গোপাল ভাড় ও ম্যাঘ রাজা —কামতা-রাজবংশী গপ্পো

ভাদর মাস পইচ্চে, অজগবি দেওয়াখান ম্যাঘে আন্ধার। গোপাল ভাড় গামছা কমড়োত বান্ধি কোদাল ঘাড়ত নিয়া দোলাবাড়ি ভিতি ধরিল দৌড়। গোপালের দৌড় দেখিয়া ম্যাঘরাজা গোপালক কইলঃ ওহে গোপাল থাম, আরে বাহে দৌড়াইস ক্যা?
গোপাল দৌড়ায় আর কয়ঃ থামির পাবান নঙ! ঝড়ি আইসপে ভুয়ের আইল বান্ধিম তাগদা আছে মোর।
গোপালের কথা শুনি ম্যাঘরাজার পিত্তি জ্বলি উঠিল! মুই মেঘরাজা যাচি গোপালক ডাকানু আর গোপাল মোর ডাকে পাত্তায় দিলেক না।
ম্যাঘের ভিতর‍্যা থাকি ম্যাঘরাজা গোপালক চিকড়ি কইল, কান পাতি শুন; তুই মোর কথার হেলা কচ্চিস! ওই ভুয়ের এক ভাড় ধান উবি খালি এক টালা ধান পাবুরে গোপাল, তোক অভিশাপ দিনু।
দেওয়ার ভুডুস ভাডাসোৎ কিযে শুনিল সেই কথাখান উয়ার গাওতে নাগিল না। প্রায় চাইরটা মাস বিতিয়া গেইল। গোপাল ম্যাঘরাজার কতা ভুলি গেইচে। দোলাবাড়িত গোপালের ধান পাকি ভুলভুলা। ধান হিনা কাটায় নাগে। পরদিন ব্যাটাক সথে করি কাঁচি- বাঁকুয়া নিয়া ধান কাটির ধরিল। গ্যারমাখান বাজিল ধানের ভাড় উবার যায়া। বাঁকুয়াৎ করি চল্লিশ আঠি একভাড় উবিয়া  মাটিৎ থুইতে ধান হয় একটালা। গোপাল ঠাওরার না পায়া বোদবোদা নাগি আঙিনাত বসি অইল।
গালোত হাত দিয়া দেওয়ার ভিতি দেইখতে না উয়ার ম্যাঘরাজার কথা মনোৎ ভাসিল।
মনে মনে গোপাল বুদ্ধি আটে বাকুয়া ধরি দোলাবিলি হাটা দেইল। এইবার চল্লিশ আটি নোয়ায়; বাঁকুয়ার দুই মাথাৎ দুইটা ধানের শিষ গেটো দিয়া চলিল বাড়ির ভিতি।  আঙিনাত আসি যেই দুই শিষ বান্ধা বাঁকুয়াখান মাটিত থুইলেক অমনি ধান হইল একটালা। গোপাল আর উয়ার ব্যাটা খুশিতে কুলকুলা। যেটেকোনা  দুই শিষ ধান এক মুঠে না হয়, ওটেকোনা একটালা!
গোপাল এলা গ্রামের সোউগ ছওয়াগিলাক ডাকে কইল প্রিয় দাদু, দিদমা আর কাকুরা তোমরা সগাই মোর সথে ভাড়ত করি দুকনা শিষ উবাইবেন মুই তোমাক একটা করি নজেঞ্চ খোয়াইম।  নজেঞ্চের কথা শুনি কাও কাড়াইল, কাও কাবাড়ি, কাও বাঁশের ঝিক এমন কি কোষ্টাগছের শিন্ডা নিয়া গোপাল ভাড়ের সথে যোগদিল। আদ্দুর থাকি দেখি মনে হয় বিশাল রাবনের সৈন্যগুষ্টি। গোপাল যুদ্ধোত নামছে। এখান সপ্তা গোপালের ধান উবাইতে গেইল। বাড়িত ধান আর ধান। ইয়াকে কয় "শাপে বর"।
সেই থাকি ম্যাঘরাজা গোপালের কিত্তি দেখি আর কুনোদিন উয়াক জব্দ করার চিন্তা স্বপ্নেও দ্যাখে নাই।

__সুজন রায়।
গোড়াই পাঁচপীর, কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ।

2 Comments

Previous Post Next Post