ঝাপসা রঙ্গের ভালোবাসা

ঝাপসা রঙ্গের ভালোবাসা 
(রংপুরের ভাষায় ছোট গল্প) 
             ➤ মিজানুর রহমান 
   মুই টুকি টাকি ফেসবুকোত নেকানেকি করঙ। তা সগায় মোর গল্প কবিতাগুলা ক্যানে যে পড়ে তা মুই নিজেই জানোঙ না। পাগলের মতোন কি আদেক আবোল তাবোল নেকোঙ,অগ্লায় নাকি সগাকে ভাল নাগে। ম্যালাঝনে কমেন্টও করে, ফির মেসেঞ্জারোতো মেসেজ দেয়। হঠাৎ মঠাৎ কমেন্টের একনা করি উত্তর দ্যাও। মেসেঞ্জারোত তেমন একনা ঢোকঙ না তেমন রিপ্লাই-ও দ্যাঙ না। মেসেঞ্জারোত শ শ মেসেজ ওপেনে করঙনা অতোয় জমা হয়া থাকে। একদিন ঘটিল এক মাহেল ঘটনা। তিন-চারদিন পর মোবাইলোত এমবি ভরেয়া নেট লাইন-কোনা দেওয়ার পর শুরু হয়া গেইল- টুং টুং টুং টুং টুং টুং টুং টুং। খালি মেসেজ আসতে আছে আসতে আছে আসতে আছে। ৪-৫ মিনিট খালি মেসেজে আসিল একেই ম্যাসেঞ্জার থাকি ।  একেই মেসেঞ্জার থাকি এতুলা মেসেজ তা মেসেঞ্জার  অপেন করনুঙ। ওপেন করি দেকোঙ- আইডির ছবিটাত সুন্দরি একনা ২০-২৫ বছরের বেটিছওয়া মানুষ একনা ছাওয়া কলাত নিয়া বসি আছে। আইডি টার নাম ফমে নাই।  মেসেজগুলা গণি দেকোঙ ১২০ কোনা মেসেজ। কয়দিন থাকি বা জমা হইছে। মেসেজে লেখা- ভাইয়া আমি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছি প্লিজ একসেপ্ট করুন। প্লিজ, প্লিজ, হাই, হ্যালো, আরো ম্যালা কিছু। শ্যাষের ৩০টা মেসেজোত প্রত্তেকটাত নেকছে- আপনার এত ভাব কিসের।
           ভাবি দেখনুঙ মোর তো ভাব নাই। মুই কিন্তু বেটিছওয়া মানুষের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট কনফার্ম করোঙ না, তাও ক্যানেবা মায়া নাগি গেইল। এতোগুলা মেসেজ; তা ফেসবুক ব্যাকরেয়া ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট কনফার্ম করি দিনুঙ। তারপর থাকি অয় ফেসবুকোত কমেন্ট না দিলেও, শুরু করি দেইল প্রতিদিন মেসেঞ্জারোত - হাই ভাইয়া, কেমন আছেন, শুভ সকাল, শুভ রাত্রি, আপনার লেখা অনেক ভালো লাগে, আরো ম্যালা ম্যালা কথা। প্রত্তম দুইদিন মুই কোন রিপ্লাই দেঙ নাই। দুই দিন বাদে চিন্তা করনুঙ- আবার যদি নেকে- আপনার এত ভাব কিসের?  নানান চিন্তা ভাবনা করি  মুইও নেকির ধরনুং.......
মুইঃ- আপনি কে?
অয়ঃ- কেন? 
মুইঃ- আগে পরিচয় জানা দরকার। 
অয়ঃ- পরিচয় না দিলে...
মুইঃ- এখানেই ইতি। 
অয়ঃ- আপনাকে তো আমি চিনি, মিঠাপুকুর থানায় ছিলেন। 
মুইঃ- আপনার ঠিকানা 
অয়ঃ- বলা যাবে না।
মুই আর কিছু নেকনু না মোবাইলের নেট-লাইন বন্ধ করি দিয়া পকেটোত ঢুকি থুনুঙ। পরেরদিন মোবাইল খুলি দেকোঙ কুড়িটা মেসেজ দিছে। নেকছে সরি ভাইয়া,সরি ভাইয়া, ভুল হয়ে গেছে, আর ২০ নাম্বার মেসেজটাত ঠিকানা দিছে। নাম- আরশি গ্রাম- আরশিনগর থানা- মিঠাপুকুর জেলা- রংপুর। মুই চিন্তা করনুঙ মিঠাপুকুরোত চাকরি করচুঙ যখন কবার পায় তখন মিঠাপুকুরোতে বাড়ি হইবে  কিন্তু মিঠাপুকুরোত তো আরশিনগর নামে কোন গ্রাম নাই। তাইলে অয় মিছা কথা নেকছে। তা মুই রিপ্লাই দিনুঙ- ভকোবাজ। পরে অয় মোক আসল নাম ঠিকানা দিছিলো, কিন্তু মুই অকে আরশিনগরের আরশি কয়ায় ডাকাচুনুঙ। বাড়ি কোনা মিঠাপুকুরোতে। বাপের বাড়ি রংপুর শহরোত, ওমার একনা দুই বছরের ছাওয়া। স্বামী চাকরি করে, থাকে দূরোত। অয় ছেলেক ধরি বেশি দিনগুলা রংপুর বাপের বাড়িত পার করে। পরিচয় হওয়ার পর দুইঝনের ভালনাগা গুলা মিলি গেইল। দুইঝনের মনের মিল হওয়ায় হয়া উঠিল ঝাপসা রঙ্গের বন্ধুত্ব। মানে কাও কাকো কোনদিন দেখিও নাই কথাও কইনাই খালি মেসেঞ্জারোতে যা চেনাজানা। আস্তে আস্তে ঝাপসা রঙ্গের বন্ধুত্ব- ঝাপসা রঙ্গের ভালবাসায় গৈর দেইল। তারপর শুরু হইল পুড়াদমে দুইঝনের মধ্যে মেসেঞ্জারোত টোকাটুকি...........
দুইঝন দুইঝনোক কাও মোবাইল নাম্বার দেই ও নাই- নেই ও নাই তারপরও অনলাইন অডিও কলে দু-চারদিন কথাও হইচে।  তয় অডিও কলোত আর দুইঝনের ফেসবুক-মেসেঞ্জারোত নেখানেখিত কোন নোংরা ভাব আছিল না, আছিলো না কোন ছলচাতুরী ছলনা। এমন করি ছয় মাস মেসেঞ্জারোত ঠোকাঠুকি করার পর হঠাৎ একদিন দুইঝনের ভালোবাসা ভালোলাগা গুলা ঝাপসা হয়া ভালোলাগার ইতি ঘটি গেইল। মেসেঞ্জারোত শ্যাষা কথাটা নেকি দিনুঙ goodbye.  রচিত হৈল মোর কবিতা....... 
স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখাই ,
নিশি রাতে জেগে একাই 
টোকাটুকি, ফেসবুক মেসেঞ্জার .
ক্ষণিক পরেই ভেবে দেখি 
আহা! আমি করছি একি,
ধোকা-ধুকি, জগতে কেবা-কার?
           --মিজানুর রহমান


Post a Comment

Previous Post Next Post