কর্ণ-কুন্তি সাইকেল ওয়ার্কশপ
নিয়তি রায়
কর্ণ দোকানটার ভিতি একবার ভাল করি চায়া দেখে । দেখিবার মতন হইছে দোকানখান । সাইকেল ভাল করিবার সউগ সরঞ্জাম আছে দোকানটাত । কয়দিন আগত কিস্তিত একখান পাম্প মেশিন কিনিছে । কর্ণ ব্যাড়ব্যাড়ায় । কর্ণ - কুন্তি সাইকেল ওয়ার্কশপ নামখানও খুউব ভাল হইছে । কুন্তি মাসির কথা উয়ার মনত আইসে । উয়ার চক্ষুত জল আইসে । কুন্তি মাসি উয়ার কাহ নাহয় ত্যাং উয়ারঠে পাইছে মাওয়ের ভালােবাসা আর আদর । কুন্তি মাসি কোষ্ঠে হারে গেইল । অনেক খুঁজিছে কর্ণ , পায় নাই । সগায় কয় কৰ্ণ তােক খুঁজির যায়ায় তাে কুন্তি মাসি পাগলি হইল । তুই - ই মানষিটাকে পাগলি করলু । কথাটা কর্ণর মনত ধরিছে । কঠিন খাটাখাটি করিয়া তিল তিল করি গড়ি তুলিছে “ কর্ণ - কুন্তি সাইকেল ওয়ার্কশপ ” । কুন্তি মাসি যেইঠে থাকুক এই সাইকেল দোকানখানের নাম শুনিলেই খুশি হইবে । অন্তত উয়ার আত্মাটা শান্তি পাইবে । কুন্তি মাসিরঠে পরামর্শ করিয়া তে এই নামখান থুইছে । ক্ষমখায় খিল খিল শব্দত উয়ায় চমকি ওঠে । ও মাধু ! হা । চিনিস নাই মনে হয় ? চিনি না কেন ? মাধুরীর মায়াবি চক্ষু আর ঢলঢলা , যৌবনত একখান নেশা - ধরা ভাব আছে ঠিকে তবু কৰ্ণর উয়াক ভাল নাগে না । উয়াক ঠিক ঘরের বৌ করা যায় না , অন্তত কুন্তি মাসির আপত্তি থাকিল হয় । চেঙড়িটা চিনাজোকের নাকান উয়ার পাছত আটি আছে । মাধুরী কয় , কণেক বসির কবু না কন্নদা । যা যা , বসির নাগিবে না । অমন নেড়ি কুত্তার নাকান খেদাইসকেনে ? কুন সময় তাে কণেক ভাল ব্যবহার করিস না , তা কং মুই মানষি তাে ? রাস্তার নেড়ি কুত্তা তাে না ইং । কর্ণ কয় , আর আসিস না তাে মাের দোকানত । বেটিছাওয়া মানষিক মাের পছন্দ না হয় । তা পছন্দ হইবে কেনে ? এলা তাের সুদিন আসিছে । মাের সােদে মিশিলে তাের যে ভাল ভাল সম্মন্ধগুলা ভাঙি যাইবে । কিন্তুক ভুলিস না যেনে যেলা তাের দুঃসময় আছিল সেলা মাের বুড়া বাপ তােক সাহায্য করিছে । কর্ণ ধমকায়— যা যা , এলা মুই অইন কামত ব্যস্ত । যাং যাং , তাের এইঠে চিরজেবন থাকির জইন্য আইসং নাই । এই কান ধরিনু আর কুনদিন আসিম না । মাধুরীর চক্ষু ভিজি ওঠে , কর্ণর ওখােনা চখুত পড়ে না । মাধুরী যাইতে যাইতে কয়— তােক ভালবাসিছুং । মাধুরী আর কথা কবার পায় না । কর্ণ কয়—- ভালবাসার নিকুচি করিছে । তাের মতন একটা রাস্তার চেংড়িক মুই করিম কেন রে ? মাধুরী গক্ষুরা সাপের মতন ফণা তুলি ঘুরি দাড়ায় । কণেক কর্ণর ভিতি অপলকে দেখি কয় — গরীবের