ঘান্টি ফুলের কটপ—আলোচনা
শিবপ্রসাদ রায়
আইজ অবদি রাজবংশী ভাষাত যতুলা বই বিরাইছে, সেইলার মইধ্যে অভিজিৎ বর্মণের ‘ঘান্টি ফুলের কটপ’ বইখানােক আগিলাপাকে থােয়া যায়। দুই কুড়ি পাচখান কবিতা মিলি নিকিলা এইখান কবির পইলা কবিতার বই। কিন্তুক পইলা হইলেও উত্তরবঙ্গর মানষিলার গােন্দ, বিশেষ করি রাজবংশী মানষিলার ছ্যাং-ছ্যাংয়া মনােভাব, হাইল-চাইল বইখানের গােটায় গাওত ন্যারফ্যারা। ক্যাং করিয়া রাজবংশী মানষিলা চ্যাতন হইবে, ঠইতে ঠইতে ক্যাং করিয়া ঠসা নাগিচে, এ্যালাং টানাটুনা করি জীবন কাটায়— সেই কথালাক কবি উদুলি ধরিচে। ইংরাজী ভাষাত এম.এ. পাশ করিয়াও রাজবংশী ভাষাত এমন ছুলবুলা, নাদুস-নুদুস কবিতা কবি নেকিচে, যেই পইল্লে গাওখান সরসরায়, পিলাই চমকি উঠে। রাজবংশী মানষিলাক নিয়া কবির খুউব চিন্তা আছিল। সিদোলের আওটা, ঠাকুরি কালাইর ছ্যাকার ডাইল, নাপা শাকের প্যালকার কথা শুনিলে যেইলা মাইনষের জিবা দিয়া ছরছর করি জল। আইসে, শুকটা দিয়া খকরা-পন্তা খাইতে খাইতে যে মানষিলা এলা অনেকখান উচাত্ উটির ধইচ্চে, সেইলা মানষির কথা কবি পই পই করি বইখানােত ততি ধইচ্চে। আবাের সসাদে ফ্যাচের-ফোর, বউদির সােদে ত্যালেং-ত্যালেং-এর কথাও যেমন নেকিচে, ত্যামনে ‘চার দোকানী ঘ্যার-ঘ্যারুর মাও’ এর কথাও বইখানােত ভটভটা হয়া আছে— খাবার সমাই আছে দিবার সমাই নাই সাইত বউনি দূরে থাকুক তবিল কিনায় নাই।। সচা কথা, ঘ্যারঘ্যারুর মাওয়ের নাকান রাজবংশী মানষিলা দোকান করি খাইবে; সেল্লা ইমার জাতােত থাকিয়াও নাই, ক্যানেনা ইমাক সগায় ঠকাইছে। অবশ্যি এলাসেনে একনা-দুকনা হবার ধরিচে। এলা আর সহজে ঠকের না পায়। দ্যাশটাক ভাল করা, মানষিলাক ভাল করার জইন্যে কবির মনটা উতুলা আছিল। এই মতনে হয়’ কবিতাখানােত কবি নেকিচে—‘দিড়িং দাড়াং চলন বলন নেচার যদি হয় টারিবাড়ি সাগাই তােদর সগায় বয়া কয়। এইলা কথা একে জুলজুল কথা। হুশজ্ঞান না থাকিলে, হিরিং-হারাং, দিড়িং-দাড়াং করি ডিরি-মারি বেরাইলে কায় ভাল কইবে? গােটায় দুনিয়াত মানষিলা অমন নেচারের হইলে তাক কাংওয় দাম না দিবে, তাক বয়া নজরে দেইবে। ঢেকেনা-ঢেকিনি চাইরটা ছাওয়া নিয়া অভাবের দিনােত ক্যাং করিয়া সংসার চলায় তার কতাও পাই ‘দোন্দলি বেটিছাওয়া’ কবিতা ভাতারের ভাত নাই গেরামের মায়া মায়ে পুতে হাইখাই নয় খালি চায়া। খাওয়ার না পায়য়া ছাওয়া-পােয়া সগায় খালি জুলজুল করি দ্যাখে। হাটের শ্যাষ’ কবিতাখানােতাে দেখি, মানসম্মান জলােৎ ফ্যালেয়া ক্যাং করিয়া খচাপাতি করে— হঠাৎ করিয়া শরম ভাঙিয়া চিনা দোকানির অচিন হয়া চান্দানু গােলেক ঘেগা বাইগ ফেলানি দামােতে মুই। পােকানাগা, টোনাগা বাইগন হইল ঘেগা বাইগন। পাইসা না থাকিলে এইল্লা ছাড়া উমালার আর কি গতি? ‘কাটাওয়া আর খিলিপান’ কবিতাখানাে গল্পের মইধ্য দিয়া রাজবংশী মানষিলাক চ্যাতন। করির চাইছে কবি। অইন্য মানষির থাকি এলাং রাজবংশী মানষিলা কাটাগুয়া এনা হইলেও বেশী। খায়। চবন, খয়ার, চুন-এইল্লা খাইলে আলসার হয়, প্যাটো পাথর হয় সেই হুশ-জ্ঞানের কতা কবিতাখানােত খিখিসা— চবন, খয়ার, এলাই দিয়া দ্যাও পাথর চুন তামান মানষি মরিয়া সাপা নাগিবে মরক ধুন পিত্তথলি কিডনি পাথর, আলসার ক্যানসার ছাতুচ্ছান হােবেকে সগার শুটকিয়া সংসার এইল্লা শুনি ডাক্তারগিলা দিলেক হাতৎ তালি টাকার আশাৎ কোম্পানিটা বান্দিল বড় আলি। শব্দ বাছি বাছি নিয়া, উয়াক তাইনে তাইনে সাজেয়া মাইনষের হাং-হাংয়া, ডাং-ডাংয়া কতালাক কবি য্যাংকরি ততি ধইচ্চে উয়াক ‘সত্য যুগীয়া বুড়া’ কওয়া যায়। সচা কতা, চ্যাংড়াবেলাতে কবি না মইল্লে উমায় যে একঝন ডাঙ্গর কবি হইল হয়, রাজবংশী মানষিক অনেক উচাত তুলি থুইল হয়–‘ঘান্টি ফুলের কটপ’ বইখানে তার প্রমাণ।
ঘান্টি ফুলের কটপ
অভিজিৎ বর্মণ
প্রকাশক : রাজবংশী একাডেমি
প্রথম প্রকাশ : ২০০৭
মলাট : নিখিলেশ রায়
দাম : ৪০ টাকা
হালিচা:
বইপাতি আলোচনা