ভাওয়াইয়া ভাবেনা - ভগীরথ দাস bhawaiya though - bhagirath dash

ভাওয়াইয়া ভাবেনা 
ভগীরথ দাস

ভাবান গান নায়তা ভাওয়াইয়া গানের কথা বা আওবাওক নিয়া ভাবনা - চিন্তাক ভাগ করি নিবার যায়া শ্যেষত আওবাওক ভাওয়াইয়াত যায়া পড়মাে জানঙ ; কোচাল হাতে বিরির বাদে তায় সহজিয়া ঘাটা ধরাে , উয়াতে ভাগ করি নিবার পামাে ভাওয়াইয়া - ভাবনাক । এক্কেবারে পৈলাতে কঞা থােঙ , ভাওয়াইয়ার ভাষা কৈলে যেকেনা ঝলঝলা সেকিনার দোনােপাকে দোষ ধরি বিপদত পড়া খাবে জানিয়া এটি ভাষার ব্যেগল শব্দ হিসেবত ‘ কথা’ক মানি নিবার চাঙ ; যদিও ‘ ভাষা ’ ও ‘ কথা’র ভিতিরা ফারাক বােল উনার স্পষ্টতাক নিয়া ; গানের কারবারি ঘরক সে নেয়ম মানি চলা সম্ভবে নােয়ায় । শৈলেন্দ্রনাথ বর্মণের ‘ ওকি বাপরে বাপ ... গানত আছে , “ ছাওয়ায় পােয়ায় প্যাতপ্যানী শুনির মনায় না , তাতে মরার ঘ্যাচঘ্যাচানী শরীলে সয় না কত গােদগগাদানী সার ’ , কথার ভাবব্যঞ্জনা গিদাল কি - বা কবার চান বােঝায় যায় , কিন্তুক ভাষালার দিক থাকি ‘ প্যাতপ্যানী , ঘ্যাচঘ্যাচানী , গােদগােদানী’র ধ্বন্যাত্মক - বিশেষণ ছাড়া অর্থহীন , প্রয়ােগও যথাযথ বলা যাবার নয় । তায় ভাষা ’ ও ‘ কথা’র এইনাকানে পার্থক্য থাকিলেও তাক অতিক্রম করি ভাওয়াইয়ার কথা নিযা আগামমা । বাংলাগানের সগারে আগিলা গীতিকার বােধায় জয়দেব আজি হাতে নয়শত বছর আতাত যে - নাকান ‘ মধুর কোমলকান্ত পদাবলী ’ ‘ গীতগােবিন্দম্ শুনাইছে , গানের সেই গােড়েয়া গুলা যেইল্লাত মধুর কোমল শুনিবার সুখ ভাওয়াইয়ার ভিতিরা পাওয়ায় যায় , তা সেই কথা - সুর বাথান থাকিই ভাসি আসুক নায়তা ঐন্য কোনােটে হাতে । এইল্লা গানের গিদালতাে কথা ও সুরের তাল - লয় নিয়া ভাবে নাই ; ভাবিবার কতাও নােজ্ঞায় । তামানলা ভাবের কথা খালি সুরেই প্রাধান্য পায়ছিলাে বুলি কানের হাতে প্রাণকেই ভাইল্লা আকর্ষণ করছিলাে বুলিই প্রাণের আবেগ প্রাণের বাসনা রুধিয়া রাখিতে পারে নাই কাঙোয় । ফিরানিত ভাওয়াইয়ার কথাতে যিলার ভাবের প্রবাহ বইয়ে দিচে তামানলার কাঙোরে কবি বুলি নাম না ছেল পইলাহাতে । ভালদিন পরে ভাওয়াইয়া সংরক্ষণের দিনে , তুলি রাখিবার দিনত আসি তার খানেক বদল ঘটি গেইচে । লেখাইয়া যেনাকান ভাষা নািয় খেলা কইরতে কইরতেই কবিতার জন্ম দেন , সেই নাকান করি ভাওয়াইয়াক যারা রূপ দিছে , সেইল্লা বাছারবাড়ির - গিদালঘর ( ঘরের বায়রা সৌগে বাথান বা বাছারবাড়ি ) কথাকে নিয়ে খেলেবার যায় নাই ; উমারলাকে ঘিরি ছেল ভাব - উজ্জীবক স্বপন , যাক দেইখতে ঘরের কৈনালা ; মনােত থােন , ভাওয়াইয়ার গিদাল / গিদালী বােল ঘরের কৈলায় , ব্যেটামানষি নােঞায় । ভাওয়াইয়া ছাড়া আর কোনয় গানের ভিতিরা এই নাকান অনুসঙ্গ উকটি পাবার যাবার নােয় । একিনায় আশ্চর্য । কতালা পরিস্কার হয় যদি ভাওয়াইয়ার ভেরিওরাম নিয়া কাঙো তলতি দেকির যান । সেটি মৈশালের গালাহাতে গান নাই , আছে খালি উনাকে উদ্দিশ করি ঘরের কৈনা - মাইয়ালার কান্দোন , মনের বেদন । ঘরত বন্দি থাকা নারীর কাছে শ্বশুর - শাশুড়ী ননদি - ভাসুর সগায় মিলি সংসার বিষাদময় , যেনাকান ‘ প্রেমহীন তিক্তকাম রাত্রি ’ উনাক অস্থির করি তুলিছে । তলেয়ে দেকিলে পাওয়া যাবে ভারতীয় এপিকের আবেশময় দিকনার বাস্তবচিত্র ভাওয়াইয়ার গানত র গেইচে , যে নাকান কৃষ্ণ ও রাধার মইধ্যত অসংলগ্ন সম্পৃক্ত চিত্রও । জড়ের সুদে চৈতন্যের সংগ্রাম এই গান বনে এই গান গাঞা মহাভারতের বীরলা যেনাকান