নূরবানুর ভালোবাসা —কামতা-রাজবংশী গপ্পো


"ক্যা গো? এলাও বিছনাত সুতি ক্যা? রিশকা ধরি যাবান্নন?" স্বামী রহিমক বিছনাত সুতি থাকপের দেখি নুরবানু পুছ করিল।রহিম আইলসিয়ার মত একটা আড়মোড়া ভাংগি আয়াআ এর নাকান একটা শব্দ করি কইল "এই রিশকা নিয়া মুই আর যাবান্নং।"
-তা নয়া রিশকা কেনো এখান
-টেকা দে
-হ,, মোর দেহন টেকার গাছ আছে।খালি পাতা ছিড়িম আর দেইম।তুই কি করিস কর, অগলা মুই বোঝং না। কাম করি সংসারত টেকা না দিলে আর ভাত পাবার নইস কিন্তু কয়া দিনু। মুই একলায় খাটিম আর তুই বসি বসি খাবু,অগলা চলবের নয়। যা এলায় রিশকা ধরি।
-কি এতো বড় কতা! তুই মোকে ভাত দিবের নইস।এলায় মুই এই বাড়ি থাকি যাইম। তুই ভাত না দিলে দেহন মোড় চলবেরে নয়।
-তা যা,এলায় যা। তোক আটকাইল কাইঁ?
-হ যাইম তো, এলায় যাইম।
এই কতা কয়া রহিম গাইল পারতে পারতে বাড়ি থাকি হন হন করি বেড়ে গেলো। নুরবানুও বড় বইনক কয়া বাড়ি থাকি বেড়াইল। একটা ম্যাসোত কাম করে অঁই।নুরবানু এই বছর ২৫-২৬ এর বেডিছওয়া। থাকে তার বইনের বাড়িত।স্বামী আর ৮ বছরের একনা বেটিও থাকে উয়ারে সাথে। স্বামী রহিম স্বভাব চরিত্রে একেবারে বাউদিয়া। কোনো কামে ঠিকমত বেশিদিন করবের পায় না।এপাশে বিড়ি, তাশ এগলার নেশা তো আছেই। অনেক কষ্টে কিস্তি তুলি একটা রিশকা কিনি দিছলো নুরবানু। ভালো কামো করবের নাগছিল রহিম।নুরবানু মনে করছিল এবার বুঝি রহিম ভাল হয়,এবার মনে হয় সংসারের হাল ভালমত ধরে। কিন্তু নুরবানুর আশাত পানি ঢালি, নয়া নাটক ধরছে রহিম।কিসের ব্যাটারি রিশকা বেড়াইছে, এলা অই রিশকা না হইলে কাম করবের নয় রহিম।
নুরবানু রাস্তা দিয়া হাটে আর চিন্তা করে এবার একটা কিছু করা নাগবে।গান যখন নিছে এটা রিশকা চলবার নয়, তখন নয়া রিশকার জন্য টেকা জোটায় নাগবে।কিন্তু এলা টেকা পাইবে কই? আগের রিশকার কিস্তি কত কষ্টে শোধ হইছে। ফির কিস্তি তুলবে? এবার তো আরোও বেশি টেকা তোলা নাগবে। এ কতা সে কতা চিন্তা করতে করতে নুরবানু পনছি যায় ম্যাছ। ম্যাছের মালকিনের সাথেই প্রতথম দেকা।
-ক্যারে নুরবানু? এতো বেলা করি আসলু? তোক না কাইল কনু আইজ মোর কাম মেলা আছে।
-সে কতা কন না ভাবী,মরাটা ফির নয়া নাটক ধরছে..
এবার আস্তে আস্তে নুরবানু সোগ কতা ভাবীক কইতে থাকে আর কাম করতে থাকে। নুরবানু খুব কর্মা মানুষ। পাতলা পুতলা শরিল নিয়া মেলা কাম করে।সকালে যায়া় আগোত মালকিনের বাড়ির কাজ করে। তারপর ম্যাছের আন্দন। দুইট্যা কাম করি এহনা ভালো টেকা পায়। তাকে দিয়া সংসার চালা নাগে। তারচায়াও বড় কতা বেটির পড়াশুনা। নিজে যাই হোক,বেটিক পড়া পড়ে বড় করবের চায় নুরবানু।
নানান কতা উপদেশ দিয়া বাড়ির মালকিন নুরবানুক বুঝায় "তুই ছাড়িস না ক্যা উয়াক?" মুই কডে না ছাড়ং উয়াক, অইয়ে তো খালি ঘুরি আসি ঘ্যাস্টে মোড় এডে" অদ্ভুত এক বিরক্তির ভাব নিয়া কয় নুরবানু।
কাম শ্যাষ করি বাড়ির পাশে না যায়া আরেক ভাবির বাড়ি যায় নুরবানু।এই ভাবি হইছে কিস্তি তুলি দেওয়ার ভাবি। কিস্তি তোলার কাম এমরা করি দেয়।
সব শ্যাষ হইলে বাড়ি বিলি হাটপের ধরে নুরবানু।
রহিমের এমন বাড়ি ছাড়ি যাওয়া নতুন নোয়ায়।আরও মেলা বার ছারি গেছিল।তালাক দেওয়ার কতাও উঠছিল ম্যালাবার। কিন্তু কিছুদিন পর ফির সোগ ঠিক হয়া যায়। নুরবানু বাড়ি যায়া বইনের মোবাইল নিয়া ফোন করে রহিমক। রহিমের মোবাইলটাও নুরবানুর কিনি দেওয়া।
-হ্যালো,কডে তোমরা এলা। (নুরবানু)
-কডে থাকোং থাকোং, তোর কি?
-হ,শোনেন,আশা সমিতিত কতা কইছং। বিশ হাজার দিবের চায়,কিস্তি চলবার পাইবেন?
-থাকিস,এহনা পরে বাড়ি যাবাইছং।
ফির সোগ আগের মত হয়। নুরবানুক কত মানুষ কয় রহিমোক ছাড়বের। কিন্তু ছাড়বের পায় না নুরবানু। এই বাউদিয়া মানুষটাত কি যে আছে,নুরবানু নিজেও জানেনা।তাও আইতোত বিছনার পাশত না থাকলে,জরায় না ধরলে ছটফট করে নুরবানু। ক্যা যে এমন হয়, বিয়ার ১০ বছরেও ইয়ার উত্তর পায় নাই নুরবানু..
__নুরে আযিম সম্পদ। কুড়িগ্রাম।

2 Comments

  1. Replies
    1. ভাওয়াইয়া ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ।সাথে থাকুন,আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুন,জানান,ছড়িয়ে দিন।

      Delete
Previous Post Next Post