মুক্তিযুদ্ধ নিয়া কামতা-রাজবংশী গপ্পোঃ “ক্যা বাহে ব্যাজার হলেন?”

জহর মুন্সী হামার গেরামের মাতা, সগাই কয়, জহর মুন্সি বিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল,মুক্তি যুদ্দের নানান ঘটনা নিজ চোকে দেকচে । প্রতি শুক্রবারে গাঁওয়ের চেংড়াগুলা, হুজ্জত আলীর খুলির টংখানোত বসি জহর মুন্সির গপ্পো শোনে। গাঁয়ের তামান চেংড়া গুলা গেল শুক্রবারে হুজ্জত আলীর খুলিত পালা হয় জহর মুন্সির গপ্পো শুনবার জন্যে ।  চেংড়াগুলা বায়না ধরে পাকবাহিনীর গপ্পো কও, মুন্সি চেংরাগুলাক কয়, বাহে ঐ সময় একেকটা দিন গেচে হামার জীবনটা হাতোত নিয়া। সারাদিন যদিল এনা ভাল যায়, আত হলে গুলির শব্দ, গুড়–ম..গুড়–ম..ঠা ঠা, গুলীর শব্দ শুনিয়া আত কাটে। ,মিলিটারী ক্যাম্পোত মানুষ ধরি আনি মারি ফ্যালায় । সারারাতে ভাবি কালকার দিন আর আতটা কেমন করি যাবে? কুড়ানু কয়,  বাহে চাজী, স্বাধীনতার যুদ্ধের সোমে কি খুব আকাল পড়চিল বাহে ?মুন্সি কয়, নাঃ আকাল কিসের? বাহে এমন দিন গেচে, বাজারের চাউল ,আটা হাওয়াজ পিয়াজ পড়ি থাকচে, কেনার গাহাক নাই। জীবনটা হাতোত নিয়া কেটা আসে বাজারোত? আস্তায় আস্তায় পাকবাহিনী-আজাগর গাড়ী নিয়া ঘোরাঘুরি করে। যাকে সন্দেহ হয় ধরে, চেকিন করে। গাও পাও হাস্তে দেখে। কুড়ানু কয়, বাহে শুনচুনু মানষোক বলে ন্যাংটা করিয়াও দেকচে? মুন্সী কয়, কতা ঠিক বাহে। ন্যাংটা করিয়া দেকচে মোচলমানী আছে কিনা? মোচলমান না হেন্দু ?কুড়ানু মুন্সিক কয়, শালারা এতই বেজম্মা যে মানষোক ন্যাংটা করি দেকচে? মুন্সি কয় বাহে বেজম্মাা কি খালি ওরা?  ঐ সময় আজাগার আর পাকবাহিনীর দালালরা কি কম করচে? মুক্তিবাহিনী কয়া কত মায়ের বুক খালি করচে, কত মাও বোনের ইজ্জত লুট করচে। হামার চোকের সামনে সেনপাড়ার বেটিছল গুলাক কি না করলো ? কুড়ানু কয়, কি করলো?মুন্সি কয়, বাহে এক নাইনে দাড় করেয়া তামান সোনাদানা গাও হাতে খুলি নিচে। এমনকি  চেংড়ি বেটিছলের ইজ্জত মারিয়া  পার করি দিচে ব্রহ্মপুত্র নদী, পাটেদিচে মাইনক্যার চর ইপুজি ক্যাম্পোত। আরে বাহে, মুই আর ভেকুয়া তয়জল ঐ সমে তরিতরকারীর ব্যবসা কচ্চিনো । একদিন তয়জল নিচিল ২০টা পানি কুমড়া, আর মুই আটিয়া কলা। হামরা পিয়ারা পুর হাতে হাটিয়া টাউনোত ঢুকি, পুরান বাজারোত যাই বেচা কেনা করি বাড়ীত যাই। তকন টেলিফোন- ওয়ারলেস অফিসটা দখল করি পাকবাহিনী ক্যাম্প বসাচে  এইটিআই ও দখল করি মেলিটারী ক্যাম্প কচ্চে।  