গাড়িয়াল বন্ধু” পর্ব-৫ —মিজানুর রহমান

গাড়িয়াল বন্ধু - ৫
মিজানুর রহমান

মেহের আলী ছোটবেলাত খুব দুষ্টু কিছেমের আছলো, কিন্তু সংসারের কাজ-কামে আর ভাইয়ের শাসনে, আস্তে আস্তে এ্যামন সোজা হয়া গেইল- যে উয়ার মতোন একটা ছেলে এ্যালা দশ গ্রামোত পাওয়া যায় না। অনতোন করি মেহের আলীর আটটা বছর ভাই-ভাবীর সংসারোত কাটি গেইল। মেহের আলীর বয়স এলা আঠার বছর। মেহের আলীর ঘরে গরুর হাল আছিল। মেহের আলী একদিন উয়ার বড় ভাই মেসের আলি'ক কইল- ভাই গরুর হাল তো আছে তা এ্যাকখান গরুর গাড়ি বানেয়া নেই। হালো বোয়া হইবে গরুর গাড়ির ভাড়া মারিয়া দুইটা বাড়তি পাইসাও আসবে । মেসের আলী ছোট ভাইয়ের কথাতে উয়াক গরুর গাড়ি বানেয়া দেইল।গরুর গাড়ি বানাতে চিলকি ভাবিও ম্যালা খুশি। চিলকি ভাবি মেহের আলিক ডাকেয়া কয় -
শোনো ও মোর সোনার চান
কলিজার আধঘান
নায়া গাড়িত চড়েয়া ও মোক এ্যাকনা ঘুড়িবার-ও নিগান।
ওমোর চিলকি ভাবিধন
ক্যানে এ্যামনে কথা কন
মোর মনের কথাকোনা ক্যান
তোমরা শুনিবার না চান।
মোর যে মনোত ম্যালা আশা
প্রত্তম গাড়িত তুলিম তোমাক,
মনটা মোর যেদিক যাবার চায়
ওইদিকে গাড়ি দেইম মুই হা..ক।
শুরু হয়ে গেইল মেহের আলীর গরুর গাড়ি চলা। সংসারোত কাজও করে
ফাঁকে ফাঁকে গরুর গাড়ির ভাড়াও মারে। কোন সময় মাল টানে কোন সময় বা নাইওরি আনা-নেওয়া করে। আগেকার জুগোত কারো বিয়াও-বাদি হইলে বিয়ার বরযাত্রী গরুর গাড়িত চড়িয়া যাওয়া আইসা করছিল। ছই তোলা গরুর গাড়ি লাইন ধরি একটার পর একটা গেছিলো। মেহের আলীও মাঝেমধ্যে বিয়ার ভাড়া মারা শুরু করিল। একদিন উয়ার গ্রাম সমন্ধে চাজির ব্যাটা ভাই এর বিয়ের ভরা গেইল। বিয়াতে পনেরো খান গরুর গাড়ি। পনেরোখান গরুর গাড়ির মধ্যে মেহের আলীর গরুর গাড়িখান হইল নয়া, ঐতক্নে বরযাত্রী উবা-উবির জইন্য বিয়াও বাড়ির বরের লোকজন মেহের আলীর গাড়িখান পছন্দ করি নেইল। বরোক নিয়া গেল কইন্যার বাড়ি। বিয়াও শাদী খাওয়া-দাওয়া বিদায় আদায় শ্যাষোত কইন্যার সথে গাড়িত তুলে দেইল দানিবুড়ি হিসেবে কইন্যার নানি আর কইনার ১৫/১৬ বছরের এ্যাকনা খালাতো বৈনোক। বরযাত্রীর ঘরোক ধরি ফিরতি পথে পনেরো খান গরুর গাড়ি সাইরধরি বরের বাড়ির দিকে রওনা হইল। গাড়ির ভেতরোত কইন্যার খালাতো বৈনেক বোলে উকুশ-পুকুশ নাগে। ওই তক্নে গাড়ির ছইয়ের সামনোত গাড়িয়াল মেহের আলীর পাচ-পাকে কইন্যার খালাতো বৈনোক বসে দেইল। ক্যরোত কোরোত করি গরুর গাড়ি যাইতে আছে, পাছপাকের দানিবুড়ি চিংড়ি কোনাক দেখি মেহের আলীর মন উতলি উঠির ধরিল। গাড়ির ছই কাপড়া দিয়া ঢাকা। কাপড়ার বাইরোত গাড়িয়াল আর দানিবুড়ি চেংড়িকোনা। দানিবুড়ি চিংড়ি কোনা দেখতে খুবই সুন্দর। গাড়ি এ্যাকনা আগায় আর গাড়িয়াল পাছ পাকে ঘুরি দ্যাখে ফির এ্যাকনা আগায় ফির পাছপাকে ঘুরি দ্যাখে। দুইঝনের মনোত কেমন জানি ধক্কর ধক্কর শুরু করিল। এ্যানতোন করতে করতে চেংড়িকোনা মেহের আলিক এ্যাকনা ঘুতা মারি কইল আগপাকে দেকি গাড়ি বোলান নাইলে গাড়ি খালোত ফ্যালে দিমেন। ঘুতাকোনা খায়া মেহের আলী এ্যাকনা মজায় পাইল। খানেক পরে গাড়ি বরের বাড়িত পৌনছি গেইল। বরযাত্রীর ঘরোক নামে দিয়া মেহের আলি মনোত রং নাগেয়া বড়িত আসিল। মেহের আলীর আইতোত বিছনাত সুতি আর নিন আইসেনা। উয়ার মনটা খালি উড়ি উড়ি বিয়ার বাড়িত যাবার চায়। তয় মেহের আলী সুতি সুতি গান কয়-
কি মায়া নাগালু কইনা রে
ও কইনা ঘরোত না রয় মন........


Post a Comment

Previous Post Next Post