ভাওয়াইয়া গানের তিন বহর - কামেশ্বর রায় Bhawaiya songs three bahar - Kameshwar roy

ভাওয়াইয়া গানের তিন বহর
কামেশ্বর রায় 

হিত্তিহুত্তি না হাস্তেয়া , ঘরের কথায় কওয়া যাউক । হামার এই উত্তরবাংলা , বাংলাদেশের কিছু অংশ , আসাম রাইজ্যের এক ভাগ নিয়া এই অঞ্চলটার কুল্লায় মানষিগিলার মনের কথা , প্রাণের সুর , হিদ্দের আকুল কাউলানি , জ্বালা , চিন্তা , ভাবেনা , সুখ - দুখ , হাসি - কান্দন , রং তামাসা , উদ্দাং আর গােপন জীবনের যত কিছু আচে , তামানলাকে ঝুমকুট্টি বান্ধি , বােঝা বান্ধি বহন করি আইসা , তামান মানষির খুব কাছের , খুব আপন , সগারে আদরের হামার ভাওয়াইয়া সঙ্গীত । আর এই ভাওয়াইয়া সংগীতের গাের কোঠে আর আগাল কোঠে উকটা - উকটি করি ঘুংটিতে ঘুংটিতে ঝেল্লা নাগি গে , তাও তার উদ্দিশ পােয়া গেল না । কাথায় কয় , হরি নামের নাই ওর । যেঠে ধরিমাে সেঠে গাের । ভাওয়াইয়া সংগীতের বেলাতেও কাথাটা হদ্দে মােকামে খাটে । কুনটা যে গাের আর কুনটা যে আগাল , আর কুনটা যে ফেকা , বুঝা বড় কঠিন । তার বাদে নানান ঝনে নানান কথা আছে , নানা মুনির নানা মত ’ । আসলে বহুদিনের এই ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের ধারাটা বহরে বহরে কলপ ছাড়িসে । আর কালে কালে বহরে বহরে কল্পিতে কল্পিতে কুনটা যে আসল গাের , আর কুনটা যে বুড়া বটগাছের মতন উপর হাতে নামি আইসা জট , ঐটায় অংশে পাবার বাদে , অনদিশার আন্ধারােত হাস্তা হাস্তি । কাঁহ কাঁহ বহুত খুদরি উকটি , নারিঘাটি দেখিয়া কচে , এই সঙ্গীতের ধারাটা হাজার বছর দেড়েকের পুরানা । তার বেশিও হবার পারে । আরাে ভাল করি বিচিরি দেখিবার নাগিবে । তবে পাঁচসাত শত বছর আগােত থাকি । নিসুটার একটা ঝাপসা পরমান পােয়া যাছে । তারা আগে থাকি ভৈভৈ করি ভটভট করি দেখিবার তানে নারাঘাটা চলেছে । তবে প্রায় আড়াই তিন শত বছর থাকি ভটভট করি দেখা যাবার ধরসে । ঢেল্লা মানীগুনী মানষির মুখখাত শুনা যাছে যে , দুই আড়াইশত বছর আগােত এই সঙ্গীত ধারাটার ‘ ভাওয়াইয়া নামটা নাছিলাে । যেমন আছিল সেইটা হচে । কুনঠে মৈশালের গান , বাউদিয়ার গান বা উদাসী গান এই না হাতি ঢেল্লা নামে পরিচয় আছিলাে । হিলা বহু পূর্বকালিয়া কথা । তারপর য্যেলা গালা সমাজের এক জাখিনি মানষির ভালাে নাগিল স্যেলা কনেক নাড়াঘাটা করিয়া জানির পাল্লেক যে হিলা গান ঐ ভাওয়া বাড়ী অর্থাৎ নির্জন নদীর জর বা গেরাম থাকি বহুদূরের পতিত জলা জমির উত্তি হাতে , মইশ চরা মৈশাল বা গরুচরা আখুলিয়াগিলার মুখ হাতে উমারে গালা থাকি বিরি আইসেছে ঐ পাগেলা করা গানের সুর । নিশারাতি গাড়ি বােওয়া - যাওয়া নিধুয়া পাথার ঘাড় - জঙ্গলের ঘাটা দিয়া যাওয়া গাড়িয়ালতারও গালাত ঐ গানের সুর । গ্রাম সমাজের আকাশ বাতাস ভাসি বেড়েবার ধপ্লেক । সেই গান সমাজের কিছু উদাসী বাউদিয়া গােছের মানষিও গাবার ধরি। তার যদি কনেক নিসু ধরি দেওয়া যায়,