হামরা দুইজনে ক্যাম্পের সমন দিয়া যাওয়ার সমে  গেটোত দেখা পালে পাক ফউজ গুলাক সালাম দেই। ভেকুয়া তপজ্জল কয়,বাহে পত্তি হামার ঘরোক গেটোত আটকায়, কলা নেয়, দামদেয়, কলা খায়া কয় হট যাও। হামরাও বাজারোত যাই, বেচাা কেনা করি বাড়ী ফিরি যাই। হুজ্জত আলীর টংগখান ভরি যায়, চেংড়া পেংড়া দিয়া। সগলে কয়, বাহে জহরদাদা, পাকবাহিনী বলে ঘাটায় পতে যাকে তাকে গুলি কচ্চে বাহে, তোমরা ভয় করেন নাই ? ভেকুয়া তপজ্জল কয়, দুর হে, হামরা হনো খুচরা ব্যাপারী ? ক্যা বাহে মুন্সী মনে নাই, তোক আর মোক একদিন ক্যাম্পোত নিয়া যায়া উটি আর গোস্ত খিলাচে, মনে নাই? জহর মুন্সী কয়, হবাহে খাচুনুতো ? কুড়ানু কয় সেদিন তারপরে কি হচিল কও। জহর মুন্সি কয়, বাহে মোক আর তপজ্জলক সেদিন এটিআই গেটত আটকে দিলো। তপজ্জলের ভারোত বড় বড় পানি কুমড়া দেকিয়া পাকবাহিনীটা কয়, হে আদমী ইয়ে কিয়া চিজ? তপজ্জল কয়, মুইতো বেহারী কতা বোজমনা , জহর মুন্সী মাদেচ্চাত নেকা পড়া কচ্চে ওমার ঘরে আও-বাও এনাা বোজে । মু›সী কয়, হুজুর বহুত আচ্চা চিজ হোতা হায়, নাম  হায় কুমড়া, পানি কুমড়া। শুনিয়া মেলিটারীটা কয়, এতনা বড়কা? কিতনা কিমত? মুন্সী  আমতা আমতা করে। তয়জল খালি ফ্যাল ফ্যাল করি দ্যাকে। মিলিটারীটা কয়, হেই বোলতা কিউ নেহি, কিমত কিতনা? মুন্সি ভয়ে দুইহাত তোলা করে । পাকবাহিনীটা কিযে বোজে, কয় ও একশ রুপিয়া? এই কতা কয়া পকেটথাকি একশ টেকা বাই করি দেয় মুন্সির হাতোত। কয়, হিয়া রোকো। এই কতা কয়া দৌড়ি যায়া একটা চাকু নিয়া আসি একটা কুমড়া কাটিয়া ফালা করে। মুন্সি কিছু কওয়ার আগে কুমড়ার ফালাটা ঘচঘচ করি খাওয়া শুরু করে। মেলিটারীটার মুকটা কাচু মাচু হয়া যায়, কয়, কিয়া পানি কুহুমড়া হায়, পানি কি তারা লাগতা হায়। এই কতা কয় আর ঘচঘচ করি খায়। মুন্সিকয়, হামলোক যাই সার?মিলিটারীটা কয় চলে যাও বহুত আচ্ছা?ভেকুয়া তপজ্জল মুন্সিক কয় বাহে পানি কুমড়াটার এতই স্বাদ ? মুন্সির কতা শুনিয়া হোহো করি হাসি ওটে সগলে?মুন্সী কয়,  সময়টা মোর মনে নাই। এক দিন মেলা আতে গুলির শব্দে হামার ঘরে ঘুম নাই। পরের দিন শুননো বালাসী ঘাটের সুইস গেটে পাকবাহিনীর সাতে মুক্তি সেনার খুব যুদ্ধ হচে সারাআাত। পরের দিন গাইবান্ধা টাউনোত আর কেউ যাবার চায়না। কি করম বাড়ীত চাউল নাই। মজর করো বাহে হুজ্জতচাজী হাটো এশন কাটের চাউল তুলি আনি। মুই কনু বাহে , কাল আতোত যে গোলাগুলি হচে ? টাউনোত আজা কড়াকড়ি চেকিন হবানাগচে। মজর কয়, হামরা তো দুষী নই বাহে, হামার পেটত নাই ভাত ? যদি