বেটি হবার পাং , মাের আত্মমর্যাদাবােধ অনেক বেশি । জোর করি কারওঠে ভালােবাসা আদায় করির চাং না । একটা কথা জানি রাখ , মাের বরের অভাব হইবে না । এলায় ‘ হ্যা ’ কইলে বিয়া হয়া যাইবে । খালি তােক ভালবাসিছুং সেটায় মাের অন্যায় হইছে । একটা কথা কন্নদা , মাের কিছু নাই ঠিকে কিন্তুক জাজ্বল্যমান একটা বুড়া বাপ আছে । আর তাের ? তুই দেশের পাইস তাের কায় আছে ? তাের নামটাও কন্ন আর তাের নামের সাথে যার নাম জড়াইছিস তার জীবনকাহিনীও কারও অজানা না হয় । কুস্তিমাসির কুমারী বেলার ছাওয়া যে তুই না হইস সেইটাও কওয়া যায় না । এই কথা কয়া মাধুরী হনহনে হাঁটা দেয় । মাধুরীর কথা শুনি কর্ণর মাথা ঘুরি যায় । কি কাথা শুনাইল আজি মাধুরী । এই কাথা মিথ্যা না হয় । কর্ণ ড্যাকায় মাধু , মাধু , শােন শােন । মাধুরী ফিরিয়া দেখে না । কর্ণ ফ্যালফ্যালা হয় তাকে থাকে মাধুরীক । উয়ার ঠ্যাঙয়ের তলা থাকি মাটি সারি যাইতে থাকে । মনে হয় কর্ণ এলায় পাতালত ঢকি যাইবে । চটাপট দোকানটা বন্ধ করিয়া কর্ণ চৌকির উপুরা বসি থাকে । আগের কথাগুলা ফম করিবার চেষ্টা করে । মাও যে উয়াক কত ভালবাসিছে সেই কাথা মনত আসিলে উয়ায় চক্ষুত জল ধরি রাখিবার পায় না । তাও মানষি কয় কর্ণর নিজের মাও না হয় । অবশ্য মইধ্যে মইধ্যে উয়ার মনত আইসে উয়ার নামখান তাইলে কর্ণ কেনে ? মাওয়ের মুখতে শুনা মহাভারতের কর্ণক কুড়ি পাওয়া । সগায় কয়— তাের মাও নদীত গাও ধুবায় যায় তােক কুড়ি পাইছে । কর্ণর মনে হয় সেইজইন্যে উয়ার বড় ভাইয়েরঘর উয়ার মাওক সউগ সমায় কইছে- মাও , তুই কন্নক ছাড় , তালে হামারগুলার সাথে থাকির পাবু । এইগুলা থাকি কর্ণর মনে হয় মহাভারতের কর্ণর জীবনকাহিনী একে সুতাত গাঁথনি করা আছে । কিন্তুক উয়ার মাও উয়াক কিছুতেই ছাড়ে নাই । শ্যাষদিন পইর্যন্ত উয়াক বুকত আকড়েয়া থুইছিল । কর্ণর মনত আইসে উয়ার মাওয়ের যেলা অসুখ হইছে সেলা সউগসমায় কইছে , বাপই তােক একখান ভাল জাগাত থুবার পাইলে নিশ্চিন্তে মরির পানু হয় । এলা যে তােক অসহায় অবস্থাত থুইয়া কিছুতেই শান্তিত মরির পাইম না । বুকত আগলেয়া এতবড় করনু । কর্ণকুনদিন উয়ার মাওক পুছে নাই উয়ার জন্ম বৃত্তান্তর কথা । শেষ পইর্যন্ত অনেক ভাবনাচিন্তা করিয়া উয়ার মাও উয়াক সাইকেলের দোকানত ঢুকি দেয় । মালিকের বাড়িত কুন্তিমাসির সােদে আলাপ । উয়াক প্রাণের চেয়াও ভালবাসে । কর্ণ মনে মনে কয় উয়ায় কুড়ি পাওয়ায় হউক আর যেটায় । হউক উয়ার মাতৃস্নেহের