা শ্যাষ। এই ছুয়্যা খালি বাংলাদেশের রংপুরে না হয়। ভারতে কোচবিহারের দিনহাটাতেও মোক ছাড়ে নাই। প্রাইমারী জীবনটা ছুয়্যা ছুয়্যা করি কাটি গেইছে। মরা শশ্মানত নিয়া গেছিল কামাত আবুতারা স্কুলের পাশের রাস্তাদিয়া। কায়বান মরার পাছে পাছে আটানা-চারানা পয়সা ফ্যালে দিয়া দিয়া গেছিল। তাকে হামরা কুড়ি নিয়া আইসক্রিম কিনি খাইসলোঙ। একদিন মোর মাও এই কথা শুনিয়া কাচা কলমুর ড্যারা ভাঙি নিয়া ডাঙাইছিলো মোক, সাবান দিয়া কচলে কচলে গায়ো ধোয়য়া দিছে। হায়রে অতীত। বাংলাদেশে আসিয়াও সেই ছুয়্যা। শালা ছুয়্যা পাছ ছাড়িল না। মোর ছোট ভাই একবার সাধু সঙ্গে সাধু হয়া গেইল। উয়ার গুরু হামার বাড়ি আসিল একদিন। তার ছুয়্যার দোষ দেখি মুই বোদবোদা হয়া গেনু। পায়খানা যত বার যায় ততবার আসি গাওধুইয়া ধুতি বদলায়। একদিন গুরু মশাইর পাতলা পায়খানা ধরিল আচ্ছা তরে। বেচারা গুরুর বেতাল সারতে বয়া দশা। বার বার গাওধোয়া ও ধুতি পাল্টাতে সোগে ধুতি ভিজি গেইল। বাকি খান না লেখনুং। আর এক ছুয়্যা হইল, যদি কুত্তা আন্দন ঘর ঢুকছে তাইলে মাটির হাড়ি ভাঙ্গি ফেলে দিসলো কিন্তু সিলভারের হাড়ি ফেলে দেয় নাই! খালি আকলে ধুইয়া ফির ব্যবহার করে। মানে হইল দামি কম দামি জিনিসের মইদ্ধেও ছুয়্যার প্রভাবের পার্থক্য আছে। যখন হাই স্কুল পড়োঙ সেই সময় কাকাতো এক ভাই ছুয়্যা হয়া আসি মোক নাড়িছে। মাও, ভাই, দিদি সগায় কবার ধরিল মুই নাকি ছুয়্যা, মোক গাও ধোয়া নাগিবে। সকালে চেঙরাটা মুই গাওধুইয়া স্কুল গেনু ফির বেলে ধোয়া নাগবে। এক্কেরে রাগকরি সগাগে নাড়িবার নাগছোঙ। ঘর, দোওর, খ্যাতা, বালিশ, পান্না,  মশারী, আন্দন ঘর, বড় ঘর, তুলসী পাঠ, সোগে নাড়ি একাকার করি দিছঙ। এলা বাড়ি ঘর, ভগবান দেবতা, হাড়ি পাতিল সগায় ছুয়্যা। এই কাজ করিয়া মুই সারাদিন বাড়ি ছাড়া। ছুয়্যার এই কাউ ক্যাচাল শুনিয়া মোর এক জ্যাঠা মশাই সগাকে ধমক দিয়া কইছিলো, পেটত গু নিয়া বেড়ান তাতে কি ছুয়্যা নাই? কতাতে আছে না,  দেখলে ছুয়্যা না দেখলে ছুয়্যা নাই। অবশেষ জানা গেইল ছুয়্যা বিলি কিছু নাই। মানুষ ছুয়্যা হয় না। শরীর নোঙরা হয়। মন অশুদ্ধির নামেই অশৌচ। ছোঁয়াচে ছুয়্যা আসলে একটা বড় কুসংস্কার।


_____সুজন রায়।
গোড়াই পাঁচপীর, কুড়িগ্রাম, রংপুর, বাংলাদেশ।

Post a Comment

Previous Post Next Post