তাইলে সমাজের উদাসী বা বাউদিয়া মানষিলার পরিচয় পাওয়া যাবে। গানের কথা গান
দিয়ায় কওয়া ভালাে। এঠে একখান গানের কথায় তুলি ধরিনু :
“আরে কাঠোল খুটার ওরে দোতরা
তুই করিলু মােক ঘরের বায়রা।
যেইদিন দোতরা তােক নিনু হাতে
মন্দ বাসে মােক পাড়ার লােকে
মন্দ বাসে মােক পাড়ার পরশী।
আজি কিন্তুক ঐ উদাসী বা বাউদিয়া মানষির কাথা মানষি ভুলি গেইসে। যেমন ভুলিসে
আখুলিয়া গিলাক। কিন্তু উমার চিন, উমুরা এই ভাওয়াইয়া গানের ভিতরে থুইয়া গেইসে।
তারবাদে ঐ গরু চরা আখুলিয়াগিলার দুই এখখান পরমান গানের কাথার মধ্যে দিয়ায় দিবার
চেষ্টা করি।
বলদ নরাং বলদ চরাং ও
ও হাে কৈন্যা, বলদক মারং ওরে কোরা,
বলদের পৃষ্ঠে তুলিয়া দিছং মাের
সারিঞ্জা দোতরা কইন্যা হে।
(দুই)
‘গরু বাড়ি যাইসরে বাপই, গান টানিয়া,
আলেছালে বিরিয়া দেখং, ঢুলকি মারিয়া,
ইশিরা করি ডাকাং বাপপাই
তবুরে
শুনিস না।”
(গানের কলি দুটি আব্বাসউদ্দিন সাহেবের আমলের রেকর্ড)
(তিন)
কারবা বলদা দিদিলো, ঘাটা বান্ধিসে
নিষ্ঠুর বলদা টিসিয়া দিদি মাের
কলসি ভাঙিসে দিদিলাে
কলসি ভাঙ্গিলাে নদীর ঘাটে।
(চার)
“ওরে যেলা বাপপই তুই গরু বাড়ীত
সেলা মুই আন্ধেছ ক্ষীর
আলেছালে মুই বাহির হইয়া চাও
বাপােইরে, ওহাে বাগপাই
মাের বাদে আর কান্দিস না
পাক পাড়িলে পাড়ার চেংড়া।
(পাঁচ ) 
পাবু নারে মােক পাবু না । ( গানের কলি দুটি প্রচলিত ) ‘ বাড়ার আগােত গরুরে বান্দিস পারিস ঘন পাক , ওকি ওহাে রে আলেছালে মুই তেমন , তুলং বথুয়া শাক রে । তুই করিলু মােক ঘরের বাহেরা । ( তিস্তাপাড়ের অনুষ্ঠান , পূর্ব বাংলার রংপুর রেডিও থেকে সংগৃহীত ) ভাওয়াইয়া গানের মৈশাল , গাড়িয়াল নিয়া মেলা আলােচনা হৈছে , কিন্তুক বাউদিয়া বা উদাসী বা আখুলিয়াক নয়া তেমন কাথা খুব একটা শুনা যায় নাই । যাইহােক এই নাহান । কিছু ‘ ভাও ’ করা মানষি , আর ভাওয়া বাড়ী হাতে ভাসি আইসা গান গিলাক মানষি ‘ ভাওয়ান বা ভাউয়ান গান ’ বুলি মানি নিলেক । তার পরমান আব্বাসউদ্দিন সাহেবের ঘরের সমকালিন একখান গানােত পােয়া যাছে । গানের কলিঃ ‘ চেতন পায়া নিশারাতি , শুনেছ মুই দুই কান পাতি , এত রাতি কায় যায় গান করিয়া । ঐনা ভাওয়ান গানের সুরে । চিন চিন লাগে মােরে মনে হয় বন্ধুয়া হইতে পারে । আশা করং , ভাওয়ান গান ’ নামের পাছােত আর বেশি কথা না কোওয়ায় ভাল । তবে একটা কথা না কোলে হবে না , ভাওয়াইয়া গান ’ কল ” ছাড়িতে ছাড়িতে ভাউয়ান থাকি ভাওয়াইয়া হওয়ার পাছােত যেই ব্যাখ্যা গিলা পােয়া যাছে , তাত্তে কাঁহ কছে , ভাব যােগ ইয়া সমান বাওয়াইয়া । এটায় ঠিক । আর নগৎ আরাে কলেক স্মরণ করি দেও । যতদূর জানা যায় , এই ভাউয়ান বা ভাওয়াইয়া বা উদাসী বাউদিয়া মানষির গানলাক সেই সময়কার সমাজ খুব ভালাে চোখে দেখে নাই । তার বাদে বাড়ীর বৌ - বেটিলার কানত যাতে ঐ গানের সুর না যায় , তার বাদে