অসাধ্য সাধন করিছে , ভাওয়াইয়ার পুরাতন সাধক গিদালেরঘর বাছারবাড়ি বা বাথানহাতে সেকেনায় করিছে । সবার অলক্ষ্যে কত কত বনভূমিময় বড় বড় গাছেদের দু’চারটি নজরে আসে কখনও - বা , সেগুলির এক একটির নাম সুরেন - আব্বাস - নায়েব - প্রতিম সুনীল ’ । লৈক্ষ্য করার বিষয় এরা কাওএ বাথান হাতে আইসা নােয় ; তাইলে এদেরও বহু আগের মরি যাওয়া বটবৃক্ষলার কথা কায় আর মনত রাখিচে ? কুল্লোয় কথায় সেইল্লা আজি হয়তাে প্রচলিত প্রচলিত আর প্রচলিত । সুতরাং ভাওয়াইয়ার প্রাতিষ্ঠানিক যুগ বা সুবর্ণ যুগের সন্তান এরা , সুরেন - আব্বাসনায়েব - প্রতিমা - সুনীলেরা । ইমারলার সগারে কপালােত জুটিছে কথাকে বাঁন্ধি রাখিবার বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি বা বলা ভাল সেই প্রযুক্তিকে সামনে রাখি বণিকের মুনাফা কৌশল ; তা হােক , তবুওতাে তারই ফলশ্রুতিতে তারা থাকি গেইলেন অনন্ত ভবিষ্যতের উদ্যানবাটিত । এছাড়াও ইমার কাঙোর জুটিছে নজরুলের সান্নিধ্য , প্রাতিষ্ঠানিক সংস্পর্শ , প্রথানুগত ঘরানা সঙ্গীতশিক্ষা ইত্যাদি । প্রাতিষ্ঠানিক যুগের সুরেন্দ্রনাথ রায় বসুনীয়া , আব্বাসউদ্দিন আহমেদ , নায়েব আলি টেপু ইমারলার জন্ম শতবর্ষ পাড় হএ গেইছে । ভাওয়াইয়ার কথার ভাবসুর ভালেকোনায় পুরানা ; কতটা পুরানা সেকেন্নায় অনুমেয় । পুরাতন সমাজ ব্যবস্থার যেকিনা আজিও চালিত রাজবংশী সমাজের ভিতিরা , তার অন্তস্রোতে থাকি গেইচে ভাবান গান ’ বা ভাওয়াইয়া ' ; মাঝে বিজ্ঞানের আবিষ্কার তাক আগে দিছে । বিজ্ঞানের বড় আবিষ্কার কথা বা ধনিকে ধরি রাখিবার ব্যবস্থা , ঠিক স্যেলায় বাণিজ্যিক সুবিধাভােগীঘরের হাত ধরি ভাওয়াইয়ার গতি খরস্রোতে পড়ে , রূপ থাকি রূপান্তরে আইসার ঘাটাত কতকোনা পরিবর্তন ঘটি গেইল সেকিনা ভাবি দেখেনা কাঙোয় । উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রাজবংশী সমাজের মানষিলার গভীরতর আকাঙ্খর গান উঠি আইসে বাইয়ার জগতের পাদপ্রদীপে লােকসঙ্গীতের পরিচয় নিয়া । গিদালঘরের বাঁচি থাকিবার সংস্থান কিন্তুক এটে মিটি যাবার কথা , তা কিন্তুক সম্ভব হৈলেক না ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাপত্র তাক সম্ভব হবার দেয় নাই । এই নাকানে হৈচে , চটকদারি গান বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রোতােলার বা কেনাইয়াঘরের পছন্দের জানিয়াও সেই নাকানে গানের গ্রামােফোন রেকর্ড সৌগটে বাজাইল , বাজার পাইল । উত্তরবঙ্গত এই নাকানে চটকদারি গানতাে এইঠাকার মানযিলার হিয়ার ভিতরা থাকি উটি আইসা ভাবান গান যার ভিতরা থাকি বাছি নেওয়া গেইলেক চটকদারি গান , যে গানের লয় দ্রুত হওয়াটাই স্বাভাবিক , তাকে কওয়া হৈলেক চটকা । নানান ঢাকের বাদে আর বাণিজ্যিক লাভের কথা ভাবি ভাওয়াইয়া গানের ভিতিরা কতুলা ভাগ আসিল দরিয়া , চটকা , চিতান , ক্ষীরােল এই নাকানে নাম । গ্রামােফোন কোম্পানির গুরু দায়িত্বে থাকিবার সমায় নজরুল ইসলাম কুচবিহারে আসি স্কুলের মিলাদউৎসবে পাা যায় সুললিত গালার গিদাল আব্বাসক । আব্বাসের গালার কৈনালিভাবক কাজে লাগে ভাওয়াইয়া গান , ইসলামী গান ইত্যাদি রেকর্ড করি ফ্যেলায় । কুচবিহারে দিনহাটায় রেডিও গ্রামােফোন ব্যবসায়ী হরিশ পালের হাত ধরি একদল ভাওয়াইয়ার গিদাল নিজের কথা ও সুরক বন্দি করির পাইলেন গ্রামােফোনে , রেকর্ডে সেই তুলকালাম কান্ড হাতে ভাওয়াইয়া গানের আর কেনা যুগ উপজন হৈলেক।

Post a Comment

Previous Post Next Post