ধরে এশন কার্ড দেকামো । চাউল তুলবার যাওয়ার কতা কমো। মজরের কতা শুনিয়া মনে করনু মজর ঠিকে কচে। দুইজনে সকালের টেনোত চরি নামনো গাইবান্ধা রেল ষ্টেশনে । নামতেই দেকি একপালা পাক মেলিটারী ষ্টেশনে, কেউ বসি আচে কেউ শুতি আচে। সগলেরে কাছে অস্ত্র। মজর মোক কয় বাহে কোনবা মুসিবতোত পড়মো বাহে ? দুইজনে ষ্টেশনের পুবের গেট দিয়া বাড়েয়া বাটা কোম্পানীর কাজীর রেশনের দোকানোত পৌছি হামরা। দোকানের কম্মচারীটা কয়, বাহে তোরা কেমন করি আলেন? মজর কয়, ক্যা? মানুষটা কয়, আজা পাকবাহিনী গোটাল টাউনে পাহাড়া বসাচে। ষ্টেশন, সিনেমা হল তামানবাড়ী সাচ করতিচে। খালী কয়, মুক্তি কাহা হায়। হামার ঘরোক  কয়, তোমরা চাউল নিয়া দুপুরে টেন ধরি বাড়ীত যাও। এই কতা কয়া দোকান বন্দ করা শুরু করলো মানুষটা। মজর কয়, ক্যা বাহে? হাটি যাবু? না, টেনোত যাবু? দুই জনে ভয়ে ভয়ে স্টেশনোত যায়া দেকি দক্ষিন মুকে যাওয়ার একনা টেন দাড়ে আচে। মজরোক কনু, হাটেক টেনোত চড়ি। মজর কয় ছাড়–ক আগে। মুই কনু, ছাড়ার সমে চড়লে সন্দেহ করবেহে? শ্যাষে দুইজনে টেনত চরি বসনো। কিচুখন পড়ে টেনের কামরা গুলা চেক শুরু করি দিল। টেনের সগলে খালি কয়, আল্লাহ, বাচাও আল¬াহ। শ্যাষে হামার কামরাত উঠলো পাকবাহিনী। কামরাত ঢুকিয়া কয়, জুট মাত বলো। গোলি কারদেগা। মজর কয় বাহে মোর গাও কাপতিচে হুজ্জতচা। ডানপাকে দ্যাখোম বিরামের ভিটার অব্দুল কুদ্দুছ। হাটুয়া দুইটা জোর করি ঠাসি ধরে আর কয়, মোক বাচান খোদা,।কুদ্দুছ মোক দেকিয়া কয়, বাহে হুজ্জতচা, তুইযো আচ্চিস? হেন সোমে মাতাত ঠকাস করি   বাড়ি দিয়া একটা পাক বাহিনী কয়, আদমী- তুমহারা ডান্ডি কাহাঁ, শুনিয়া মজর কয় কিবেন কয় বাবারে? সেই কতা শুনিয়া পাকবাহিনীর সাতে থাকা একনা খাকি পোষাকপড়া মানুষ বাংলা দিয়া কয়, ক্যারে তোমার আইডেন্টি কার্ট আছে? শুনিয়া মজর কয় আচে। মজর চাউলতোলা এশন কার্ড দুটা পাক বাহিনীক  দেখায়। পাকবাহিনীটা কয়, ঠিক হ্যায়। এমন সোমে গাড়ীটা ছাড়িদেয়। গাড়ী হাতে নামি যায় পাকবাহিনী কুড়ানু কয়, বাহে চাজী পানি কুমড়া বেচলেন ভাল ফলমুল কয়া, আর এশন কার্ট দেথালেন ডান্টি কাট কয়া।বাহে মুঁই বাচার জন্যে করচুনু বাহে, আর এখন ভুয়া মুক্তি যোদ্ধার কার্ট দ্যাখেয়া যে, কত অকাম করতিচে, ফয়দা লুটতিচে, সেগলা দেখার কেউ নাই? সগলে কয়, ঠিকে কচেন বাহে। ক্যা বাহে কেউ কি ব্যাজার হলেন?

নেখাইয়াঃ
সৈয়দ নুরুল আলম জাহাঙ্গীর।
বাংলাদেশ। 

Post a Comment

Previous Post Next Post