কুনদিন অভাব হয় নাই । একখান বড় দীর্ঘশ্বাস বিরায় উয়ার । শেষ কুনদিন কুন্তিমাসির সােদে ছাড়াছাড়ি , কর্ণ ফম করির পায় না । রাইতত কুন্তিমাসির কোলাত মাথা দিয়া কত সুখ - দুঃখের গল্প করিছে । কুন্তিমাসির কর্ণর বয়সি একটা বেটা থাকির কথা আছিল । জন্মের সময়েই উয়াক ফেলে দেওয়া হইছে । মাসি কইছে– তুই মাের সেই হারে যাওয়া বেটা মনে হয় । কন্নর মাও মরি - যাওয়ার পরে কুন্তিমাসিই স্নেহ - ভালবাসা দিয়া মাওয়ের অভাব মিটাইছে । দোকান থাকি কালি ঝুলি হয়া ফিরিবার পরে মাসিই ধুইয়া মুছিয়া দিছে । দরকার মতন শাসনও করিছে । পরার বেটাক এমন করি কাই ভালবাসে ! সেইজইন্যে মাধুরীর কথাত কর্ণ অস্থির হয়া পড়ে । সেইদিনের কথা পষ্ট ছবির মতন মনত ভাসি ওঠে । কর্ণ সেলা মালিকের দোকানত কাজ করে । দোকানটাত খালি সাইকেল সারাই হয় । শিবমন্দির হাইওয়ের উপুরা এমন সুন্দর চালু দোকান কর্ণর একলার উপুরায় চলিছে । ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীগুলা সগায় পড়ির আসিয়া একখান করি বুড়া সাইকেল কেনে আর সেগুলাক সারাই করে । মালিকটা দোকানের ভিতিরা বসিই রেকডত হিন্দি গান শুনতে শুনতে কইবে— কত হইল রে ? কর্ণর্ক আগের থাকি কওয়া থাকে যে সাইকেল সারাই কইরতে দুই টাকা নাগিবে চাবুচাইর টাকা । আর যে সাইকেল চাইর টাকা নাগিবে সেইটা চাবু ছয় টাকা । এমন করি দুই টাকা করি বাড়ে দাম চাবু । স্কুটার সারাই কইরতে সইগ সময় পাঁচ টাকা বেশি করিয়া কবু । এই কৰ্ণর বয়া নাগে । মালিকক লাভ করি দিয়া উয়ার কি লাভ ? তাতে উয়ার অবস্থার এতকোণা উন্নতি হইবে না । মালিক কয়— এইগলা হইল ব্যবসার বুদ্ধি , বুঝলু না । কর্ণর জন্যেই মালিকটার ধন - দৌলত বাড়িবার ধইরছে । এলা স্কুটারও সারাই করা হয় । চৈদ্দ হাজার টাকা দিয়া একখান পাম্প মেশিন কিনিছে মালিকটা । অথচ কর্ণ সেলা , মালিকটা নেড়ি কুত্তার নাকান খিচিয়া ওঠে । কর্ণর দেহাটা জুলি যায় মালিকের চকচকা দেহাটা দেখিলে । মালিকের বাড়িত থাকিবার আর ভাল নাগে না । অথচ কুন্তিমাসিটার স্নেহ , ভালবাসা ছাড়িয়া কোনঠে যাবারও মনায় না । কুন্তিমাসির জইন্যে এইঠে পড়ি থাকা । কুন্তিমাসি না থাকিলে দোকানটা বদলাইল হয় । কর্ণর পষ্ট মনত আইসে সেইদিনের ঘটনাখান । সেই ঘটনাটাতে সউগ কেমন উল্টা - পাল্টা হয়া গেইল । কর্ণ সেইদিন একমনে কাজ করির ধইরছে । টায়ার থাকি টিউব খুলি চক্ষু নাগে দেখে । তারপরে জলত ডুবিয়া পরখ করে কুন লিক আছে নাকি । হু , একটা ফুটা আছে । আরও দুই - চাইরখান ফুটা থাকিলেও থাকির পায় । কর্ণ আরও ভাল করি দেখে । না , আর ফুটা নাই । এইতাে কয়দিন আগতে স্কুটারটাক সারাই করা হইছে । কর্ণ ফুটাত পট্টি লাগাইতে লাগাইতে কয়- ধ্যাড় - ধ্যাড়া স্কুটার । কতদিন আর চলিবেকায় জানে ? টিউবের লিক বন্ধ করিয়া কর্ণ পাম্প মেশিনের নল দিয়া সাঁ সাঁ করি টায়ারতপাম্প চালেয়া দেয় । ব্যাড় - বাড়ায় কর্ণ— আরও কণেক পাম্প দিম , না থাক । বেশি পাম্প দিলে ফাটি যাইবে । কর্ণর খুব ইচ্ছা করে স্কুটারটাক নৌতনের মতন করি দিবার । তবে ইঞ্জিনটা নৌতন আছে এলাও । আরও কয়েকখান পার্টস বদলাইলে নৌতনের মতন হইবে গাড়িখান । দোকানের মালিকটা খুউবে অসৎ , সউগসমায় খারাপ বুদ্ধি । বাড়ি যাবার সমায় কয়া গেইছে , ওরে ও কন্ন , ইয়াটা — মানে ওই গিয়ার বক্স আর স্পার্কিং প্লাগটা বদলেয়া পুরানটা দিবু , বুজলু ? বদলে দেওয়ার সমায় কণেক ঝালে দিস । কয়টা দিন চলিলেই হইল । মালিকের এই ব্যাপারগুলা কুনদিনে পছন্দ না হয় কর্ণর । পথম পথম খুবে বয়া নাগিছে । মালিকের ভিতি ভােদার মতন চায়া দেখিছে । মালিকটা ধমকেয়া কইচে , কি দেখিস হা করিয়া ? তাের নামখান যেমন কন্ন , সেমন তাের বুদ্ধিটাও কানা , বুজলু । কর্ণ উয়ার দশ বছরের ক্ষুদ্র বুদ্ধিত মালিকের । এই ছুল্লামিগুলা কুনদিন বুঝি উঠিবার পায় নাই । এই স্কুটারটার মেলা পার্টসে অনেকদিন খুলিয়া নেওয়া হইছে । এদিপাইসা কড়ায় - গন্ডায় আদায় করি নেয় । মালিক আরও গর্জিয়া কয়— তাের মাথাত কিছু আছে , যে বুঝিবু ? এই পার্টসগুলা বদলে দিলে দুইদিক থাকিয়া লাভ হয় । নােতন পার্টস মুই পুরা দামে ব্যাচাইম । আর উয়াক দেওয়া বুড়া পার্টসখান চারদিন বাদেই নষ্ট হইবে , বুঝলু না । আরও ঘুরি - ফিরি মােরঠে আসিবে । এইগলা শিখি রাখ , ভবিষ্যতে সুবিধা হইবে । আর এইগলা হইল ব্যবসার ট্রেনিং । কর্ণ স্কুটারটাক ঝারি মুছিয়া একদম নৌতনের মতন করিয়া দেয় । মানষিটা চড়িয়া আনন্দ পাইবে । মালিক কইছে স্পকিং প্লাগ আর গিয়ার বাসস্থান বদলে দিবার । কর্ণর এইগলাকরির মন যায় । এই স্কুটারটাক কর্ণমেলাবার সারাই করিছে । খালি খারাপ হয় স্কুটারখান । আসলে ইয়ার দেহা থাকি নৌতন যন্ত্রপাতি মইধ্যে মইধ্যে খুলিয়া নেওয়া হয় তাে । কর্ণর বয়া নাগে । কর্ণ কণেক ভাল কাম করির চায় । ইয়াত মনত আনন্দ আইসে । কর্ণ স্কুটারখান ভাল করি পরখ করি স্টার্ট দেয় । ধাও করি শিবমন্দির চত্বরটা একপাক ঘুরি আইসে । বাহ খুউব ভাল চলেছে । কর্ণর মুখত খুশির ঝিলিক উঠে । কর্ণ স্কুটারটাক ছেয়াত খাড়া করিয়া থুইয়া কণেক জিরিয়া নেয় । মালিক ফিরিলেই উয়ায় খাবার যাইবে । কণেক চুলানি আইসে । উয়ায় মনে মনে কয়— একখান নিজের মতন সাইকেল সারাইয়ের দোকান দিবে । কুন্তিমাসির সােদে এই নিয়া মেলা শলা - পরামর্শও করিছে । মাসি কিছু সাহায্য দিবে কইছে । কর্ণর মনত খুশির দোলা লাগে । দোকানটা হয়া গেইলে কুন্তিমাসিক ধরি মালিকের বাড়ি থাকি বিরাবে । কর্ণ ব্যাড়ব্যাড়ায় । উয়ায় যেলা দোকান দিবে সেলা মালিকের নাকান অত অসৎ হইবে না । কারও সাইকেল হাতে পার্টস বির করিবে না । মেলা কাথা ভাবিতে ভাবিতে কর্ণ নিন্দাত পড়ে । একঝলক বাতাস আসিয়া উয়ার মুখের উপুরা দিয়া বয়ি যায় । দুপুরাত যানচলাচল কণেক কমি আইসে । নিন্দতে কর্ণর স্বপন ধরা দেয় । হঠাতে গালত ভীষণ জোড়ে চড় পড়ে । কি যে হইল বুঝির পায় না । কণেক বাদে উয়ার চেতন হয় । মুখের বগলত ভয়ঙ্কর সমুদ্দরের নাকান দোকানের মালিকটা । কর্ণর ভিতি তাকে গিলিবার নাগিছে । তােক কইচং না স্পকিং প্লাগ আর হিয়ার বাক্সখান বদলেয়া দিবার ? এইগুলা কি ? কর্ণ ঘুরি দাড়ে কয়— মানষির জিনিস চোর করিবার তােমার নইজ্জা নাগে না ? কি কলু ? আস্পর্ধা তাে কম না হয় ? দূর হ মাের মুখের বগল থাকি । দুধ দিয়া কালসাপ পুষিছং । রাস্তা থাকিয়া কুড়ি আনিয়া মানষি করনু । তার মুখত বড় বড় কাথা । ঢেকেয়া কর্ণক দূরত ঠেলি । ফ্যালে দেয় মালিকটা , কর্ণ মুখ থুবড়ি পড়ি যায় । গলগল করি রক্ত বিরায় উয়ার দেহাটা দিয়া । কর্ণ এমন করি পড়িয়া রইল ভালক্ষণ ধরি । তারপর একসমায় উঠিয়া ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরিয়া হাটির ধরে । শিবমন্দির এলাকায় উয়াক আর দেখায় যায় না । সগায় কয় – চ্যাংড়াটা ভালে আছিল , হঠাতে পাগলা হয় কোষ্ঠে হারে গেইল ।
দোকান মালিকটা কান্দিতে কান্দিতে কয়- চ্যাংড়াটা মাের নিজের ব্যাটার নাকান আছিল । আদর যত্ন করি বড় করনু । হঠাৎ কি যে হইল ? পাগলির নাকান একটা বেটিছাওয়াক দেখা যায় । তায় কন্ন কন্ন করি ড্যাকায় আর কয়— কন্ন ফিরি আয় বাপই , ফিরি আয় । চক্ষুর জল মুছিয়া বেটিছাওয়াটা কয়— চ্যাংড়াটা একটা সাইকেল সারেবার দোকান দিবার চাইছে তা আর হইল না । ইয়ার পরে পাগলিটাকও আর দেখা না যায় । কর্ণ কুন্তিমাসির কুন খোঁজ পায় নাই তবে উয়ার খোজ করিবে । কর্ণ ব্যাড়ব্যাড়ায় , য্যাং করি হউক মাসিক মুই খুঁজি আনিমকে । হঠাৎ কার শব্দ পায়া কর্ণপাছিলা ফেরে ।