সেই সময়ের সমাজ থাকি এই গানগিলাক ভাও করি থােওয়া হইসিলাে । কিন্তুক জান বান্দা যায় , কান বান্ধা না যায় । নিধুয়া পাথারের , নিশারাতি পথ চলতি বাউদিয়া গাড়িয়াল , ভাওয়াবাড়ী হাতে বাসি আইসা নিঃসঙ্গ জীবনের , ঐ মৈশাল , গাড়িয়াল , আশুলিয়া , উদাসী বাউদিয়া , মানযিলার উদ্দাং মনের দূর হাতে ভাসি আইসা নিশুতি আত্রি দিঘােল গানের সুরখান সমাজের কুন বাধা , কুন শাসন মানে নাই । সেই দিনকার ঐ সুরখান নিধুয়া পাথারের ডাবুরীবাড়ী , ভাওয়া বাড়ী থাকি খলতার মাথা , ডারিঘর , থাকিবার ঘর থাকি এলা এখেবারে আংশালি বাড়ীত সন্দে গেল । গ্রামােফোন কলের গানের যুগ আসিবার পরে থাকি উত্তরবাংলার একঝাক গীদাল গীদালি শ্রদ্ধেয় হরিশ পালের হাত ধরি এই ভাওয়াইয়া সঙ্গীতােক গােটায় দুনিয়াটার কোনায় কোনায় কানে কানে মনে মনে । মুখে মুখে ছওকার করি দিল । সেই সমায় থাকি ভাওয়াইয়া সঙ্গীত নামটারাে বাহালিত হইল । ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের সােনার যুগ সেই মহামানষিলার হাত ধরি শুরু হৈ । উনার সােগাকে হাজারােবার ডােভােবােত করেছ । শ্রদ্ধেয় হরিশ পাল , আব্বাসউদ্দিন সাহেব , নায়েব আলি । টেপু মিঞা , আব্দুল করিম , সুরেন্দ্রনাথ বসুনীয়া , গঙ্গাধর দাস , কেশব বর্মর , যত্নেশ্বর বর্মণ , কেদার চক্রবর্তী , গােপাল দে , টগর অধিকারী , গঙ্গাচরণ বিশ্বাস , প্যারীমােহন দাস , হেমলতা ঘােষ , ধীরেন সরকার বিরজা সেন , চিন্তাহরণ রায় , সুরেন দাস , সুখচন্দ খােট্টা , শ্রীসুনীল দাস , শ্রীধনেশ্বর রায় , নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায় , স্মৃতি বসু ( রায় চৌধুরী ) , শেফালী সরকার ( বসু ) , মীনা দত্ত আমার এই বাংলা আসামের সগ্নারে প্রাণের সম্পদ প্রাতঃস্মরণীয়া প্রতিমা বড়ুয়া ( পান্ডে ) , ড . ভূপেন হাজারিকা সগায় মিলিয়া ভাওয়াইয়া গানক যে উচোল থানত জাগা বানে দিচে , তার বাদে উমাক সগাকে মুই আরাে একবার ডােডােবােত জানায় । তবে এইটা একটা খুব নজরকারা কাথা আচে , একবার ভাবি দেখতাে , এক্সা নামের মধ্য রায় বর্মণ পদবীর কুন মহিলা শিল্পী আছে কি ? নাই বােধায় । এই কাথাটা কবার বাদে মনটা খুলবুল করেছে । সেই কাল থাকি হামার ঠিক আগিলা কাল পর্যন্ত , কুন মহিলা এই গান করিবার তাে দূর , শুনিবার মানা আছিলাে । সমাজের একটা অংশক এই গান থাকি পুরাপুরি ভাও করি থােওয়া হইসিলাে । সেই কাথাটা সগাকে আরাে একবার স্মরণ করি দিনু । এই নাহান করি প্রায় তিন চাইর দশক এক নাগারে চলিতে চলিতে , ১৯৬০ এর পর অল্প কয় বছর কনেক ভাটার টান । পরিসিলা । তারপর গ্রামােফোন পালটিয়া রেকর্ড প্লেয়ার , বড় মাটির রেকর্ড পালটিয়া ছােট এল.পি। প্লাসটিকের রেকর্ডএর যুগ শুরু হােলে , সত্তুরের দশকে আরাে একবার ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের উজাই নাগিল । ঐ সময়ে কার্শিয়াং আর আকাশবানী শিলিগুড়ি থাকিয়াও নিয়ম করি ভাওয়াইয়া গানের প্রচার শুরু হৈল । কিছু পুরানা আর নয়া মিশােল হয়া আরাে একঝাঁক শিল্পী চাইরােপাকে নামে যশে হৈ হৈ রৈ রৈ করি বেড়েবার ধরিল । তার মইধ্যে মুইও একঝন । তাতে দেখা গেইল পুরানা বহরের পরে আব্বাসবাবুর ঘরের বহর , আর এই তৃতীয়া বহরে আগের একবার ভাওয়াইয়া গানের কলপ ছাড়িল । গান গাওয়ার ঢং , কাথা , সুর তামানে আরাে একবার কল্পি গেইল । ভালে কনেক নক নিয়া ভাওয়াইয়া সঙ্গীত তৃতীয়বার মুকুইলৈ । হিপাকে পশ্চিমবাংলার সরকার পালটিয়া , নয়া সরকারটা গ্রাম্য সংস্কৃতির পাখে নজর দিল । আশির দশক ( ১৯৮০ ) থাকি শুরু হৈল ব্লক স্তরে জেলা স্তরে আঞ্চলিক স্তরে ও রাজ্য স্তরে লােকসংস্কৃতি উৎসব , ওয়ার্কশপ । তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের হাতােত দায়িত্ব দিয়া , লােকসংস্কৃতির এই উৎসব , ওয়ার্কশপগিলা চলিবার ধরিল । কওয়া যায় ঐ সমায় গােটায় বাংলার গ্রাম্য সংস্কৃতি , লােকসংস্কৃতি , লােকসঙ্গীত
সংস্কৃতির উজাই না হয় , একেবারে বানায়ে উঠিল । আর ঐ বানার জলত বৈরাগী মাছের নাকান ঝাকে ঝাকে শিল্পী গাও ভাসেবার উজান ভাটি করির ধােল্লেক । এইল্লা দেখিয়া পশ্চিমবাংলা সরকার আশির দশকের শেষাশেষি , ব্লক স্তর থাকি রাজ্য স্তরে বাওয়াইয়া সঙ্গ শত প্রতিযােগিতার ব্যাবস্থা কোরেছে । ঐ প্রতিযােগিতা আজিও চলেছে । হিপাকে গ্রামােফোন তলাইল । রেকর্ড প্লেয়ার তাও তলাইল । শুরু হৈল টেপ রেকর্ড আর অডিও ক্যাসেটের যুগ । চৈতে চৈতে খুব কম সময়ে তাও তলে যাঞা এলা চলেছে সিডি , ভিসিডি , ডিভিডি , আর মােবাইল ফোনের চিপএর যুগ । এই যুগােত ঘরে ঘরে গিদাল গিদালী বিড়াইল । পাড়ায় পাড়ায় গান নেখাইয়ার জন্ম হৈ । মানির নাগিবে ভাওয়াইয়া গানের প্রচার পসার দারুন ভাবে বাড়ি গেইল । কিন্তুক মাের মনে হচ্ছে- গানের মানটা বােধায় কমি গেইল । গিদাল গিদালী , নেখাইয়া , গাওয়াইয়া সগারে মধ্যের সম্মানটা বােধায় কোনা তলানীত ঠেকি গেইল , এই মলতানে মনে হচে । সেই কাথা সমায়ে কবার পারিবে । ক্যানে না পূর্বের কথা না হয় বাদে দিনু ; তারপাছত নায়েব আলি টেপু , আব্বাসউদ্দিন সাহেবের ঘর তাে হামার ভগবানের আসনত বসিয়ায় আছে , আর হামার কালান্তে ? হামার কালান্তে দুই মতােন নজর পড়েছে । কনেক ভাঙ্গি চিরি কও । এই ধর আশির দশক । কুন মানষির আগােতে বা কুন সরকারী আফিসাে , যেইল্লা অফিসােত গান বাজনা নিয়া কাম কাজ হয় । ওটে যা যদি গিদাল বা শিল্পী পরিচয় দেওয়া যায় , তাহলে যেই আদর সম্মান পাওয়া গেইসিলাে আর আজিকালি ? এই ২০১৫-১৬ সালে তার উল্টায় মনে হছে । কাথায় কয় , কলিকালে বৈষ্টম বৈরাগী হৈসে থাউ থান্ড । থাউক করি ভাগ ভক্তি , ভিক্ষা পােওয়া ধাউ । কনে যদি চখু আর কানটা জাগে থােওয়া যায় , তাহলে পদে পদে এই কাথাটা হিদ্দোত্ যা ডাং খাবে । তাহলে কাথাটাক এই মতােন কোলে কেমন হবে ? এই লােকসংগীত , লােককৃষ্টি , লােকসংস্কৃতির কর্মকান্ডের যুগােত , উথাল পাতাল বানার জল উপুরােতে গুলুঞ্চা - গুলুঞ্চি করিলেও , ভিতরে ভিতরে ফন্ধু নদীটার যে কি দশা হচে , হুটা জানায় জানিবে । দ্বিতীয়তঃ ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের প্রতিযােগিতা বছর বছর হচে। তাতে হাজার হাজার গিদাল গিদালী দেখা যাছে । কাহাকে ছােট না করিয়া একটা কথা কবার চাঞ , উমার সগারে তালি মাথি কতখান ? কাহ কি উকটি দেখিসেন ? আসলে দোসটা উমার না হয় , দোষটা হামার । কারণ প্রতিযােগিতাতাে হচে— “ দরিয়া ’ আর ‘ চটকা’র দুইটা বিভাগত । কাজে কাজে ঐ দুই মতন গানের উপুরােত সারা বছরে বেশি করি জোর দেওয়া হয় । ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের আরাে যে মেল্লা ধারা উপধারা আছে , হুপাখে যাবার তানে না আছে । হামার শিল্পীরে তাগিদ , না আছে সরকারের । এই ফাঁক দিয়া বাকি পরা বিরাট একটা অংশ উসুরী পালাচ্ছে । ধীরে ধীরে আনদিশার আন্ধারােত হারে যাবার ধরিসে । হুলাক অংসে আনিয়া বাচেবত্তে থুবার কামটা কায় করিবে ? আজিও কি সেই কাথাটা ভাবিবার দিন আইসে নাই ? বহুত ভাবি চিন্তি মুক্তচিন্তা লােকসঙ্গীত আকাডেমি সেই কামটা শুরু করিসে । তারপরেও তল - উপাের ভাবি চিন্তি তােমার সগারেঠে মুই আটুশ করেছ । বিশেষ করি সরকারেঠে আব্দার ।। এক ) উঠতি গিদাল গিদালীলার বাদে ভাওয়াইয়া সঙ্গীত প্রতিযােগিতা যেমন চলেছে চলুক । তার নগৎ দরিয়া চটকা বাদেও আরাে যে ভাওয়াইয়া । তের বিষয়লা আছে হুলার পাখেও নজর দেওয়া হোক । দুই ) বন্ধ হঞা যাওয়া লােকসংস্কৃতি উৎসব ওয়ার্কশপ আরাে চালু করা হোক । কেনেনা লােকসংস্কৃতি উৎসবের মইধ্য দিয়া খালি ভাওয়াইয়া সঙ্গীত না হয় গােটায় বাংলার হরেক কিসিম লােকসঙ্গীত লােককৃষ্টি লােকসংস্কৃতির ধারা উপধারা , হারে যাওয়া আকারির কৃষ্টি সংস্কৃতি সঙ্গীত সংস্কার তামানলাকে মেলি ধরা সম্ভব । তাহলে আরাে বহু অজানাক জানা যাবে । ঝেমকেটা নাগা ঠাইলগিলাও আরাে না করি মৌলাবে । না হােলে , উদেগাতে লাভ হােলেও ভীবষ্যতের ধ্বংসটাক কুনমতে আটকা যাবে না । তারবাদে খালি সরকার না হয় , গােটায় সমাজটাক বেশি করি হামার গিদাল গিদালী লেখাইয়া ভাবাইয়া । মানীগুনী জাতাি অজাইতা সগাকে আগে আসিয়া হাল ধরিবার নাগিবে । হামার তিনপুরানিয়া । কৃষ্টি , সঙ্গীত , সংস্কৃতি তামানলাকে খুদরিউকটি অংসে আনিয়া দুনিয়ার অগােত মেলি ধরিবার নাগিবে । তাহলে হামেরা বুক চাপেরে কবার পারিমু দ্যাখ হামার তিন পুরানিয়া পূর্বযুগের মানষি , তােমরা তারে যােগ্য উত্তরসূরী । তােমার কৃষ্টি , তােমার সংস্কৃতি , তােমার গান । হামেরা ভুলি নাই , আমরা দুইসি তার মান । কায় মান দেয়তে দোউক , না দ্যেয়তে নাই । হামেরা দিসি হামেরা না হােলে ‘ আছিনি দৈ , হােলি খৈ , হৈতে হৈতে আরাে - বা কি হৈ?

Post a Comment

Previous Post Next Post