দীনবন্ধু — রাজবংশী কামতাপুরী ছোট গপ্পো।

দীনবন্ধু বয়স প্রায় ৭০/৭৫। এলাও মানষির বাড়িত কাজ করে।চেহেরা দেখিলে সগারে মনত মায়া নাগে। রৌদে ঝরিত খাটিয়া জং ধরা লোহার ঢক হৈচে দেহার রঙ। মাথার চুলিলা না হয় দেশী না হয় বিদেশী। গোরখান সাদা আগাল খান নালছাটা বিনা তেল যত্নে। কয় হাত দূরত খাড়া হৈলে চকু দুইটা দেখা যায় না। খালত সোন্দাইচে খালি সাদা রঙের ভুরু দুইটা দেখা যায় উপরাত। তাও এই দেহা ধরি একদিন কাজ না করলে ভাত নাই উয়ার। বাড়িত আছে উয়ার বুড়ি মাইয়া কোনোমতে চাইট্টা নান্দি দেয়। এই অবস্হার জন্যে কাকো দোষ দেয় না দীনবন্ধু। বিছিনাত দেহা গতেয়া খালি কয় সব নিয়তি। ভাই বেটা কাকো দোষে না। সব ছিল দীনবন্ধুর সারে তিন বিঘা মাটি, হালের গরু বাশ বাড়ি ডিগি সব।এলাও যেটা আছে দেখা যায় না,কিন্তু হিসাব করলে যেটা আছে তার থাকি অনেক বেশী। দীনবন্ধুর বেটা নরোত্তম। কি দেয় নাই দীনবন্ধু উয়াক দেহার রক্ত জমি জাগা সব কিছু।নরোত্তম লেখা পড়ায় খুব ভাল ছিল,আর দীনবন্ধু চেষ্টার কোনো বাকি রাখে নাই। জমি জাগা বন্ধক থুইয়া উয়াক লেখা পড়া শিখাইল। শিলিগুড়ি যায়া থাকা পড়া সারে তিন বিঘা জমির হালুয়া চাষার পক্ষে বড় কঠিন। দীনবন্ধু কোনো দিন বেটাক সেটা বুঝির দেয় নাই। বই পড়া শ্যাষ করিয়া নরোত্তম দুই তিন বছর বাড়িত বসা।তাও চেংড়াক কোনো কাজ করির দেয় নাই ক্ষেতে খামারে।একদিন চাকরির পরীক্ষা দিল্ নরোত্তম, হাই স্কুলের মাষ্টার। ঘুষ মেলা টাকা নাগে।না দিলে চাকরি নাই। দীনবন্ধু বাড়ি ভিটা ছাড়ি যা ছিল সব বেচে দিল। কোনো আগ পাছ ভাবিল না,বাপ তো যতয় হৌক। খালি বেটার চাকরি আর ভবিষ্যত দেখিল।চাকরি পায়া নরোত্তম চলি গেইল অনেক দূর হুগলী জেলা। দীনবন্ধু হয়তো জাগার নামে কোনো দিন শোনে নাই।দুইটা বছর ভালে গেইল তারপরে নরোত্তম বদলি গেইলেক। তারপর সাগাই মারফত একদিন দীনবন্ধুক খবর দিলেক , উয়ায় হুগলীত যেটে রয় ওটেকার এক চেংড়িক বিয়াও করের চায়। দীনবন্ধুর মেলা স্বপ্ন ছিল কিন্তু- - - -। দীনবন্ধু ভাবিল্ বেটা যেটা পাইলে খুশী হয় সেইটায় এতদিন দিয়া আসচে। আর এলা এই বিয়াও আটকেয়া বেটাক কষ্ট দিবার চায় না। রাজি হৈল। নরোত্তম বিয়াও করিল্ হুগলীতে। বামুন নাপিত আচার বিচার সব ছাড়া কোর্টত খালি কলমের গুতাতে বিয়াও। কি যে দিন কাল আসিল্। দিন যায় মাস যায় দীনবন্ধু বেটার বৌ দেখির চায়!
নরোত্তমের সময় নাই নিজের স্কুল মাইয়ার স্কুল টিউশনি। এলা দুই তিন মাস থাকি বাড়িত পাইসা কড়িও দেয় না।একদিন দীনবন্ধুর মোবাইলত ফোন করি কয় -"বাবা এলা খানিক পাইসার ঝামেলা আছে মোর,বাড়ি ভাড়া খাওয়া দাওয়া আর এত্তি এখান প্লট নিছুঙ তার লোন। তায় তুই খানিক কোনো মতে চলাও-"
-"আরে তোর মাওয়ের শরীলটা যে বেশী ভাল্ না হয় দাক্তার দেখের নাগিল হয় খানিক-"
-"ওলা বয়স হৈলে খানিক হবে টেনশন করেন না"
এই কয়া ফোন কাটি দিল্। দীনবন্ধু ফোন হাতত নিয়া ঘরের চালার ভিতি চায়া রৈল।দীনবন্ধুর ভিতিরাখান এলা বোঝা কঠিন।
রাজবংশী গপ্পো “দীনবন্ধু”। স্কেচ আর্টঃ সুজন রায়।

নেখাইয়াঃ উমা শঙ্কর রায়।
14/04/18, রাজস্হান।

Post a Comment

Previous Post Next Post