ও মাধু । শােন তাের সােদে কথা আছে । জানং তুই মাের উদ্দিশ করবু , তা মুই আসলুং অইন্য কারণে । মাধু , কুন্তিমাসি কোষ্ঠে জানিস ? জানং না । তা উমার উদ্দেশ করি কি করবু ? বিয়া থা করিয়া সংসারী হ কেনে ! অতীতক ভুলি যা । মুই যে শান্তি পাইম না মাধু । ও যে কারণে আসিছুং । কুন্তিমাসিক ধরি রাগের বশত একখান বেফাস কথা কইছং । সেইটা শােধরেবার আসিনু । এমন করি কথা কওয়া ঠিক হয় নাই মাের । মাসিটা বালাসনের জলের নাকান পবিত্র আছিল । কর্ণ উৎসুক হয়া মাধুরীর মুখের ভিতি দেখে । মাধুরী কয়— সগায় যা কয় কুন্তিমাসির যার সাথে বিয়া হবার কথা আছিল তার , মানে কুন্তিমাসি যাক ভালবাসিছিল তায় যুদ্ধত গেইছিল । যুদ্ধ থাকি ফিরলেই উমার বিয়াও হইল হয় । কিন্তুক তায় আর ফিরে নাই । যুদ্ধতে মরি গেইছে । কুন্তিমাসির প্যাটের সন্তানক কাকও দিয়া দিচ্ছে । তাক নদীত ভাসে দিছে । কর্ণ মাথাত হাত দিয়া বইসে । উয়ার চক্ষু দিয়া অবিরল ধারাত জল গড়েয়া পড়ে । মাধুরী কয় কান্দি আর কী করবু ? ভাল একটা কইনা দেখি বিয়া করি ঘর সংসার করেক । শােন , শােন মাধু , তুই মােক ছাড়িয়া যাইস না । তালে মুই বাচিম না । বাচবুনা কেনে ? কুন্তিমাসির প্যাটের সন্তানটা অবৈধ না আছিল । তার পিতৃপরিচয় আছিল । তুই যদি তার ছাওয়া হইস তালে তাে ভালে । কর্ণ কয়— তােক অংকরি কাথা কওয়াটা ঠিক হয় নাই মাের মাধু । ঠিক তাে কছিস কন্নদা । মুই রাস্তার চেংড়ি । না তুই রাস্তার চেংড়ি না হইস । তার চেয়া মুই মাের বাপ - মাওক জানং না । এইগলা কাথা কইস না । আমরা হইলং গরীব মানষি । সগায় এক । হামার বাঁচি থাকাটায় সমস্যা । যার অর্থ নাই তার সম্মানও নাই । কর্ণ কয়— তাের ভালবাসা খুব গভীর , মাধু । হা কন্নদা , কুন্তিমাসি যেমন শ্যাষদিন পইর্যন্ত তার মনের মানষির জইন্যে অপেক্ষা কইরছে , মুই যেমন তাের জইন্যে . এই কথা কয়া মাধুরী কান্দির ধরে—।
মুই তােকে বিয়া করাইম মাধু।
আরও কণেক ভাবি দেখ কন্নদা, আজি আইসােং।
আরও আসবু তাে, মাধু ?
কেনে আসিম, মুই কি তোের ভালবাসার কাঙাল ?
মুই কিন্তুক তােক ছাড়া বাঁচিম না মাধু।
তালে তুই প্রমাণ দে কেমন ভালবাসিস ?
কণেক ভালবাসার কথা ক।
মুই তােক ভালবাসােং এই কাথা কয়া কর্ণ আগে যায় মাধুরীর ভিতি।
উহু কণেক দূরত। এলায় এত নিকটত না হয় ।
কর্ণর চক্ষুর জল ছলছলে ওঠে। মাধুরী উয়ার শাড়ির আঞ্চল দিয়া চক্ষু মুছিয়া দেয় ।
কর্ণ মাধুরীর চক্ষুত চক্ষু রাখে। এ্যাং করি উমরা ভালেক্ষণ খাড়া হয়া থাকিল দোনজনে মুখামুখি
হয়া।
হালিচা:
বড় গপ্পো